প্রতীকী ছবি।
খাবার গিলতে পারছিলেন না এক তরুণী। এমনকি, জল দিয়েও গেলা যাচ্ছিল না খাবার। কঠিন খাবার চিবিয়ে গিলে ফেলার ক্ষমতাই চলে গিয়েছিল তাঁর। তরল খাবারের উপরে সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন তিনি। বছর উনিশের তরুণীর এমন অবস্থা দেখে বাবা-মা আশঙ্কা করেছিলেন, নির্ঘাৎ পুরনো সমস্যা ফিরে এসেছে। পাঁচ বছর বয়সের কষ্ট মনে করে ভয় পেয়েছিলেন তরুণীও। অবশেষে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে গলার অস্ত্রোপচার করে বর্তমানে সুস্থ তরুণী। এখন তিনি স্বাভাবিক ভাবেই সব খাবার গিলে খেতে পারছেন বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই রোগ স্নায়ুঘটিত। নাম ‘অ্যাকালেজ়িয়া কার্ডিয়া’। এর কারণে শক্ত খাবার গিলে ফেলার ক্ষমতা হারিয়ে যায়। খাদ্যনালি ইসোফেগাসের নীচের অংশের (লোয়ার ইসোফেজিয়াল স্ফিংটার) পেশি শক্ত হয়ে যাওয়ায় এই সমস্যা শুরু হয়। পেশির কাঠিন্যের জন্য খাদ্যনালি বেয়ে খাবার পাকস্থলীতে যেতে বাধা পায়। জানা যাচ্ছে, সাধারণত কুড়ি বছর বয়সের পরে এই সমস্যা ধরা পড়ে। তবে এ ক্ষেত্রে ওই তরুণীর যখন পাঁচ বছর বয়স, তখনই সামনে এসেছিল গুরুতর ওই সমস্যা। সেই সময়ে তাঁর সফল অস্ত্রোপচার হয়। প্রায় পনেরো বছর পরে তরুণীর খাবার গিলতে ফের কষ্ট শুরু হওয়ায় পরিবারের বুঝতে দেরি হয়নি, কী সমস্যা হয়েছে।
তরুণীর শল্য চিকিৎসক সঞ্জয় মণ্ডল জানাচ্ছেন, এ বার লোয়ার ইসোফেজিয়াল স্ফিংটার ছাড়া আশপাশের অন্য পেশিও কাটতে হয়েছে। ইসোফেগাস এবং পাকস্থলীর দিকের অনেকটা পেশিই কাটা হয়েছে। কারণ পেশির কাঠিন্য অনেকটা দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে গিয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘লোয়ার ইসোফেজিয়াল স্ফিংটার নীচ থেকে পেটের অ্যাসিডকে উপরে উঠতে বাধা দেয়। তাই এই পেশি কাটলে রোগীর অ্যাসিড উপরে ওঠার সমস্যা বেড়ে যায়। অথচ পেশি কেটে দেওয়া ছাড়া অন্য চিকিৎসাও নেই। তাই অ্যাসিড প্রতিরোধ করতে একটি ছোট অস্ত্রোপচারও হয়েছে। যার মাধ্যমে ভাল্ভ তৈরি করে অ্যাসিডের উপরিভাগে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়েছে।’’
দুই শল্য চিকিৎসক সঞ্জয় মণ্ডল এবং শুভাশিস সাহার তত্ত্বাবধানে দুই পর্বে পুরো অস্ত্রোপচার মাইক্রো সার্জারি পদ্ধতিতে হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, যেহেতু দ্বিতীয় বার ইসোফেগাসের নীচে অস্ত্রোপচার হল, তাই অতিরিক্ত সতর্কতা নিতে হয়েছে। সামান্য ফুটো হয়ে গেলেও বাদ দিতে হত পুরো ইসোফেগাস।
এসএসকেএমের শল্য বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক বিতানকুমার চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সংখ্যায় কম হলেও এই চিকিৎসা সরকারি পরিকাঠামোয় হয়। দুই পর্বে এই অস্ত্রোপচার করলে রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাপনে সমস্যা থাকে না। স্নায়ুর কারণে এই সমস্যা হয়।’’