—প্রতীকী ছবি।
লকডাউনের পর থেকে সংসারে অভাব বেড়েছে। হাল ধরতে মাঝেমধ্যেই কয়েক দিনের জন্য বেঙ্গালুরু পাড়ি দিত বছর সতেরোর কিশোর। কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করায় আবার স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য বাড়ি ফেরার পথেই ঘটল দুর্ঘটনা। যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেসের উল্টে যাওয়া কামরা থেকে প্রাণে বেঁচে ফিরলেও বাদ গেল হাত!
ভয়াবহ সেই ঘটনায় চোখের সামনে এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল স্বপ্নগুলি। সোমবার ওই কিশোরকে কৃত্রিম হাত দেওয়ার জন্য এসএসকেএম কর্তৃপক্ষকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন বলে খবর। দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর থানা এলাকার বাসিন্দা রিয়াজ আফ্রিতির বাঁ হাতের কনুইয়ের কিছুটা উপর থেকে কেটে বাদ দিতে হয়েছে। সেখানেই নকল হাত লাগানো হবে। সূত্রের খবর, অন্য দুর্ঘটনায় পা বাদ যাওয়া আরও দুই যুবককেও কৃত্রিম পা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেছেন মমতা। এ দিন ওই হাসপাতালের ট্রমা কেয়ারের ন’তলার ওয়ার্ডে ভর্তি রিয়াজকে দেখতে যান মুখ্যমন্ত্রী। ওই কিশোরের বাবা রুহুল আলম বলেন, ‘‘ভাবতেই পারছি না, মুখ্যমন্ত্রী দেখতে এলেন! ছেলেকে নকল হাত লাগিয়ে দেবেন বলেছেন। যাক, ছেলেটার এক দিকে হাত নেই, সেটা তো মনে হবে না।’’ রিয়াজকে চাকরি দেওয়ার কথাও মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন বলে জানান রুহুল।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এক জনের হাত বাদ গিয়েছে। আর এক জনের পায়ে চোট রয়েছে। সকলেই স্থিতিশীল আছেন। চিকিৎসকেরা সব রকম চেষ্টা করছেন। ভাল হয়ে যাবেন। ট্রমা কেয়ারের সব রোগীকেই দেখলাম।’’ জানা যাচ্ছে, ট্রমা কেয়ারের ন’তলায় রিয়াজ ছাড়াও ট্রেন দুর্ঘটনায় হাতের কব্জি ও গোড়ালির হাড় ভাঙা অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন হুগলির মুন্সিরহাটের বিশ্বজিৎ মালিক। ২৪ বছরের ওই যুবককেও চাকরি দেওয়ার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, ওই ওয়ার্ডে অন্য দুর্ঘটনায় আহত রোগীরাও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলার সময়েই ৩২ বছরের এক দিনমজুর ও ২৩ বছরের এক যুবকের পা বাদ যাওয়ার বিষয়টি নজরে এলে নকল পায়ের বিষয়ে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
রুহুল জানান, চণ্ডীপুর এইচবি হাইস্কুলে পড়াশোনা করত রিয়াজ। মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হতেই ছোট ভাই, নবম শ্রেণির পড়ুয়া রজব আলিকে নিয়ে বেঙ্গালুরু পাড়ি দেয় রিয়াজ। রুহুল বলেন, ‘‘একটা চায়ের দোকান ছিল। লকডাউনের পর থেকে বন্ধ। বেঙ্গালুরুতে কিছু দিনের জন্য গিয়ে দিনমজুরের কাজ করে ছেলেরা কিছু টাকা আনত। তা দিয়েই সংসার চলত।’’ তিনি আরও জানান, বেঙ্গালুরুতেই অনলাইনে মাধ্যমিকের রেজ়াল্ট জানতে পারে রিয়াজ। এর পরে বাবাকে ফোন করে সে জানায়, উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হতে বাড়ি ফিরে আসছে। রুহুল জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় মাকে ফোন করে রজব জানায়, ট্রেন উল্টে গিয়েছে। দাদার খোঁজ নেই। এর মিনিট ১৫ পরে রিয়াজের খোঁজ মেলে। ফোনে সে বলে, ‘‘আমার হাতটা পুরো ভেঙে ঝুলছে।’’
এর পরেই গাড়ি ভাড়া করে কটক পৌঁছন রুহুল। অভিযোগ, সেখানে ঠিকমতো চিকিৎসা হচ্ছিল না। তাই তিনি ওই গাড়িতেই রবিবার পিজিতে নিয়ে আসেন রিয়াজকে। তড়িঘড়ি তাঁর হাত বাদ দেওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্লাস্টিক সার্জারি করা হবে রিয়াজের। তার পরে কৃত্রিম হাতের ব্যবস্থা হবে। এ দিকে, এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, আজ, মঙ্গলবার তিনি কটক যাচ্ছেন। সেখানে এ রাজ্যের ৫৩ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মমতা আরও বলেন, ‘‘১২০টি দেহ এখনও শনাক্ত হয়নি। এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে ২০৬ জনের চিকিৎসা হয়েছে। তার মধ্যে ভিন্ রাজ্যের ১৬ জন আছেন।’’
প্রয়োজন অনুযায়ী রোগীদের আরও উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা দিতে রাজ্য সর্বদা প্রস্তুত বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ওখানে তো দু’দিনের মধ্যে সব সাফ করে দিয়েছে। শনাক্ত না হওয়া দেহগুলির মধ্যে এ রাজ্যের অনেকে আছেন।’’ মুখ্যমন্ত্রী কটক, ভুবনেশ্বর ঘুরে সময় পেলে মেদিনীপুরেও যাবেন বলও জানান। সঙ্গে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যসচিবও।