ভূমিকম্পের জেরে মায়ানমারে ভেঙে পড়েছে বহুতল। ক্ষয়ক্ষতি ব্যাঙ্ককেও। ছবি: পিটিআই, এএফপি এবং রয়টার্স।
মায়ানমারের জোড়া ভূমিকম্পে বহু ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। মান্দালয় শহরে একাধিক বহুতল ভেঙে পড়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে দাবি, মান্দালয়ে একটি মসজিদ ভেঙে পড়েছে। তার নীচে চাপা পড়ে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। রয়টার্স এই খবর নিশ্চিত করেনি। জোরালো কম্পন অনুভূত হয়েছে প্রতিবেশী তাইল্যান্ডেও। সেখানকার রাজধানী ব্যাঙ্ককে গগনচুম্বী একটি বহুতল ভেঙে পড়েছে। বহুতলটি নির্মীয়মাণ অবস্থায় ছিল। তাইল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। ৮১ জন নিখোঁজ। ভূমিকম্পের কারণে ব্যাঙ্ককে জরুরি বৈঠকে বসেছেন তাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী।
জোড়া ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি মায়ানমারে। ছবি: পিটিআই।
মায়ানমারে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে ব্যাঙ্ককের দূরত্ব প্রায় ৯০০ কিলোমিটার। কিন্তু এই ভূমিকম্প এতটাই তীব্র ছিল যে, ব্যাঙ্ককে জোরালো কম্পন অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পের পর ব্যাঙ্কক জুড়ে ট্রেন এবং মেট্রো পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মায়ানমারে ভেঙে পড়েছে বিখ্যাত আভা সেতু। সমাজমাধ্যমে তার কিছু ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে। (যদিও ভিডিয়োগুলির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম।) প্রথমে শোনা গিয়েছিল, ব্যাঙ্ককে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। পরে রয়টার্স তাইল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রীকে উল্লেখ করে জানায়, জরুরি অবস্থা জারি করা হয়নি। তবে ব্যাঙ্ককের অবস্থা গুরুতর।
ব্যাঙ্ককে ভেঙে পড়েছে নির্মীয়মাণ বহুতল। শুক্রবার। ছবি: রয়টার্স।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জোড়া ভূমিকম্পের পর মায়ানমার এবং তাইল্যান্ডের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘‘মায়ানমার এবং তাইল্যান্ডে সকলের সুরক্ষার জন্য প্রার্থনা করছি। ওখানকার পরিস্থিতি দেখে আমি উদ্বিগ্ন। ভারত সাধ্যমতো সমস্ত সাহায্য করতে প্রস্তুত। আমাদের কর্তৃপক্ষকে তৈরি থাকতে বলছি। মায়ানমার এবং তাইল্যান্ডের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলেছি বিদেশ মন্ত্রককে।’’
মায়ানমারের দমকল বিভাগের এক আধিকারিক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। ইয়াংগনে তল্লাশি চলছে। হতাহতের সংখ্যা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
মায়ানমারে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির ছবি। ছবি: পিটিআই।
মান্দালয়ের এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘আমার চোখের সামনে একটা পাঁচতলা বাড়ি হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছে। গোটা শহরে সবাই রাস্তায়। কেউ কোনও বাড়ির ভিতরে ঢোকার সাহস পাচ্ছে না। আমরা খুব ভয়ে আছি।’’
ভূমিকম্পের আতঙ্কে মায়ানমারে রাস্তায় মানুষ। ছবি: রয়টার্স।
আমেরিকার জিয়োলজিক্যাল সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার মায়ানমারে জোড়া কম্পনের মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৭.৭ এবং ৬.৪। আবার ভারতের ভূকম্প পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি জানিয়েছে, প্রথম কম্পনের মাত্রা ৭.৫ এবং দ্বিতীয়টির মাত্রা ৭। ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকাতে কম্পন অনুভূত হয়েছে। কেঁপেছে বাংলাদেশ। কলকাতায় কোথাও কোথাও মৃদু কম্পন টের পাওয়া গিয়েছে। কম্পন অনুভূত হয়েছে দিল্লি পর্যন্ত। এমনকি, চিনের কিছু এলাকায়ও ভূমিকম্প টের পাওয়া গিয়েছে।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি জানিয়েছে, প্রথম কম্পনটি হয় ভারতীয় সময় সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে। আর দ্বিতীয় কম্পনটি হয় ১২টা ২ মিনিটে। প্রথমটির উৎসকেন্দ্র মায়ানমারের বর্মা প্রদেশের ১২ কিলোমিটার উত্তরে। আর দ্বিতীয়টির উৎসকেন্দ্র মায়ানমারের লকসকের ১৫১ কিলোমিটার পশ্চিমে। দু’টি কম্পনের ক্ষেত্রেই উৎপত্তিস্থল ছিল মাটির ১০ কিলোমিটার নীচে।