মাস্কহীন: শহরের ফুটপাতে চলছে ক্রিকেট। খেলোয়াড় থেকে দর্শক, মাস্ক নেই কারও মুখেই। বৃহস্পতিবার, সিআইটি রোডে। ছবি: সুমন বল্লভ
আক্রান্তদের সম্পর্কে যথাযথ তথ্য না পাওয়ার কারণেই করোনার সংক্রমণ আটকানো যাচ্ছে না দশ নম্বর বরোয়। এমনটাই বক্তব্য কলকাতা পুরসভার কর্তাদের।
বৃহস্পতিবার ওই বরোর সংক্রমণ-চিত্র পর্যালোচনায় একটি বৈঠক হয়। বরো অফিসে পুর আধিকারিক, কাউন্সিলর, বিভিন্ন থানার আধিকারিক-সহ একাধিক মেয়র পারিষদকে নিয়ে বৈঠক করেন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। সেই বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ, শুক্রবার থেকে দশ নম্বর বরোর চেয়ারপার্সন, পুলিশ, স্থানীয় কাউন্সিলর ও পুরসভার
আধিকারিকেরা গণ্ডিবদ্ধ তালিকায় থাকা বিভিন্ন আবাসনে গিয়ে কমিটিগুলির সঙ্গে কথা বলবেন।
এ দিনের বৈঠকে ডেপুটি মেয়রের দাবি, আবাসনগুলির বেশির ভাগ বাসিন্দাই দোকান থেকে র্যাপিড অ্যান্টিজেন কিট এনে করোনা পরীক্ষা করছেন। এ দিকে, পজ়িটিভ হলেও তাঁরা নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সেই খবর জানাচ্ছেন না বলেই দাবি তাঁর। অতীন বলেন, ‘‘দশ নম্বর বরোয় বহুতলের
অসংখ্য বাসিন্দা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আমরা খতিয়ে দেখেছি, তাঁদের অনেকেই দোকান থেকে আড়াইশো টাকার কিট কিনে বাড়িতে পরীক্ষা করে বসে থাকছেন। রিপোর্ট পজ়িটিভ এলেও তথ্য গোপন করছেন। ফলে জানা যাচ্ছে না, পুর এলাকায় কারা সংক্রমিত হচ্ছেন। এটা প্রশাসনের কাছে একটা বড় সমস্যা।’’
এই প্রসঙ্গে বাসিন্দাদের একটি অংশের অবশ্য মত, আইসিএমআর-স্বীকৃত কিট, অর্থাৎ, র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা পদ্ধতি সব দিক থেকেই সাশ্রয়ী। একই পরিবারে একাধিক
উপসর্গযুক্ত মানুষ থাকলে এক-এক জনের জন্য ন্যূনতম হাজার টাকা খরচ করে পরীক্ষা করানোর সামর্থ্য সকলের না-ই থাকতে পারে। সরকারি পরিকাঠামোয় পরীক্ষা করানোর সুযোগ নেওয়াও বিভিন্ন কারণে সকলের পক্ষে সম্ভব হয় না।
অতীনের আরও দাবি, ‘‘মানুষ যে সব বেসরকারি কেন্দ্র থেকে করোনার পরীক্ষা করাচ্ছেন, সেখান থেকে আক্রান্তদের ঠিকানা পুরসভা পাচ্ছে না। পুরসভা ওই সমস্ত পরীক্ষা কেন্দ্রে ফোন করে আক্রান্তদের ঠিকানা জানতে চাইলেও তা ঠিক মতো পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে আক্রান্তদের খুঁজে বার করতে সমস্যা হচ্ছে পুরসভার। এমনটাই জানাচ্ছেন তিনি। পুর স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকদের দাবি, পুরসভা বা সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে করোনা পরীক্ষা না করিয়ে কিটের সাহায্য নিয়ে পজ়িটিভ রিপোর্ট জানছেন অনেকেই। কিন্তু তা বিধি মেনে সরকারকে জানানো হচ্ছে না। তথ্য গোপন করার এই প্রবণতাই সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের অন্যতম কারণ বলে দাবি তাঁদের। পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের একাধিক বরোর
(৩, ৮, ১২, ১৬) বিভিন্ন আবাসনে গত কয়েক দিনে করোনা সংক্রমণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। পুরসভার আধিকারিকদের মতে, তথ্য গোপনের এই প্রবণতাই সারা শহরে সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে দেখা যাচ্ছে।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারও মানছেন, কিটের মাধ্যমে পরীক্ষা করায় সংক্রমিতদের ঠিক তথ্য প্রশাসনের কাছে পৌঁছচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘আইসিএমআর-স্বীকৃত এই পদ্ধতি ঠিক, সেটা এক জিনিস। পাশাপাশি এ-ও ঠিক যে, বহু পজ়িটিভ রোগী তাঁদের সংক্রমণের তথ্য কিটের নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে সরকারকে জানাচ্ছেন না।’’ বাসিন্দাদের একটি অংশের মতে, ‘‘কিটের মাধ্যমে পরীক্ষা এবং সেই তথ্য জানানোর প্রক্রিয়া একটু জটিল। যে কারণে পিছিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই।’’
এ বার তাই র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করার প্রবণতা ঠেকাতে কলকাতা পুরসভা প্রচারকেই হাতিয়ার করতে চাইছে। ডেপুটি মেয়র জানান, যে সমস্ত আবাসনে সংক্রমিত একাধিক, সেই ঠিকানা ধরে সংশ্লিষ্ট বরোর চেয়ারম্যান, স্থানীয় কাউন্সিলর, জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের পুর আধিকারিক ও পুলিশকর্মীরা সেখানে যাবেন। আবাসন কমিটিকে সতর্ক করা হবে। সেই সঙ্গে বাসিন্দাদের কাছে অতীন আবেদন রাখেন, বাড়িতে কিট এনে পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট পজ়িটিভ এলে সরকারি কেন্দ্রে অবশ্যই আরটি পিসিআর পরীক্ষা করাতে হবে। নয়তো
সংক্রমিতের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে সমস্যা হবে। সেই সঙ্গে পুর স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দাবি, তথ্য গোপনের এই প্রবণতায় গোষ্ঠী সংক্রমণ আরও মারাত্মক আকার নেবে। এ জন্য প্রতি ওয়ার্ডে জন সচেতনতা বাড়াতে মাইকে প্রচারে জোর দিচ্ছেন কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ।
যে সমস্ত আবাসনকে মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট জ়োন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলিতে বিধি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ আসছিলই। বৈঠকে মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট জ়োনের তালিকায় থাকা আবাসনগুলিতে পুলিশকে কঠোর হতে বলা হয়েছে। আবাসনের কমিটিগুলিকে নজরদারি বাড়াতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।