উৎসবের রাতে লরির চাকায় পিষে মৃত্যু যুবকের

নতুন বছরে আশিক যে আর বাড়ি ফিরবেন না, তা যেন এ দিন দুপুরেও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না তাঁর পরিবার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:২৭
Share:

অঘটন: এই গাড়িটি ধাক্কা মারে দু’টি মোটরবাইকে। আশিক শেখ (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র

বেপরোয়া গতিতে ছুটে আসা বালি বোঝাই একটি লরি সজোরে ধাক্কা মারল সামনের সাদা সেডান গাড়িতে। চালক ছাড়াও ভিতরে ছিলেন গাড়িটির মালিক দম্পতি। লরির ধাক্কায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে গাড়িটি ধাক্কা মারে সামনে থাকা দু’টি মোটরবাইকে। মুহূর্তে রাস্তায় ছিটকে পড়েন ওই দুই বাইকের চার আরোহী। পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যেতে গিয়ে এর পরে সেই লরি পিষে দেয় এক মোটরবাইক চালকের মাথা!

Advertisement

বর্ষশেষের রাতে ১১টা ৪০ মিনিট নাগাদ এমন দুর্ঘটনাই ঘটেছে হেস্টিংস থানা এলাকার বিদ্যাসাগর সেতুতে। পুলিশ গিয়ে ওই গাড়ির তিন জন এবং বাইকের চার জনকে আরোহীকে উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে লরির চাকায় পিষ্ট হওয়া আশিক শেখ নামে বছর বাইশের এক যুবককে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। তবে চিকিৎসার পরে অন্যদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বুধবার সকালে। এসএসকেএমেই এ দিন দুপুরে ময়না-তদন্ত হয় আশিকের। তবে এই ঘটনায় লরির চালককে রাত পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে লরি ফেলেই ঘটনাস্থল থেকে চম্পট দেয় সে। হেস্টিংস থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, লরির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখা করতে বলা হয়েছে। রাস্তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে লরির চালককেও চিহ্নিত করা গিয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আশিকের বাড়ি হাওড়ার ডোমজুড়ে। বর্ষবরণের উৎসবে যোগ দিতে পার্ক স্ট্রিটে যাবেন বলে মঙ্গলবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন তিনি। বিদ্যাসাগর সেতু ধরে কলকাতার দিকে যাওয়ার সময়ে জুবিলি লাইনের কাছে সেতুর উপরে বালি বোঝাই একটি লরি প্রথমে একটি গাড়িতে ধাক্কা মারে। ওই গাড়িটির পিছনের অংশ দুমড়ে ভিতরের দিকে ঢুকে যায়। ধাক্কার অভিঘাত সামলাতে না পেরে গাড়িটি সামনে থাকা দু’টি মোটরবাইকে ধাক্কা মারে। তারই একটি চালাচ্ছিলেন আশিক, অন্যটি শেখ সুরজ। তাঁদের পিছনে বসে ছিলেন শেখ তাজ, মিরাজ শেখ এবং অন্য দুই যুবক। সকলেরই বয়স বাইশ থেকে আঠাশের মধ্যে। পুলিশ জানায়, মাথায় হেলমেট থাকায় বাকিরা রক্ষা পেলেও আশিককে বাঁচানো যায়নি। এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, হেলমেটের মধ্যেই ছেলেটার মাথা প্রায় থেঁতলে গিয়েছে।’’

Advertisement

নতুন বছরে আশিক যে আর বাড়ি ফিরবেন না, তা যেন এ দিন দুপুরেও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না তাঁর পরিবার। বাড়ির অন্যেরা হাসপাতালে এলেও আনা যায়নি আশিকের বাবা শেখ আনসার এবং মা তসলিমা বেগমকে। মাঝেমধ্যেই সংজ্ঞা হারাচ্ছেন তসলিমা। ফোনে শুধু বললেন, ‘‘ছেলে আমার দর্জির দোকানে কাজ করে। অনেক দিন ধরে টাকা জমিয়েছিল বন্ধুদের সঙ্গে পার্ক স্ট্রিটে যাবে বলে। সে গেল ঠিক আছে, কিন্তু ফিরল না কেন?’’ বন্ধুর ঘটনা সামনে থেকে দেখা শেখ তাজও বললেন, ‘‘আশিককে ছাড়া পাড়ায় ফিরব কী করে?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement