Bidhannagar Municipality

‘ইন্ধন’ দেন পুরপ্রতিনিধি, তাই কি চার দিন পরেও অধরা নিগ্রহকারীরা

সন্দেশখালি-কাণ্ডে গোপন ডেরা থেকে আগাম জামিনের আবেদন করেছেন শেখ শাহজাহান। যে কারণে অভিযোগ উঠেছে, শাসকদলের নেতা বলেই পুলিশ তাঁকে ধরতে চাইছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:২৩
Share:

(বাঁ দিকে) নয়াপট্টির ওই ক্লাব ভাঙতে গেলে এই ভাবেই প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশ। উত্তপ্ত সন্দেশখালি (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

শুধু ধাক্কা দিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টাই নয়, ক্লাব ভাঙার কাজে বাধা দিয়ে পুলিশের গায়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছিল কেরোসিনও। গত শুক্রবার বিধাননগরের নয়াপট্টিতে বেআইনি ক্লাব ভাঙতে গিয়ে পুরসভার আধিকারিকদের পাশাপাশি পুলিশকেও এই ভাবে নিগৃহীত হতে হয়। তার পরে চার দিন কেটে গিয়েছে। অথচ, গ্রেফতার করা তো দূর, কাউকে আটক পর্যন্ত করতে পারেনি পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা বিধাননগর পুরসভার পুরপ্রতিনিধির অনুগামী বলেই কি তাঁদের নাগাল পেতে চাইছে না পুলিশ? উঠছে এমনই প্রশ্ন।

Advertisement

সন্দেশখালি-কাণ্ডে গোপন ডেরা থেকে আগাম জামিনের আবেদন করেছেন শেখ শাহজাহান। যে কারণে অভিযোগ উঠেছে, শাসকদলের নেতা বলেই পুলিশ তাঁকে ধরতে চাইছে না। নয়াপট্টির বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ঠিক একই কারণে কি ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করা সত্ত্বেও পুলিশ ও পুর আধিকারিকদের নিগ্রহকারীদের বিরুদ্ধে ‘ধীরে চলো’ নীতি নিচ্ছে পুলিশ?

বিধাননগর কমিশনারেটের অবশ্য বক্তব্য, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা যখন হয়েছে, অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কত দিনে, তা স্পষ্ট করা হয়নি। বিধাননগরের নগরপাল গৌরব শর্মা শুধু বলেছেন, ‘‘একটি মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’ নিগ্রহের পাশাপাশি আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে শুক্রবার ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিল বিধাননগর পুরসভা।

Advertisement

কলকাতা হাই কোর্ট ক্লাবটি ভাঙার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও প্রশাসন তা বাস্তবায়িত না করায় স্থানীয় একটি পরিবার আদালত অবমাননার মামলা করেছে। পরিবারটির অভিযোগ, তাদের জমিতেই জোর করে ওই ক্লাবটি তৈরি করা হয়। ক্লাব ভাঙা হয়েছে কি না, আজ, বৃহস্পতিবার সেই মর্মে পুলিশ ও পুরসভার কাছে রিপোর্ট চেয়েছে উচ্চ আদালত। সূত্রের খবর, আদালত কী নির্দেশ দেয়, আপাতত পুলিশ ও পুরসভা—উভয় পক্ষই সেই দিকে তাকিয়ে।

বিধাননগর পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াপট্টিতে রয়েছে আদিত্য স্মৃতি সঙ্ঘ নামে ওই ক্লাবটি। সেটির সভাপতি ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি জয়দেব নস্কর। যিনি বিধাননগর পুরসভার এক অতি প্রভাবশালী নেতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। একটি মামলার ভিত্তিতে হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তের পরে ক্লাবটি বেআইনি ঘোষণা করেছিল পুরসভা। সেটি ভাঙা হবে বলে জয়দেব ও তাঁর অনুগামীদের জানিয়েও দেওয়া হয়। পরবর্তী কালে পুরসভার সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জয়দেব হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও মামলায় হেরে যান।

এর পরে গত ৯ জানুয়ারি এবং গত শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশের সাহায্য নিয়ে ক্লাব ভাঙতে গিয়েও সমর্থকদের বাধায় ফিরে আসতে হয় পুর আধিকারিকদের। গত শুক্রবারের ঘটনায় বিক্ষোভকারীরা পুলিশ ও পুরসভার আধিকারিকদের নিগ্রহ করার পাশাপাশি তাঁদের গায়ে কেরোসিন ছোড়েন বলেও অভিযোগ। ক্লাব চত্বরে বলবৎ থাকা ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন এবং সরকারি আধিকারিকদের নিগ্রহে অভিযুক্ত বিক্ষোভকারীদের ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ কারও কেশাগ্র ছুঁতে পারেনি।

যে কারণে প্রশ্ন উঠেছে, এক জন সাধারণ মানুষ এমন ধরনের কাজ করলে কি এত দিন প্রশাসনের হাত থেকে রেহাই পেতেন? ক্লাবের সমর্থনে যাঁরা দু’দিন ধরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তাঁরা পুরপ্রতিনিধির অনুগামী এবং ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের লোকজন বলেই দাবি নয়াপট্টির বাসিন্দাদের।

অতীত বলছে, নিগ্রহ আগেও হজম করেছে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। বছর দেড়েক আগে বেআইনি পার্কিংয়ে গাড়ি রাখার অভিযোগে লেক টাউন ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশ একটি গাড়িতে কাঁটা লাগিয়ে দিয়েছিল। পরে গাড়ির মালিক ও তাঁর লোকজন এসে ট্র্যাফিক গার্ডে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। নিগ্রহ করা হয় ট্র্যাফিক ইনস্পেক্টরকে। ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীরা মামলা দায়ের করতে চাইলে জয়দেবের মাথায় হাত রাখা সেই প্রভাবশালী নেতাই সে যাত্রায় গাড়ির মালিক ও তাঁর দলবলকে রেহাই পাইয়ে দেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement