ঘটনার পর কেটে গিয়েছে একদিন। আলিপুর আদালত চত্বরে পুলিশকর্মীকে মারধরের ঘটনায় কাউকেই গ্রেফতার করতে পারল না তদন্তকারীরা। পুলিশের দাবি, আলিপুর পুলিশ কোর্টের ইন্সপেক্টরের ঘরের সামনে ( জেনারেল রের্কডস বা জি আর শাখার সামনে) দুই পুলিশ কর্মীকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত তৃমমূল নেতা এবং তাঁর ছেলের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। শুক্রবার জিজ্ঞাসাবাদ করে হয়েছে বেশ কয়েকজন প্রতক্ষ্যদর্শীকে। তাঁরা পুরো ঘটনার জন্য অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা বিপ্লব মিত্র এবং তাঁর ছেলে অরুণ মিত্রকেই দায়ি করেছেন। যদিও শুক্রবার বিকেলে ফোনে বিপ্লব মিত্র দাবি করেছেন, তাঁর সঙ্গে পুলিশ কোনও কথা বলে নি। তিনি এলাকাতেই রয়েছেন। উল্টে তাঁর অভিযোগ,‘‘ পুলিশের একাংশ সিপিএমের। তাঁরাই আমাকে ফাঁসাতে চাইছে।’’
তদন্তকারীদের একটি অংশ পুলিশকর্মীদের মারধরের ঘটনায় তৃণমূল নেতা এবং তাঁর ছেলেকে গ্রেফতারের আশ্বাস দিলেও তা মানতে নারাজ পুলিশের নিচুতলার কর্মীরা। তাঁর বলছেন, শাসক দলের নেতা-কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার পরে ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে থাকাটাই এখন লালবাজারের রীতি। এ দিন আলিপুর আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘গত ১৪ নভেম্বর আলিপুরের একটি সরকারি জমিতে পাঁচিল দেওয়াকে কেন্দ্র করে থানায় হামলা চালানো হয়েছিল। সেই ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহা-সহ মূল অভিযুক্তদের পুলিশ গ্রেফতার করেনি। পুরভোটের আগে বিজেপির সভায় রূপা গঙ্গোপাধ্যায় আক্রান্ত হন। তৎকালীন আলিপুর থানার ওসি-ও নিগৃহীত হন। সেই ঘটনাতেও প্রতাপবাবুর নাম জড়ালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি।’’
ওই পুলিশকর্মীর শুধু নন। এদিন ধর্মতলায় ডিউটি করতে করতে এক পুলিসকর্মী অভিযোগ করলেন,মে মাসে এক ভবঘুরে মহিলাকে এনআরএস হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ চার পুলিশকর্মীকে মারদর করে।সেই ঘটনার ৫ ঘণ্টা পরে পুলিশ অভিযোগ দায়ের করলেও কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে আমরা কতটা অসহায়।’’
বৃহস্পতিবার, দুপরে স্থানীয় তৃণমূল নেতা এবং ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃমমূলের সভাপতি বিপ্লব মিত্র এবং তাঁর ছেলে অরুণ মিত্র একটি রক্তদান শিবিরের কার্ড দেওয়ার জন্য আলিপুর আদালতে যান। তাঁরা নিজেদের মোটরবাইকটি নিয়ে সোজা ধাক্কা মারেন জি আর শাখার এক পুলিশকর্মীর দেহে। ধাক্কা মেরে মূল দরজা আটকে বাইকটি দাঁর করান বাবাও ছেলে। প্রথমে বেপরোয়া ভাবে বাইক চালিয়ে আঘাত করা এবং পরে অফিসের সামনে মোটরবাইক রাখায় আপত্তি করেন জি আর শাখার পুলিশকর্মীরা। এ নিয়ে বচসা শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে। অভিযোগ, বিপ্লববাবু এবং অরুণ, দু’জনেই জি আর শাখার এক কর্মীকে মারধর করেন। হুমকিও দিতে থাকেন। এরপরে বিপ্লব মিত্র নিজের প্রভাব খাটিয়ে আলিপুর থানায় দুই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার কিছক্ষণ পরেই মোটরবাইক চেপে আলিপুর আদালতে হাজির হয় এক দল যুবক। অভিযোগ, ওই মোটরবাইক বাহিনীর সঙ্গে ছিলেন বিপ্লব এবং অরুণ। নিজেদের তৃণমূলকর্মী দাবি করে ওই যুবকেরা জি আর শাখার পুলিশকে হুমকি দিতে থাকেন। ওই দলে থাকা ওমপ্রকাশ সাউ নামে স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মী পুলিশকর্মীদের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকিও দেন।
প্রথমে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও পরে চাপে পরেই নিগৃহীত পুলিশকর্মীকে অভিযোগ দায়ের করার অনুমতি দেয় লালবাজারা। ওই অভিযোগে বিপ্লব মিত্র এবং তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারা সহ একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে।
পুলিশের একটি অংশ অভিযোগ,বিপ্লব মিত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন কিছু নয়। এর আগেও আলিপুরের একটি সরকারি কাজের টেন্ডারে অংশ নেওয়াতে এক ঠিকাদারকে শাসিয়ে ছিলেন বিপ্লব। পরে ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মিথ্যা ছিনতাইয়ের মামলা দায়ের করেন ওই নেতা বলে অভিযোগ করেছেন পুলিশের একটি অংশ।