পঙ্কজ ভুতোরিয়া জানালেন, তাঁর আফসোস রয়েই গেল। নিজস্ব চিত্র।
রোজ সাড়ে ৯টার সময়ে অফিসে ঢোকেন। বুধবারও একই সময়ে এসেছিলেন। বিবাদী বাগ চত্বরের শরাফ হাউসের উপরের তলের এক বেসরকারি অফিসের কর্মী পঙ্কজ ভুতোরিয়া। এখন তাঁর মনে হচ্ছে ওই সময়ে তিনি অফিসে না এলে কী হত!
অফিসে ঢুকে রুটিন কাজ করতে শুরু করে দিয়েছিলেন পঙ্কজ। মিনিট পনেরো পর হঠাৎ তাঁর চোখে পড়ে ধোঁয়া! কোথা থেকে ওই ধোঁয়া আসছে, তার খোঁজও করতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু আনন্দবাজার অনলাইনকে পঙ্কজ জানিয়েছেন, ধোঁয়া দেখতে পেলেও তার উৎস অর্থাৎ আগুন খুঁজে পাননি তিনি।
পঙ্কজের কথায়, আগুন লেগেছে এই ভয় ছিল। কিন্তু কিছু খুঁজে না পাওয়ায় আবার কাজে ফেরেন তিনি। ঠিক এই সময়েই শোনেন দুমদাম শব্দ! ছিটকে বেরিয়ে করিডোরে গিয়ে দেখেন, সেখানকার ফলস সিলিংয়ের ফাঁক দিয়ে আগুন দেখা যাচ্ছে।
সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ যখন শরাফ হাউসের ছাদের উপরে দাউ দাউ আগুন জ্বলছে তখন নীচে দাঁড়িয়ে পঙ্কজ বলছিলেন সেই মুহূর্তের কথা। তখন অফিসের অধিকাংশ কর্মীই আসেননি। আগুন জ্বলতে দেখে কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে যেতেই পারতেন। কিন্তু পঙ্কজ আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।
অফিসে যে কয়েক জন এসেছিলেন, তাঁদের নিয়েই অগ্নিনির্বাপকের সাহায্যে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে থাকেন পঙ্কজ। কিন্তু তখনও তাঁদের ধারণাই ছিল না কতটা লেগেছে আগুন। অগ্নিনির্বাপকে সেই আগুন নেভেনি। বরং ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা আগুনের শিখা ক্রমেই ছড়িয়ে পড়তে থাকা শরাফ হাউসের উপরের তলে।
শরাফ হাউসে আগুন নেভানোর এই চেষ্টায় জখমও হন এক প্রৌঢ়। তিনি শরাফ হাউসেরই নিরাপত্তা কর্মী। সবাই দেবনাথদা বলে ডাকেন। আগুন নেভানোর চেষ্টায় পঞ্চাশোর্ধ্ব দেবনাথও যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু ধোঁয়ায় আচমকাই অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন তিনি। পরে গিয়ে জখমও হন। পরে দেবনাথকে উদ্ধার করা হয়। চিকিৎসার জন্যও নিয়ে যাওয়া হয়।
আগুন নেভানোর জন্য পঙ্কজেরাই খবর দেন দমকলে। অবশেষে প্রায় ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় নেভে আগুন। কিন্তু প্রথম দিকে পঙ্কজেরা না থাকলে হয়তো আগুন বাড়তেও পারত। কিন্তু পঙ্কজেরা পালিয়ে না গিয়ে রুখে দাঁড়ালেন কেন, প্রাণে বাঁচার কথা মনে হয়নি? পঙ্কজ জানিয়েছেন, ‘‘তখন সত্যিই মনে হয়নি। মনে হচ্ছিল, অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। দমকল এসে পৌঁছনোর আগে যদি সেই ক্ষতি কিছুটা আটকানো যায়!’’ যদিও শেষ পর্যন্ত ক্ষতি আটকানো যায়নি। এটাই আফসোস পঙ্কজদের।