Baguiati double murder

সত্যেন্দ্রর খপ্পর থেকে বেঁচেছিলেন এলাকারই এক যুবক

বাইকের ছবি দেখার সময়ে মোবাইলের পর্দায় যুবক হঠাৎ খেয়াল করেন, তাঁর মাথায় আঘাত করতে ভারী বস্তু বার করছে অন্য এক ব্যক্তি।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:২০
Share:

সত্যেন্দ্র চৌধুরী।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির ঘটনা। ২২ বছরের যুবককে বাইকের ছবি দেখাতে এক ব্যক্তি নিজের ভাড়ার ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। বাইকের ছবি দেখার সময়ে মোবাইলের পর্দায় যুবক হঠাৎ খেয়াল করেন, তাঁর মাথায় আঘাত করতে ভারী বস্তু বার করছে অন্য এক ব্যক্তি। কোনওক্রমে যুবক ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে বাঁচেন।

Advertisement

বাগুইআটির জগৎপুরে জোড়া খুনে মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরীর বিরুদ্ধে ছেলেকে খুনের চেষ্টার সেই অভিযোগ পুলিশে লিখিত আকারে দায়ের করতে পারেননি পেশায় কাঠের মিস্ত্রি দীনেশ ঘোষ। ছেলের কাছে শোনা সেই ঘটনার বিবরণ শুনে সত্যেন্দ্রকে ঘাঁটানোর সাহসও পাননি দীনেশ।

জগৎপুরের চড়কতলার যে পাড়ায় মৃত ছাত্র অতনু দে-র বাড়ি, তার ৫০০ মিটারের মধ্যেই বাড়ি দীনেশদের। তাঁর ছেলে রাজদীপ বাইকের শোরুমে সদ্য চাকরি পেয়েছেন। রাজদীপ জানান, সে দিনের ওই ঘটনার পিছনেও ছিল বাইক। তিনি জানান, সত্যেন্দ্র বাইক কেনাবেচার দালালি করত। রাজদীপের দাবি, তিনি তাঁর পুরনো বাইকটি সত্যেন্দ্রকে বিক্রি করতে দিয়েছিলেন।

Advertisement

ওই যুবকের অভিযোগ, সত্যেন্দ্র বাইক বিক্রি করলেও সেই টাকা কিছুতেই দিচ্ছিল না। রাজদীপের কথায়, ‘‘আমি নতুন বাইক কেনার কথাও ওকে বলেছিলাম। এক দিন আমাকে বাইকের ছবি দেখাতে নিজের ফ্ল্যাটে ডাকল। ওই ঘরে আরও এক জন ছিল। বাইকের ছবি দেখার সময়ে মোবাইলের স্ক্রিনে খেয়াল করি, ওই লোকটি মাথায় মারার জন্য পাইপের মতো কিছু বার করছে। আমি ঘুরে তাকাতেই পাইপটি সে ফেলে দেয়। কোনওমতে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে আসি।’’ দীনেশের কথায়, ‘‘ওই সময়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করতে পারলে আজ হয়তো অতনুরা বেঁচে যেত। ওই পাড়ার লোকজনই আমাকে পুলিশে যেতে দেননি।’’

সেই প্রসঙ্গ টেনে বুধবার অতনুর প্রতিবেশীরা বলছেন, ‘‘সত্যেন্দ্র মিষ্টভাষী এক যুবক বলেই জেনে এসেছি। কিন্তু ওর মধ্যে কতটা নৃশংস মানসিকতা রয়েছে, রাজদীপের ঘটনাই তার প্রমাণ।’’ অতনুদের প্রতিবেশী চিরঞ্জীব বর্মণ নামে এক যুবকের কথায়, ‘‘বাইক দেবে বলে অতনুর থেকে সত্যেন্দ্র ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিল। কিন্তু বাইক দিচ্ছিল না। খুনের আগে সে অতনুকে বাইকের একটি শোরুমে নিয়ে গিয়েছিল। আসলে সত্যেন্দ্রর এলাকায় পঁচিশ-ত্রিশ লক্ষ টাকা দেনা রয়েছে। এই ভাবে লোকের টাকা আত্মসাৎ করে ও চালাত।’’ প্রতিবেশীদের দাবি, হয়তো ওই ৫০ হাজার টাকা ফেরত না-দিতে চাওয়ার জন্যই অতনুকে খুন করেছে। আর সাক্ষী লোপাটের জন্য অভিষেককেও মেরে ফেলেছে।

চড়কতলার ওই এলাকাতেই একটি গ্যারাজ ছিল সত্যেন্দ্রর। এ দিন দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, গ্যারাজের শাটার নামানো। অতনুদের বাড়ির উল্টো দিকের বাড়িটিই সত্যেন্দ্রর শ্বশুরবাড়ি। আদতে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা সত্যেন্দ্র ওই বাড়ির এক তরুণীকে বিয়ে করে বছর পাঁচ-ছয় ধরে সেখানেই বসবাস করছিল বলে স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন। মঙ্গলবারের পরে বুধবারেও তালাবন্ধ ওই বাড়িতে এক দফা ভাঙচুর হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement