ছবি পিটিআই।
দিশাহীন ভাবে ঘুরছিলেন তিনি। সোমবার লকডাউনে নিস্তব্ধ কলকাতা বিমানবন্দর চত্বরে এক মহিলাকে ওই ভাবে ঘুরতে দেখে সন্দেহ হয় কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষীদের। সালোয়ার-কুর্তা পরিহিত ওই মহিলার সঙ্গে কোনও মালপত্র ছিল না। তাঁর কথাবার্তাও ছিল খানিক অসংলগ্ন।
ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তারক্ষীরা জানতে পারেন, তিনি রবিবার সন্ধ্যায় এক বন্ধুর সঙ্গে বিমানবন্দরে এসেছিলেন। সম্প্রতি ওই ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়েছে। তাঁর পুরো নামও জানেন না তিনি। বিমানবন্দরে পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে মহিলা গিয়েছিলেন শৌচাগারে। ফিরে দেখেন, ওই যুবক নেই। যে গাড়িতে করে এসেছিলেন, সেটিও নেই। সেই গাড়িতে ছিল মহিলার হাতব্যাগ। কিছু টাকা, মোবাইল সব ছিল তাতে।
রবিবার রাত থেকে মহিলা ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন বিমানবন্দর চত্বরে। সোমবার সেই খবর পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করে বিমানবন্দর থানার পুলিশ। হাবড়ায় মহিলার স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আসতে পারবেন না বলে জানান। শেষে নিজেদের গাড়িতে করে মহিলা পুলিশকর্মীরা তাঁকে পৌঁছে দেন বাড়িতে।
ওই যুবতী জানিয়েছেন, স্বামীর সঙ্গে তাঁর বনিবনা নেই। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলে ছোট। বাড়িতে সেলাই করে সংসার চালান তিনি। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে এক ব্যক্তির আলাপ হয়। রবিবার মহিলাকে ওই যুবক জানান, তিনি তাঁর কয়েক জন বন্ধুকে আনতে বিমানবন্দরে যাবেন। মহিলা চাইলে তাঁর সঙ্গে বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা করতে পারেন।
সেই মতো হাবড়া থেকে বারাসত হয়ে যুবতী প্রথমে পৌঁছন শ্যামবাজার। সেখান থেকে ওই বন্ধুটির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি তাঁকে কৈখালি চলে আসতে বলেন। ট্যাক্সি নিয়ে যুবতী চলে আসেন কৈখালি। সেখান থেকে তাঁকে গাড়িতে তুলে নেন ওই যুবক। গাড়িতে তাঁরা দু’জন ছাড়াও চালক ছিলেন।
যুবতীর দাবি, বন্ধুটি তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, ফেরার পথে তাঁকে হাবড়ার বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে যাবেন। কলকাতা বিমানবন্দরের অ্যারাইভালে ৩সি গেটের উল্টো দিকে পৌঁছনোর পরে গাড়ি থেকে নেমে যুবতী শৌচাগারে যান। ব্যাগ রেখে যান গাড়িতে। শৌচাগার থেকে ফিরে দেখেন, কেউ কোথাও নেই।
পুলিশে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি মহিলা। ফলে প্রতারণার মামলা শুরু করেনি পুলিশ। তবে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিমানবন্দর চত্বরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে গাড়িটির নম্বর জোগাড় করার চেষ্টা করা হবে। যুবতী জানিয়েছেন, রবিবার রাতে এক সহৃদয় ট্যাক্সিচালক তাঁকে ১০০ টাকা দেন। সেই টাকায় তিনি রাতে খান। রাত কাটান টার্মিনালের বাইরে। সোমবার ভোরে উঠে দেখেন, সব বন্ধ। সঙ্গে টাকাও নেই। শেষে দুপুরে পুলিশ তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেয়।