Sera Bangali

বাঙালির ছক-ভাঙা গরিমার স্পর্ধাকে কুর্নিশ

শহরের একটি পাঁচতারা হোটেলের সভাকক্ষে ‘এবিপি আনন্দ সেরা বাঙালি’ সম্মাননা সন্ধ্যা এ বার ১৮ পার করল। যা একই সঙ্গে বাঙালির অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎকেও গেঁথে রেখেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:১৪
Share:

সেরা বাঙালির মঞ্চে (বাঁ দিক থেকে) পিয়ালি বসাক, পার্থসারথি ঘোষ, শংকর, মাধবী মুখোপাধ্যায়, সুমন দে, মেঘনাদ ভট্টাচার্য, উষা উত্থুপ, শুভঙ্কর সেন, শিবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, প্রচেত গুপ্ত। নিজস্ব চিত্র

হিসেব মতো তাঁর না কি রাইটার্স বিল্ডিংসের অধীশ্বর হওয়ার কথা ছিল! সেই তিনি ৮৯ বছরের সচল, সজীব সাহিত্যিক শংকর ‘সেরার সেরা বাঙালি’ সম্মানে ভূষিত। আর এক জন ডাকসাইটে অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়। স্বয়ং সত্যজিৎ রায় ও ঋত্বিক ঘটকের মধ্যে তুমুল তর্ক হয়েছে দু’জনের কার ছবিতে সেরা অভিনয় করেছেন সেই প্রতিভাময়ী। মাধবী এ বছর ‘সেরা বাঙালি জীবনকৃতি সম্মান’ পেলেন।

Advertisement

শহরের একটি পাঁচতারা হোটেলের সভাকক্ষে ‘এবিপি আনন্দ সেরা বাঙালি’ সম্মাননা সন্ধ্যা এ বার ১৮ পার করল। যা একই সঙ্গে বাঙালির অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎকেও গেঁথে রেখেছে। অনেকেই জানেন না, মণিশঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের শংকর নামটি ইংরেজ ব্যারিস্টার বারওয়েল সাহেবের আদরের ডাক। ব্যারিস্টারের বাবু তথা মুহুরি শংকর তাঁর বড়ই স্নেহভাজন। রাইটার্সের প্রাসাদোপম হর্ম্যের নির্মাতা রিচার্ড বারওয়েলের উত্তরপুরুষ ব্যারিস্টার বারওয়েলই শংকরকে বলেন, উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি এ বাড়ি পেলে হিসেব মতো তার মালিক নাকি একদিন শংকরই হতেন। কারণ, সাহেবের তো কোনও ছেলেপুলে নেই। নানা পেশার পথ ঘুরে তাঁর সুদীর্ঘ লেখক জীবনে কম বয়সে বড় পুরস্কার পাননি শংকর। তবে এ দিন সবিনয়ে বললেন, লেগে থাকার ধৈর্যের ফসল লাভের কথা! আর এক পুরনো সেরার সেরা বাঙালি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের হাত থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন শংকর।

এত দিন ধরে পাঠককে মজিয়ে রাখার ফর্মুলা কী, এবিপি আনন্দ-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং অনুষ্ঠানের অন্যতম সঞ্চালক সুমন দে-র প্রশ্নের জবাবে শংকর পূর্বসূরিদের থেকে লব্ধ শিক্ষার কথাই বলেছেন। শিব্রাম চক্রবর্তী দেখা হলেই রাবড়িচূর্ণ খাও বলে হরলিক্স গুঁড়ো দিতেন, তাতে না কি লেখার হাত মিষ্টি হয়! আর শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় শিখিয়েছিলেন, কখনও সময় নষ্ট করবে না। বাড়ি ফিরে ডিকশনারি নিয়ে বসে যাবে। শংকরের কথায়, “আমি আজও হরিচরণ নির্ভর! আইডিয়া শুকিয়ে গেলে হরিচরণ বাঁচিয়ে দেন!”

Advertisement

মণিশঙ্কর মুখোপাধ্যায়কে (শংকর) ‘সেরার সেরা বাঙালি’ সম্মাননা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের। নিজস্ব চিত্র

মাধবী মুখোপাধ্যায়ের কথার সূত্রেও এই সন্ধ্যা বাঙালিকে টেনে নিয়ে গেল সত্যজিৎ, ঋত্বিক, মৃণাল, তপন সিংহের যুগে। ‘বাইশে শ্রাবণে’র কাস্টিং পর্বে মাধবীকে মৃণাল সেন জিজ্ঞাসা করেন, তিনি ঘর মুছতে, ঝাঁট দিতে, ঘুঁটে দিতে পারেন? শুনে হতবাক অন্যতম সঞ্চালিকা আজকের নায়িকা প্রিয়ঙ্কা সরকার। সত্যজিৎপুত্র চিত্রপরিচালক সন্দীপ রায়ের হাত থেকে পুরস্কার নিয়ে মাধবী বললেন, “যে কোনও ছবিতেই আমার চরিত্র কী, কোথায় আছি সেটাই ভাবতাম। কখনও হিট, কখনও ফ্লপ করত। তাতে আমার কীই বা করার আছে, ঋত্বিকদার কাছে শেখা কথা, উনি বলতেন আমি নই, দর্শক ফ্লপ করেছে।” তথাকথিত সাফল্য, ব্যর্থতার বাঁধাধরা ছকের বাইরে এ ভাবে ভাবতে পারত বাঙালি।

সিনেমায় মন্দার, বল্লভপুরের রূপকথা খ্যাত অনির্বাণ ভট্টাচার্য, নাটকে মেঘনাদ ভট্টাচার্য, সঙ্গীতে উষা উত্থুপ, সাহিত্যে প্রচেত গুপ্ত, ক্রীড়ায় পর্বতারোহী পিয়ালি বসাক, বিজ্ঞানে পদার্থবিদ পার্থসারথি ঘোষ, শিল্পোদ্যোগে সেনকো-কর্তা শুভঙ্কর সেন, বাণিজ্য পরিচালনায় হোটেল কর্তা শিবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়ও সেরা-র মর্যাদায় ভূষিত। অনুষ্ঠানের সূচনায় রবীন্দ্রগান ও তার নেপথ্যে বিদেশি গানের ছায়াটি শুনিয়ে বাঙালির ঘরে, বাইরের ভুবনটিই মেলে ধরেছিলেন সমদীপ্তা মুখোপাধ্যায়। বাঙালির বিনয়, অধ্যবসায় এবং নতুন পথে হাঁটার সাহসের মিশেলে সন্ধ্যাটি স্মরণীয় হয়ে থাকল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement