বিভিন্ন বয়সের নির্যাতিতাদের প্রতীকী পোশাক। প্রদর্শিত হল রবিবার, যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডের কাছে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
কোনও হকারের ঠেক নয়। তবে রাস্তার ধারেই দড়িতে ঝুলছে আটপৌরে শাড়ি, ব্লাউজ়ের পাশে শিশুর পরনের ছোট্ট ফ্রক। জমকালো পার্টি ড্রেসের পাশে সাধারণ জিন্স, টিশার্ট। এ ছাড়াও লং স্কার্ট, সালোয়ার কামিজ়— পাশাপাশি আরও কত কী! প্রায় হরেক রকমের নারী পোশাকের সম্ভার মেলে ধরা হয়েছে শহরের রাজপথের কিনারে। রবিবারের কলকাতায় এমনই অভিনব প্রতিবাদের ভাষা চোখে পড়ল।
পোশাকে কিসের প্রতিবাদ? এই উদ্যোগের নেপথ্যে যাঁরা, তাঁরা বলছেন, এই সবই নির্যাতিতাদের পোশাক। নানা ধরনের এই সব পোশাক পরেই সেইসব নারী যৌন হেনস্থার শিকার হয়ে থাকেন। তার প্রতীকী পোশাক রয়েছে। শুধু নারীরাই নন। রূপান্তরকামী নারী, পুরুষ বা ছোট ছেলেরও যৌন নিগ্রহের অভিজ্ঞতা থাকে। সে কথাও মাথায় রেখেছেন এই উদ্যোগের আহ্বায়কেরা।
গত ৯ অগস্ট আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নাইট ডিউটিতে কর্তব্যরত অবস্থায় ডাক্তার-ছাত্রীর খুন ও ধর্ষণের ঘটনার পর থেকেই কলকাতা তথা বাংলা জুড়ে প্রতিবাদের ঢল নেমেছে। ১৪ অগস্ট, দেশের স্বাধীনতার মধ্যরাতে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে রাজ্যের বা দেশের কয়েকশো রাজপথের মোড়ে মোড়ে পথে নেমে প্রতিবাদের শরিক হয়েছেন মেয়েরা এবং রূপান্তরকামীরাও। সেই প্রতিবাদের ডাক যাঁরা দিয়েছিলেন, তাঁদের পুরোভাগে থাকা তরুণী গবেষক রিমঝিম সিংহ এ দিনের প্রতিবাদের ডাকও দিয়েছেন। রিমঝিমের কথায়, ‘‘সব বয়সের প্রায় সব মেয়েই কখনও না কখনও যৌন হেনস্থার শিকার হন। সাধারণত তাঁদের পোশাককেই এর জন্য দায়ী করা হয়। কিন্তু সেই মেয়েদের অভিজ্ঞতা বলছে, আসলে পোশাকের কোনও ভূমিকাই নেই এই পরিণতির জন্য। যৌন হেনস্থার অপব্যাখ্যা ভাঙতেই প্রতীকী পোশাক মেলে ধরে প্রতিবাদ করছি।’’
যাদবপুরে এক প্রৌঢ়া বলছিলেন, ‘‘জীবনে প্রথম বার হাওড়া স্টেশনে যাওয়া মনে আছে। কারণ ভিড়ের মধ্যে সে দিন হেনস্থার শিকার হই। কী পোশাক সে দিন পরেছিলাম, তা-ও মনে আছে!’’ ইছাপুরের পুলিশ ফাঁড়ির সামনে প্রতিবাদের আয়োজনের নেপথ্যে একটি বুটিক কর্ত্রী দেবযানী দাশগুপ্ত। বলছেন, ‘‘এই আয়োজনের আগে মেয়েদের সঙ্গে আলোচনার সময়ে কিন্তু অনেকেই পুরনো ক্ষত বা দগদগে ঘা খুঁচিয়ে তোলা অভিজ্ঞতাকে মনে করে যন্ত্রণা পেতে চাননি। আমরা ঠিক করি, কাঠুয়ার ছোট্ট মেয়েটি, সম্প্রতি কোচবিহারে ধর্ষিতা এক ঘাসকুড়ানি, পার্ক স্ট্রিটের নাইট ক্লাব থেকে বেরিয়ে ধর্ষিতা তরুণী এবং আর জি করের ডাক্তার-ছাত্রী— সকলের পোশাকের একটা প্রতীকী উপস্থাপনা করব। অনেকে আবার ছোট ছোট চিঠি লিখে সেই পোশাকের ভাঁজে রেখেছেন।’’
এর আগে ধর্ষণ ও পোশাকের সম্পর্কহীনতা বোঝাতে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ধর্ষিতাদের পোশাকের একটি প্রদর্শনী সাড়া ফেলেছিল। যাদবপুরে এই পোশাক প্রদর্শনীতে প্রথমে অনুমতি দিতে চায়নি পুলিশ। শেষ পর্যন্ত যাদবপুর, কলেজ স্ট্রিট, বাগুইআটি, হাওড়ার মন্দিরবাজার, উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরে প্রতীকী পোশাক নিয়ে প্রতিবাদের আয়োজন করা হয়। মেয়েরা ছাড়া রূপান্তরকামীরাও এই প্রতিবাদে শরিক হন।