সৃজন সাহা। Sourced by the ABP
আর জি কর-কাণ্ডের আবহেই রাজ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর খবর মিলল। দক্ষিণ দমদম পুর এলাকার বাসিন্দা, ১১ বছরের এক বালকের মৃত্যুর খবর মিলেছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর, শনিবার ইএম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় সৃজন সাহা নামে পঞ্চম শ্রেণির ওই পড়ুয়ার। এই ঘটনায় দুই সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত চিকিৎসা পরিষেবা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন বালকের পরিজনেরা।
দক্ষিণ দমদম পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামনগর দাসভিলা এলাকায় বাড়ি সৃজনের। মাস দেড়েক আগে তার বাবার মৃত্যু হয়। সৃজনের মা মঞ্জু সাহা জানান, ১ সেপ্টেম্বর তাঁর ছেলের জ্বর হয়েছিল। ৫ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার তার ডেঙ্গি ধরা পড়ে। শুক্রবার সকালেই দক্ষিণ দমদম পুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সৃজনকে। পরিবারের অভিযোগ, ওই হাসপাতালে ছেলেকে নিয়ে গেলে সেখানে তাকে ভর্তি করানোর কথা বলা হয়। কিন্তু একই সঙ্গে এ-ও জানানো হয় যে, অবস্থার অবনতি হলে ওই হাসপাতালের যা পরিকাঠামো, তাতে উন্নত পরিষেবা দেওয়া মুশকিল। তাই তখন সেখান থেকে সৃজনকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে নিয়ে যায় তার পরিবার।
সৃজনের এক প্রতিবেশী তুলসী সাহা জানান, আইডি হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তেমন ভাবে চিকিৎসা হয়নি ওই বালকের। প্লেটলেট পরীক্ষায় দেখা যায়, তা দেড় লক্ষ থেকে ৪২ হাজারে নেমে গিয়েছে। তুলসী বলেন, ‘‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত তৎপরতা দেখা যায়নি। স্যালাইনও দেওয়া হয়নি। রাত বাড়লে অবস্থার অবনতি হয়। ভোরের দিকে আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয় সৃজনকে। সে সময়ে ছেলেটির শরীর ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল, স্যালাইন নিতে পারছিল না।’’ সেই অবস্থায় শনিবার তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু তাতে শেষরক্ষা হয়নি। ভর্তি করানোর কিছু ক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।
ঘটনাচক্রে, গত কয়েক বছরে দক্ষিণ দমদম পুর এলাকায় বার বার ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা গিয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, গত বছর ডেঙ্গি ও জ্বর মিলিয়ে প্রায় চার হাজার মানুষ আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় আট জনের। পুরসভার দাবি, চলতি বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গি প্রতিরোধে বিশেষ পদক্ষেপ করা হয়েছে। বছরের শুরুতে কিছু এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা গেলেও গত পাঁচ-ছ’মাসে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার কোনও রিপোর্ট জমা পড়েনি।
তবে ডেঙ্গিতে রাজ্যের প্রথম মৃত্যুতে চিন্তার ভাঁজ পুর প্রশাসনের কপালে। পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) সঞ্জয় দাস বলেন, ‘‘পুর হাসপাতালের জরুরি ও শিশু বিভাগের চিকিৎসকেরা ওই ছেলেটিকে দেখেছিলেন। ভর্তি করাতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পরিবার রোগীকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করে।’’ তবে তিনি এ-ও জানান, পুর হাসপাতালে যে শিশুদের আইসিইউ নেই, সেটিই পরিবারকে জানানো হয়েছিল।