থানায় ঢুকে ‘লাথি’ মহিলা পুলিশকর্মীকে

পুলিশ জানায়, হরিদেবপুরের কালীতলা এলাকার একটি আবাসনে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন বৈশাখী। বাড়িওয়ালা গৌতম কোলে সম্প্রতি তাঁকে সেই ঘরটি ছেড়ে দিতে বলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৫৮
Share:

এই বহুতলের পাঁচতলাতেই থাকেন ধৃত মহিলা। নিজস্ব চিত্র

টালিগঞ্জ থানায় ঢুকে পুলিশকে মারধরের ঘটনার পরে ঠিক এক মাস কেটেছে। এর মধ্যেই ফের থানায় ঢুকে পুলিশকে মারধরের অভিযোগ উঠল বৃহস্পতিবার। এ বারের ঘটনাস্থল হরিদেবপুর। মারধরে এক মহিলা পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন বলে পুলিশের দাবি। ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে বৈশাখী সিংহ নামে এক মহিলাকে। যদিও ধৃতের পরিবারের অভিযোগ, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। পুলিশই বৈশাখীকে মারধর করে মোবাইল কেড়ে নেয়। আজ, শুক্রবার ধৃতকে আদালতে তোলার কথা।

Advertisement

পুলিশ জানায়, হরিদেবপুরের কালীতলা এলাকার একটি আবাসনে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন বৈশাখী। বাড়িওয়ালা গৌতম কোলে সম্প্রতি তাঁকে সেই ঘরটি ছেড়ে দিতে বলেন। তবে অগ্রিম নেওয়া ১৪ হাজার টাকা তিনি ফেরত দিতে না চাওয়ায় থানার দ্বারস্থ হন বৈশাখী। বুধবার দু’পক্ষকে থানায় ডেকে কথা বলে পুলিশ। কিন্তু গৌতম জানান, ঘরটি তিনি ভাড়া দিয়েছিলেন বৈশাখীর ভাই রাজীব ভুঁইয়াকে। টাকা মেটানোর হলে তাঁকেই মেটাবেন। পুলিশের দাবি, এই কথা শুনে বৈশাখী উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা হলে এক মহিলা পুলিশকর্মীকে লাথি মারেন তিনি। রাতে ছেড়ে দেওয়া হলেও বৃহস্পতিবার সকালে সিসি ক্যামেরার ফুটেজের ভিত্তিতে বৈশাখীকে গ্রেফতার করা হয় বলে দাবি করেছে হরিদেবপুর থানা।

গৌতম অবশ্য এ দিন জানান, সমস্যা বৈশাখীর বছর দশেকের ছেলেকে নিয়ে। তাকে মারধর করা হয়েছে বলে হরিদেবপুর থানায় গৌতমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন বৈশাখী। গৌতমের কথায়, ‘‘ওই বাচ্চাটি এত দুরন্ত যে, পাড়ার লোক টিকতে পারেন না। সে ওদের পাঁচতলার ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে নীচে নানা জিনিস ছুড়ে ফেলে। লোকের গায়ে লাগে। ফ্ল্যাটের গ্যারাজে গাড়ি রাখলে সিট ছিঁড়ে দেয়। আমরা বকেছি ঠিকই, কিন্তু মারধর করিনি।’’

Advertisement

বৈশাখীদের ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা গিয়েছে, সেখানে তাঁর বছর দশেকের পুত্র আর বৃদ্ধা মা রয়েছেন। ওই মহিলার আট বছরের মেয়ে স্কুলে গিয়েছে। বৈশাখীর স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে থাকেন না। বৃদ্ধা অভিযোগ করেন, ‘‘আমার নাতিকে ধরে মেরেছে গৌতম। পুলিশের মিটিয়ে নেওয়ার প্রস্তাবে মেয়ে রাজি হয়নি বলে ওকে ধরেই মেরেছে। আজ সকালে কী হল জানি না, পুলিশ এসে আমার মেয়েকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গেল।’’ কাঁদতে কাঁদতে তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি ঠিক মতো হাঁটাচলা করতে পারি না। নাতনির স্কুল ছুটির সময় হয়ে গিয়েছে। ওকে কে এনে দেবে?’’ বৈশাখীর ছেলে মায়ের ছেঁড়া পোশাক দেখিয়ে বলে, ‘‘দেখো কী করেছে। ওরা মা-কে কবে ছাড়বে?’’

তবে কি বাড়ি ভাড়ার অগ্রিম নিয়ে গোলমাল নেই? বাড়ির মালিক গৌতমের দাবি, ‘‘গন্ডগোল যা-ই হোক, পুলিশকে মারবে কেন?’’ তার পরেও প্রশ্ন উঠছে, পুলিশকে মারধরে অভিযুক্তকে বুধবারই কেন গ্রেফতার করা হল না? হরিদেবপুর থানা কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ-পশ্চিম ডিভিশনের অন্তর্গত। সেখানকার ডিসি নীলাঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘‘বুধবার ঘটনা মিটতে মিটতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। সন্ধ্যা ছ’টার পরে কোনও মহিলাকে গ্রেফতার করা যায় না। তা ছাড়া, এ দিন সকালে এলাকার লোকের একটা অভিযোগ পেয়েছি আমরা। তার পরেই ওই মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement