বন্ধুর বাবার দু’রকম কথায় রহস্য

চিত্রনাট্যই বলা যায়। তবে সেলুলয়েডের পর্দা নয়, বরং ঘোর বাস্তব। ছেলের এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘আপনার ছেলে একটা খারাপ মেয়ের সঙ্গে মিশছে। ওকে আটকান।’’ আবার তিনিই ফোন করে সেই ‘খারাপ মেয়ে’টির মাকে নিজের অফিসে ডেকে পাঠালেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৬ ০৩:২৩
Share:

আবেশ দাশগুপ্ত

চিত্রনাট্যই বলা যায়। তবে সেলুলয়েডের পর্দা নয়, বরং ঘোর বাস্তব।

Advertisement

ছেলের এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘আপনার ছেলে একটা খারাপ মেয়ের সঙ্গে মিশছে। ওকে আটকান।’’ আবার তিনিই ফোন করে সেই ‘খারাপ মেয়ে’টির মাকে নিজের অফিসে ডেকে পাঠালেন। তাঁকে বললেন, ‘‘আপনার মেয়ে একটা খারাপ ছেলের সঙ্গে মিশছে। ওকে সাবধান করুন।’’

বালিগঞ্জের সানি পার্কে স্কুলছাত্র আবেশ দাশগুপ্তর রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় ওই ব্যবসায়ীর ছেলেকেই শনিবার ও রবিবার দু’দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। ঘটনার অব্যবহিত পর ঘাতক হিসেবে ওই ব্যবসায়ী-পুত্রের নামই উঠে এসেছিল। আর ছেলের যে বন্ধুর মাকে ওই ব্যবসায়ী বাড়ি গিয়ে সতর্ক করেছিলেন, সেই বন্ধুই আবেশ। আবেশ আর ওই ব্যবসায়ী-পুত্র, দু’জনেই সানি পার্কে গিয়ে শনিবার মদ্যপান করেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। যে মেয়ের ব্যাপারে আবেশের মাকে ওই ব্যবসায়ী সাবধান করে দিয়েছিলেন, সে মেয়েটি কিন্তু ব্যবসায়ী-পুত্রেরও ঘনিষ্ঠ। সে স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী। একই সঙ্গে সে টালিগঞ্জের বাসিন্দা ওই ব্যবসায়ীর প্রতিবেশীও।

Advertisement

সানি পার্ক কাণ্ডে তাই ত্রিকোণ সম্পর্কের ছায়া দেখছেন অনেকে।

আবেশের এক বাল্যবন্ধু রবিবার জানিয়েছে, একটা সময়ে আবেশ, ব্যবসায়ী-পুত্র ও অন্য বন্ধুরা সপ্তাহান্তে নিয়মিত বাইরে খেতে যেত। কিন্তু গত এক মাস ধরে ওই ব্যবসায়ী-পুত্র ও আবেশের মধ্যে প্রায়ই গণ্ডগোল হতো এবং সেটা একটি মেয়েকে নিয়ে। কিন্তু মেয়েটি কে, সেটা আবেশের ওই বাল্যবন্ধু বলতে পারেনি।

রবিবার আবেশের মা রিমঝিম দাশগুপ্ত জানান, ব্যবসায়ী-পুত্রের সঙ্গে আবেশের বন্ধুত্ব ছোটবেলা থেকেই। তার সূত্রেই মাসখানেক আগে ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে আলাপ ও বন্ধুত্ব হয় আবেশের। এর পরেই এক দিন ওই ব্যবসায়ী আবেশের বাড়িতে গিয়ে মেয়েটির সম্পর্কে নানা ‘খারাপ কথা’ তাঁকে জানান।

এ দিন ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ওই মেয়েটির সম্পর্কে পাড়ায় খোঁজ নিন। সব জানতে পারবেন।’’ ওই ব্যবসায়ীর পুরনো আসবাবপত্র ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা রয়েছে। টলিউডের বিভিন্ন শ্যুটিংয়ে আসবাব ভাড়া দেওয়ার সূত্রে চলচ্চিত্র জগতের বহু প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা। আবেশের বাবাও সিনেমা জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি পুলিশেও চাকরি করতেন।

কিন্তু ওই ব্যবসায়ী কেন এক-এক জনকে এক-এক রকম কথা বলেছেন? এ দিন ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। এর বেশি কোনও কথা বলব না।’’ যদিও একটি সূত্রের দাবি, তিনি আবেশের বাড়িতে গিয়ে কী বলেছেন, জানার পরে ব্যবসায়ী-পুত্র বাবার কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে। পরে আবেশের মাকে ফোন করে ব্যবসায়ী ক্ষমা চান।

আবেশের মা রিমঝিম দেবীর দাবি, শনিবার রাতে ঢাকুরিয়ার বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে ঘটনার বিবরণ শোনার সময়ে তিনি ওই ব্যবসায়ী-পুত্রের অস্বাভাবিক আচরণ সম্পর্কে জানতে পারেন। রিমঝিম দেবীর বক্তব্য, তিনি জেনেছেন, সানি পার্কের বেসমেন্টে আবেশ যখন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে এবং তাকে ঘিরে সব বন্ধুরা দাঁড়িয়ে, তখন ওই ব্যবসায়ী-পুত্র হঠাৎ বলে, তাকে এখন বেরোতে হবে, কারণ তার মা অসুস্থ। ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ওই হাল দেখেও ব্যবসায়ী-পুত্র ও রকম করল কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন রিমঝিম দেবী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement