আলোচনাসভার শেষে মনীষা পৈলান। নিজস্ব চিত্র
বিচারক ও বিচারপতিদের উপস্থিতিতেই অ্যাসিড আক্রমণ সংক্রান্ত মামলায় বিচারে দেরি হওয়ার অভিযোগ তুললেন এক অ্যাসিড আক্রান্ত তরুণী। মনীষা পৈলান নামে ওই তরুণীর অভিযোগ, খোলা বাজারে রমরমিয়ে অ্যাসিড বিক্রি সত্ত্বেও প্রশাসন নির্বিকার।
গত সপ্তাহের রবিবার, ৮ মার্চ ছিল ছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সেই উপলক্ষে শনিবার আলিপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সদর দফতরে এক আলোচনাসভা হয়। সেখানে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ও আলিপুর আদালতের বিচারকেরা ছাড়াও হাজির ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথনও। আলোচনাসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন মনীষা। পাঁচ বছর আগে তিনি অ্যাসিড হামলার শিকার হন।
নিজের বক্তব্যে মনীষা জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খোলা বাজারে সর্বত্র রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে অ্যাসিড। মাত্র ৩০ টাকায় অ্যাসিডের বোতল এখন সহজলভ্য। তিনি বলেন, ‘‘এক সময়ে আক্রোশের বশে মহিলাদের গায়ে অ্যাসিড ছুড়ে তাঁদের জখম করা হত। এখন স্ত্রীর গায়ে, এমনকি আক্রোশের বশে নিকটাত্মীয়কেও অ্যাসিড ছোড়া হচ্ছে। তা সত্ত্বেও অ্যাসিড বিক্রি ঠেকাতে কোনও কঠোর আইন নেই। তিরিশ টাকার এক বোতল অ্যাসিড একটি জীবন কার্যত শেষ করে দিচ্ছে। পরিস্থিতির ভয়বহতা নজরে আসার পরেও বিচার ব্যবস্থা ও প্রশাসন নির্বিকার।’’ খোলা বাজারে অ্যাসিড বিক্রি বন্ধ করতে আলোচনাসভায় উপস্থিত বিচারপতি ও বিচারকদের কাছে ওই নির্যাতিতা আবেদন করেন কঠোর নির্দেশিকা জারি করতে।
অ্যাসিড আক্রমণের মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হচ্ছে বলেও আলোচনাসভায় অভিযোগ করেন মনীষা। তিনি জানান, ২০১৫ সালে তাঁর উপরে অ্যাসিড আক্রমণ হয়। ঘটনার কয়েক দিন পরে অভিযুক্তেরা ধরা পড়েছিল। পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘তার পরে প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও ওই মামলার বিচার প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। এই দীর্ঘসূত্রিতা নির্যাতিতাদের উপরে মানসিক চাপ তৈরি করে।’’
তিনি জানান, বিচারে অভিযুক্তের শাস্তির পাশাপাশি নির্যাতিতাও ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকেন। তাঁর কথায়, ‘‘দীর্ঘদিন চিকিৎসা করাতে বিস্তর খরচ হয়। চিকিৎসার পরেও অধিকাংশ নির্যাতিতা পুরোপুরি বা আংশিক প্রতিবন্ধী হয়ে যান। ফলে তাঁদের কাছে ক্ষতিপূরণের আর্থিক অনুদান অনেকটাই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। তাই দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার প্রয়োজন।’’
স্নাতোকোত্তর পাঠরতা অবস্থায় কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে অ্যাসিড আক্রান্ত হয়েছিলেন ওই তরুণী। কয়েক বছরের লাগাতার চিকিৎসার পরে খানিকটা সুস্থ হলেও একটি চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মুখের অধিকাংশ পুড়ে গিয়েছে। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘কয়েক জন প্রথমে সহানুভুতি দেখিয়ে আমাকে ছোট একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার শারীরিক সামর্থ্য এখন অনেকটাই কম। সব কাজ করে উঠতে পারি না। মাসখানেক পরে ধীরে ধীরে কৌশলে কাজের চাপ এমন ভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হল, যাতে আমি চাকরি ছাড়তে বাধ্য হই। আমার মতো সব অ্যাসিড আক্রান্তেরই একই অবস্থা।’’
অ্যাসিড আক্রান্তদের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার প্রসঙ্গটিও তুলে ধরেন মনীষা। তাঁর কথায়, ‘‘অ্যাসিড আক্রান্তদের চেহারায় নানা বিকৃতির কারণে তাঁদের কাজকর্ম জোটে না। সে ক্ষেত্রে তাঁদের সাহায্যে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘সভায় সমাজের বিশিষ্ট মানুষেরা উপস্থিত ছিলেন। ওই নির্যাতিতার বক্তব্য অবশ্যই বিবেচনা করা হবে।’’