বুধবার রাতে প্রতিবাদে ‘আঁধার’ কলকাতা। — নিজস্ব চিত্র।
আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে আলো নিবিয়ে মোমবাতি জ্বালানোর ডাক দিয়েছিলেন আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা। তাঁদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন শহরের বহু মানুষ। অনেকে পথে নেমেছিলেন। শামিল হয়েছিলেন প্রতিবাদী জমায়েত কিংবা মিছিলে। অনেকে আবার ঘরে বসেই প্রতিবাদ আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন ঘরের বাতি নিবিয়ে। ওই দিন রাতে কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশের আলো নিবে গিয়েছিল। ঘরে ঘরে নেমেছিল ‘আঁধার’। বিচারের দাবিতে কোথাও জ্বলে উঠেছিল প্রদীপ, কোথাও মোমবাতি। এর ফলে ওই রাতে অন্যান্য দিনের চেয়ে বিদ্যুৎ খরচ কম হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা সিইএসসি-র পরিসংখ্যান থেকে তেমনটাই জানা যাচ্ছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বুধবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিট নাগাদ সিইএসসি-র অধীন এলাকায় বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে মোট ১,৬৭৭ মেগাওয়াট। অন্যান্য দিনের চেয়ে যা বেশ কম। তার ঠিক আগের দিনই অর্থাৎ, মঙ্গলবার রাতে ওই সময়ে সিইএসসি এলাকায় বিদ্যুৎ খরচ হয়েছিল ১,৭৯৬ মেগাওয়াট। সোমবার রাতে পৌনে ১০টা নাগাদ বিদ্যুৎ খরচের পরিমাণ ১,৭৮৯ মেগাওয়াট। অঙ্কের হিসাবে ১ মেগাওয়াট আসলে ১০ লক্ষ ওয়াটের সমান। সেই হিসাব অনুযায়ী, গত বুধবার রাতে ১১ কোটি ৯০ লক্ষ ওয়াট বিদ্যুৎ কম খরচ হয়েছে শুধু সিইএসসি এলাকায়।
আরজি করের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে কলকাতা। বিচার এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছেন বিভিন্ন হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকেরা। পালিত হচ্ছে কর্মবিরতি। এই প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়েছে রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে সারা দেশে। মুম্বই, দিল্লি, চেন্নাইয়ের মতো একাধিক শহরে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি পালন করেছেন। কলকাতায় প্রথম সর্বাত্মক নাগরিক আন্দোলন দেখা গিয়েছিল স্বাধীনতা দিবসের মধ্যরাতে। গত ১৪ অগস্ট ‘রাত দখলে’ নেমেছিলেন শহরের মহিলারা। কলকাতার রাস্তায় সে দিন ১২টার পর জনজোয়ার দেখা গিয়েছিল। তার পর থেকে একাধিক বার একাধিক নাগরিক মিছিলের সাক্ষী থেকেছে শহরের রাজপথ। এই ধরনের কর্মসূচি অধিকাংশই ছিল রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে। তবে হাজার হাজার মানুষ আরজি করের বিচার চেয়ে পথে নামলেও অনেকের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। শারীরিক বা অন্য কোনও সমস্যায় রাতে রাস্তায় নেমে জমায়েত বা মিছিলে অংশ নিতে পারেননি অনেকেই। বুধবার রাতের কর্মসূচিতে কিন্তু তাঁরাও শামিল হয়েছেন। ঘরে বসেই আলো নিবিয়ে সমর্থন জানিয়েছেন আন্দোলনকে। চেয়েছেন বিচার। ঘরে এবং বাইরে প্রতিবাদীদের যেন এক সুরে বেঁধে দিয়েছিল বুধবার রাতের কর্মসূচি।
অনেকে বলছেন, একটি টিউবলাইটে ২৫ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়। ১১ কোটি ৯০ লক্ষ মেগাওয়াটের হিসাব ধরলে সে দিন রাতে কলকাতা এবং শহরতলির প্রায় ৪৪ লক্ষ মানুষ ঘরের বাতি নিবিয়ে প্রতিবাদে সাড়া দিয়েছিলেন বলে কারও কারও দাবি। কর্মসূচিকে সফল বলেই মনে করছেন আয়োজকেরা। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি রয়েছে। তার আগে রবিবার রাতে আবার ‘রাত দখল’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে কলকাতায়। সাধারণ মানুষকে সেই কর্মসূচিতে শামিল হওয়ার অনুরোধ করেছেন আয়োজকেরা।