—প্রতীকী চিত্র।
জোকার একটি আবাসনের ভিতর থেকে উদ্ধার হল এক তরুণীর মৃতদেহ। শনিবার ভোরের এই ঘটনায় পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার কারণে ১৮ বছরের ওই তরুণী বহুতল ফ্ল্যাটের দশতলার বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। একটি সুইসাইড নোটও পেয়েছেন তদন্তকারীরা। দেহের ময়না তদন্ত করানো হচ্ছে। সেই রিপোর্ট আসার পরেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত ভাবে কিছু বলা সম্ভব বলে পুলিশের দাবি।
মনোরোগ চিকিৎসক থেকে সচেতন নাগরিকদের বড় অংশেরই যদিও দাবি, এই ধরনের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। পরীক্ষায় কৃতকার্য না হতে পারলে যে জীবন শেষ হয়ে যায় না, সেই বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকদেরই উদ্যোগী হয়ে সন্তানের সঙ্গে আরও বেশি করে কথা বলার সময় এসেছে বলে তাঁদের দাবি। মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম যেমন বললেন, ‘‘‘আমরা প্রত্যেকে জীবনে কোনও না কোনও ক্ষেত্রে অকৃতকার্য হই। প্রতিদিন এমন অভিজ্ঞতা আমাদের হয়। কিন্তু সেখানেই জীবন থেমে থাকে না। অকৃতকার্য হলেই যে জীবন শেষ হয়ে যায় না, এটা আরও বেশি করে সন্তানদের বোঝানো দরকার অভিভাবকদের। এ নিয়ে আলাদা করে কথা বলাটা খুব দরকার।’’ তাঁর আরও পরামর্শ, যে হারে প্রতিযোগিতা বাড়ছে, সেখানে এই বিষয়ে যত জোর দেওয়া হবে, ততই ভাল।
জানা গিয়েছে, ঠাকুরপুকুর থানা এলাকার ওই আবাসনে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তরুণী। এ দিন ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ খবর পেয়ে পুলিশ ওই আবাসনে গিয়ে দেখে, সেখানে মাটিতে একটি দেহ পড়ে রয়েছে। শরীরে একাধিক আঘাত। রক্তে ভেসে যাচ্ছে আশপাশ। এমন অবস্থা যে, মৃতার মুখ বোঝা যাচ্ছে না। এর পরে সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে একটি ফ্ল্যাট চিহ্নিত করে পুলিশ। সেখানে তখন মৃতার পরিবারের সদস্যেরা ঘুমোচ্ছিলেন। বেল বাজিয়ে পুলিশ তাঁদের তোলে। নীচে গিয়ে তাঁরা মৃতার পোশাক দেখে দেহ চিহ্নিত করেন। এর পরে ফ্ল্যাটে ফিরে এসে খাওয়ার টেবিলের উপরে একটি কাগজ পান মৃতার মা। কম্পিউটারে টাইপ করে প্রিন্ট নেওয়া সেই কাগজে আত্মহত্যার কথা লেখা ছিল বলেই সূত্রের খবর। নিজের নাম করে মৃতা লিখেছেন, তাঁর পক্ষে পড়াশোনার চাপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার পথ বেছে নিচ্ছেন তিনি। মৃতার পরিবার সূত্রে এ-ও জানা যায়, সম্প্রতি ওই তরুণীর একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। সেই ফলের কারণেই তরুণী এই পথ বেছেছেন কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আবাসনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখার পাশাপাশি মৃতার আত্মীয়দের সঙ্গেও কথা বলছে ঠাকুরপুকুর থানার পুলিশ। তবে রাত পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনও পক্ষ থেকেই অভিযোগ দায়ের হয়নি বলে লালবাজারের খবর।