দুরবস্থা: (বাঁ দিকে) মহেশতলা থানার সামনে বাজেয়াপ্ত হওয়া গাড়ি-মোটরবাইকের স্তূপ। (ডান দিকে) প্রগতি ময়দান থানার বাইরে জমা জলে জন্মাচ্ছে মশা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
কোথাও থানার সামনে রাখা পরিত্যক্ত গাড়ি বা বাতিল টায়ারে জমে রয়েছে জল। কোথাও আবার থানা চত্বরেই জঙ্গল, আবর্জনার স্তূপ। কোথাও আবার দেখা গেল, থানার সৌন্দর্যায়নের নামে রাখা সারি সারি ফুলের টবে জল জমে আছে। ডেঙ্গির মোকাবিলায় শহরের কয়েকটি থানার বাইরে মশা মারার তেল ছড়ানোর দৃশ্য দেখা গেলেও অধিকাংশ থানারই অবস্থা বেশ উদ্বেগজনক। লালবাজারের তরফে থানাগুলিকে পরিষ্কার রাখার নির্দেশ এলেও পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি বলেই অভিযোগ।
ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে কিছু দিন আগে আনন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে বছর বারোর এক স্কুলছাত্রের। হাসপাতালের দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেটেও বিশাখ মুখোপাধ্যায় নামে ওই ছাত্রের শরীরে ডেঙ্গির কথা রয়েছে। ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন নবান্নের কর্তারাও স্বাস্থ্যকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করার পাশাপাশি প্রত্যেক জেলাশাসক এবং নগরোন্নয়ন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন বলে খবর। ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিলেও শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, একাধিক থানার বেহাল ছবিটা কিন্তু বদলায়নি। প্রগতি ময়দান, কসবা, জোড়াবাগান, উল্টোডাঙা, তপসিয়া, কড়েয়া, দক্ষিণ বন্দর ও আমহার্স্ট স্ট্রিট-সহ একাধিক থানা চত্বরে গেলেই দেখা যাচ্ছে অপরিচ্ছন্নতার সেই ছবি। সম্প্রতি প্রগতি ময়দান থানায় গিয়ে দেখা গেল, নতুন থানার পাশেই রাখা আছে সারিবদ্ধ গাড়ি। কয়েকটি গাড়ি আবার ঢেকেছে আগাছায়। সেগুলির নীচে জমে আছে জল। থানার এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘বাইপাসে তো মাঝেমধ্যেই কিছু না কিছু ঘটে। আটক বা দুর্ঘটনায় পড়া এত গাড়ি রাখব কোথায়? পুরনো থানায় তো আরও বেহাল অবস্থা ছিল।’’ একই অবস্থা তপসিয়া থানা চত্বরেও। আবর্জনার স্তূপের পাশাপাশি থানার বাইরে রেখে দেওয়া একাধিক গাড়ি আদতে মশার আড়ত বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। তপসিয়ার পাশাপাশি পরিত্যক্ত গাড়ি রাখা নিয়ে জোড়াবাগান থানা সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারাও একই অভিযোগ তুলেছেন। ওই এলাকার এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, করোনা— যত নিয়ম তো সব আমাদের জন্য। পুলিশকে নিয়ম শেখাতে গেলে কি আর পিঠ বাঁচবে!’’ থানা চত্বরে অব্যবস্থার একই ছবি দেখা গেল ফুলবাগান, উল্টোডাঙা, মেটিয়াবুরুজেও। সর্বত্রই পরিত্যক্ত গাড়িগুলি বছরের পর বছর পড়ে রয়েছে থানা চত্বরেই।
উল্টো ছবিও অবশ্য দেখা গিয়েছে। কলকাতায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরেই গল্ফ গ্রিন থানা চত্বরে ছড়ানো হচ্ছিল মশা মারার তেল। ওই থানার এক আধিকারিক বললেন, ‘‘এমনিতেই এত মশা! পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখলে থানায় বসে আর কাজ করতে হবে না!’’ ডেঙ্গি রুখতে থানা চত্বরে রাখা ফুলের টবে যাতে জল জমে না থাকে, সে দিকে বাড়তি খেয়াল রাখার কথা বলেছেন ভবানীপুর, টালিগঞ্জ থানার আধিকারিকেরাও।
বছর দুই আগে শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়তেই বেশ কয়েকটি থানা চত্বরে জঞ্জাল ও জল জমে আছে জানিয়ে এক অতিরিক্ত কমিশনারকে চিঠি দিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। সে বছর ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানেও থানা চত্বরে দীর্ঘদিন ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা গাড়ির ভিতরে জলে জমে মশা জন্মাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন শহরের এক বাসিন্দা। কিন্তু তার পরেও যে পরিস্থিতির খুব একটা বদল হয়নি, তা কার্যত স্পষ্ট। পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘একা পুরসভার উপরে দায়িত্ব ছাড়লে হবে না। ডেঙ্গি রুখতে সবাইকেই সচেষ্ট হতে হবে। কোথাও যাতে দীর্ঘদিন ধরে জল জমে না থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।’’ কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘থানা চত্বর অপরিচ্ছন্ন থাকাটা কখনওই কাম্য নয়। থানা চত্বরে থাকা গাড়িগুলিকে নিয়মিত ডাম্পিং গ্রাউন্ডে সরিয়ে ফেলা হয়। বর্ষার শুরুতেই প্রতিটি ডিভিশনে ডেঙ্গি-সতর্কতা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’