Durga Puja 2022

পুজোয় বিদ্যুতের বিলে ছাড়ে বাড়ছে খেসারতের আশঙ্কা 

দু’বছর পরে অনেকটাই স্বাভাবিক ছন্দ ফেরায় এ বার পুজোয় জাঁকজমকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে চলেছে বিদ্যুতের বিল। সেখানেই স্বস্তি দিচ্ছে বাড়তি ১০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:৩৯
Share:

আশঙ্কায় নাগরিকদের একাংশ। প্রতীকী ছবি।

এ বছর মুখ্যমন্ত্রী পুজো কমিটিগুলির জন্য অনুদানের অঙ্ক বৃদ্ধি এবং বিদ্যুতের বিলে ছাড়ের ঘোষণা করায় এক দিকে যখন উৎফুল্ল উদ্যোক্তারা, তখন অন্য দিকে সেই ছাড়ের জেরে খেসারত দেওয়ার আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেছেন নাগরিকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাগুলিকে এই ছাড় তো দিতেই হবে। কিন্তু অন্য কোনও ভাবে সেই খরচের ধাক্কা জনগণের ঘাড়ে এসে পড়বে না তো?

Advertisement

কয়েক সপ্তাহ আগে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শহরের পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে অনুদানের অঙ্ক ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ হাজার টাকা এবং বিদ্যুতের বিলে ছাড় ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ করার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার ভাঁড়ারে টাকা নেই। আমি মনে করি, মা দুর্গা ভাঁড়ার পূর্ণ করবেন। তাই এ বার পুজোর অনুদান ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬০ হাজার টাকা করে দিলাম। খুশি তো? বিদ্যুতের বিলে ছাড় ৬০ শতাংশ করতে সিইএসসি, বিদ্যুৎ দফতরকে অনুরোধ করলাম।”

তবে শহরের বড় বাজেটের পুজোর উদ্যোক্তাদের কাছে অনুদানের অঙ্কের তুলনায় বিদ্যুতের বিলের ছাড়ই বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। কারণ, প্রতি বছর দুর্গাপুজোয় ওই বিলের অঙ্ক লক্ষ টাকা ছাড়ায় একাধিক পুজো কমিটির। গত বছর দুর্গাপুজোয় বিদ্যুতের বিলে ৫০ শতাংশ ছাড় ছিল। সেই ছাড় কার্যকর হওয়ার পরেও কোনও কমিটি বিল দিয়েছে দেড় থেকে দু’লক্ষ, কেউ ৭০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা। অথচ, করোনার গেরোয় গত বছরেও বেশির ভাগ পুজো তাদের বাজেটে কাটছাঁট করেছিল। দু’বছর পরে অনেকটাই স্বাভাবিক ছন্দ ফেরায় এ বার পুজোয় জাঁকজমকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে চলেছে বিদ্যুতের বিল। সেখানেই স্বস্তি দিচ্ছে বাড়তি ১০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা।

Advertisement

কলেজ স্কোয়ার পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য অচিন্ত্য লাহা বললেন, ‘‘পুজোয় চার লক্ষের বিদ্যুতের বিলে দু’লক্ষ টাকা ছাড় দিলে তো সুবিধাই হয়। এ বছর বাজেটে বিদ্যুতের বিলের খরচ বেশি ধরা হয়েছে। স্বস্তি দিচ্ছে ৬০ শতাংশ ছাড়।’’ প্রতি বছর জমকালো আলোয় তাক লাগানো শ্রীভূমির বিদ্যুতের বিল চার লক্ষের আশপাশে ঘোরাফেরা করে বলে কর্তারাই জানাচ্ছেন। ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে গত বছর বিদ্যুৎ বাবদ প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে জানালেন এক কর্তা। ওই পুজোর অন্যতম কর্তা দিব্যেন্দু গোস্বামী বলেন, ‘‘আমরা তো শুধু পুজো করি না, সারা বছর নানা কাজ হয়। পুজোয় বিজ্ঞাপন বাবদ যেটুকু যা আয় হয়। সরকারের তরফে ছাড় পেলে সুবিধাই হয়।’’

প্রতি বছরই থিম পুজো হয় দক্ষিণের সুরুচি সঙ্ঘে। তাদের বিদ্যুতের খরচ এক থেকে দেড় লক্ষের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। গত বছর ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে সত্তর হাজার টাকার কাছাকাছি বিল দিতে হয়েছিল বলে জানাচ্ছেন এক কর্তা। উদ্যোক্তা কিংশুক মিত্র বললেন, ‘‘এ বছর আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা খানিকটা বেশি। ফলে এই ছাড় বিরাট স্বস্তির।’’ বিদ্যুতের বিলে এই ছাড়ে স্বস্তি পাচ্ছেন উত্তরের গৌরীবেড়িয়া সর্বজনীন থেকে দক্ষিণের দেশপ্রিয় পার্কের পুজোকর্তারাও।

তবে অপেক্ষাকৃত কম বাজেটের পুজোকর্তাদের একাংশের প্রশ্ন অন্য। তাঁরা বলছেন, ‘‘যে পুজোগুলি এক ধাক্কায় ৩০-৪০ লক্ষ টাকা জোগাড় করেছে, তাদের এই বিদ্যুতের ছাড় দেওয়ার কী দরকার? এ তো তেলা মাথায় তেল দেওয়া!’’ শহরের একটি মাঝারি পুজো কমিটির কর্তার মন্তব্য, ‘‘এ ভাবে সব পুজোর ক্ষেত্রে ছাড় দিলে আশঙ্কা বাড়বে অন্য দিকে। পুজোর বাইরে আমাদের স্থায়ী পরিচিতি আছে। প্রত্যেকের সাংসারিক জগৎ রয়েছে। সেখানে কি খেসারত দিতে হবে?’’ রাজ্য সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী অজিত শীলের ক্ষোভ, ‘‘সহজে জনপ্রিয়তা পাওয়ার চেষ্টায় সবটাই ‘গ্যালারি শো’। না-হলে যে রাজ্যে সরকারি কর্মীরা দীর্ঘদিন মহার্ঘ ভাতা পান না, বার বার তহবিল শূন্যের কথা বলা হয়, সেখানে কী ভাবে উৎসবের নামে টাকা ছড়ানো হয়?’’ শ্যামবাজারের প্রদীপ চক্রবর্তীর আশঙ্কা, ‘‘অনুদান দেওয়াটা ঘোষণা করে হয়, কিন্তু জিনিসপত্র এবং বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি— সবটাই হয় নিঃশব্দে ও একপেশে ভাবে। আর সেই বৃদ্ধির বোঝা আমাদের বইতে হয়। কোনও সরকার লাঘব করতে আসে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement