অপেক্ষা: সল্টলেক সেক্টর ফাইভগামী মেট্রো ধরার আগে টিকিট কাটার দীর্ঘ লাইন। বৃহস্পতিবার, শিয়ালদহ স্টেশনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
মনে একটা ইচ্ছে ছিল, সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহগামী মেট্রোর প্রথম ট্রেনের সর্বপ্রথম যাত্রী হিসাবে টিকিট যদি কাটতে পারি, তবে দারুণ হয়। তাই অনেক সকালেই কৈখালির বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম। সেক্টর ফাইভ স্টেশনে গিয়ে দেখি, একেবারেই ভিড় নেই। কাউন্টারও খোলেনি। ফলে টিকিটের লাইন নেই। তখনই বুঝলাম, প্রথম যাত্রী হিসাবে টিকিট কাটার কপাল খুলে গিয়েছে।
আর দেরি না করে দ্রুত কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ঠিক কয়েক সেকেন্ড পরেই দ্বিতীয় জন এসে আমার পিছনে দাঁড়ালেন। তখন ঘড়িতে সকাল সাড়ে ছ’টা। সেক্টর ফাইভ থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়ার কথা আর আধ ঘণ্টা পরেই।
শুধু মেট্রোর প্রথম যাত্রী হিসাবে এই ট্রেনে ওঠাই নয়, রয়েছে আরও একটি উদ্দেশ্য। শিয়ালদহ থেকে চালু হওয়া প্রথম মেট্রোর যাত্রাপথের ভিডিয়ো তুলতেও এসেছি। পেশায় ব্যাঙ্ককর্মী। বেড়াতে গিয়ে ট্রেনের ভিডিয়ো ইউটিউবে আপলোড করা আমার নেশা। দেশের যেখানেই বেড়াতে যাই, ট্রেনের ভিডিয়ো তুলি। কলকাতা মেট্রোর ভিডিয়ো আগেও তুলেছি। দিল্লি এবং মুম্বই মেট্রোর ভিডিয়োও তুলেছি। ছোট স্টেশনে না দাঁড়িয়ে এক্সপ্রেস ১২০ কিলোমিটার বেগে কী ভাবে সব উথাল-পাথাল করে চলে গেল, তার ভিডিয়োও স্টেশনে দাঁড়িয়ে বহু বার তুলেছি।দূরপাল্লার ট্রেন, রাতের অন্ধকারে ট্রেন ছুটে যাওয়ার ভিডিয়ো, লোকাল ট্রেনের কামরার ভিতরে হকারদের বিকিকিনি— সব রয়েছে ভিডিয়োবন্দি হয়ে।
প্রথম যাত্রী হিসেবে টিকিট হাতে নিতেই আর এক আনন্দ উঁকি দিল। মাত্র কুড়ি মিনিটে পৌঁছে যাবশিয়ালদহে! বিশ্বাসই হতে চাইছিল না। শহরটা ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। সল্টলেক থেকে শিয়ালদহ এ বার হাতের নাগালে চলে এল। সাতটায় ট্রেন ছাড়তেই রোমাঞ্চ অনুভব করলাম। সূর্যের নরম আলো মেট্রোর উপরে এসে পড়েছে। হাঁস যেমন জলের মধ্যে তরতর করে এগোতে থাকে, মেট্রোও সে ভাবে নরম আলোগায়ে মেখে এগিয়ে গেল। দু’পাশের দৃশ্যপটে সরে সরে যাচ্ছে আমার প্রিয় শহর।
ট্রেনে ভিড় নেই। আশপাশে ছড়িয়ে রয়েছেন আমার মতোই কিছু উৎসাহী যাত্রী। ঠিক কুড়ি মিনিটে সাঙ্গ হল সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহের যাত্রা। দূষণহীন, যানজটহীন, কোলাহলহীন, ট্র্যাফিক সিগন্যালে না-থেমে, ঘাম না-ঝরিয়ে শিয়ালদহে যাওয়াটা এত সুখের হতে পারে! দু’চোখ ভরে শহরকে দেখতে দেখতে ফুলবাগান আসার একটু আগে মেট্রো নেমে গিয়েছিল ভূগর্ভে। ভিডিয়োয় তুলছিলাম কামরার ভিতরটাও। শিয়ালদহ স্টেশন যে এত বড় আর সুন্দর, তা না দেখলে বিশ্বাস হয় না।
স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে প্রথমেই মনে হল, এই রুটে প্রথম যাত্রী হওয়ার রোমাঞ্চে কত দৃশ্যই তো ভিডিয়ো করতে ভুলে গেলাম। তাই ফের শিয়ালদহ থেকে সেক্টর ফাইভের ফিরতি মেট্রোয় চড়ে বসলাম।
(সেক্টর ফাইভ থেকে প্রথম যাত্রী)