Kolkata Bus

বাস অপহরণে সক্রিয় চক্র, ‘জড়িত’ বাসকর্মীদের একাংশও

রাতে কয়েক ঘণ্টার জন্য বাস তুলে নিয়ে গিয়ে, তেল শুষে নিয়ে ফের স্ট্যান্ডে রেখে আসা হচ্ছে সেটি। মালিক তা ধরতেও পারছেন না। আর পুলিশে গিয়েও কোনও সুরাহা হয় না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২৩ ০৬:৩৬
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

একে তো ধরা পড়ার ভয় রয়েছে ষোলো আনা। সেই সঙ্গে ঢাউস পাত্র নিয়ে এসে বাসস্ট্যান্ডে ঢুকে তেল চুরি করা রীতিমতো শক্ত! তাই তেল চুরি করতে আস্ত বাস ‘অপহরণ’ করছে চোরের দল! রাতে কয়েক ঘণ্টার জন্য বাস তুলে নিয়ে গিয়ে, তেল শুষে নিয়ে ফের স্ট্যান্ডে রেখে আসা হচ্ছে সেটি। মালিক তা ধরতেও পারছেন না। আর পুলিশে গিয়েও কোনও সুরাহা হয় না। এই চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে বাসকর্মীদের একাংশের, এমন অভিযোগও তুলছেন কেউ কেউ।

Advertisement

রবিবার রাতে ভিআইপি রোডে বাসের ধাক্কায় বিয়েবাড়ি-ফেরত একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে তেল চুরির এই তত্ত্ব সামনে এসেছে। তেল চুরি করার জন্য ফাঁকা বাসটিকে স্ট্যান্ড থেকে নিয়ে গিয়ে ফেরত আনার সময়ে বেপরোয়া চালক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির পিছনে ধাক্কা মারে। গাড়ির তিন যাত্রী ও চালককে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিন জনকে মৃত বলে জানান চিকিৎসকেরা। সঙ্কটজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গাড়িচালক। তবে পুলিশি তদন্তে তেল চুরির জন্য বাস ‘অপহরণের’ ঘটনা সামনে আসতেই শোরগোল পড়েছে।

শহরের বাসমালিকদের একাংশের যদিও দাবি, ‘পথ’ বদল করা তেল-চুরির এই চক্র কয়েক মাস ধরে বিধাননগরে তো বটেই, কলকাতাতেও সক্রিয়। সূত্রের খবর, এমন তেল চুরির অভিযোগ এসেছে ২৪এ, কেপি-২১, এসডি-৫, ২২৭, ৪৪ নম্বর-সহ একাধিক রুটে। বেসরকারি বাসমালিক সংগঠনের সদস্যেরা জানান, বাসের চালক, কন্ডাক্টর, এমনকি বাস ধোওয়া-মোছার কাজে যুক্তদের অনেকেও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে তাঁদের আশঙ্কা। কারণ, তা না-হলে রাতে বাস ডিপো থেকে বেরিয়ে গেলে সে খবর মালিকের কানে আসত। এমনকি, পুরনো বাসের যান্ত্রিক গোলযোগ রয়েছে। চাবি দিয়ে বাস চালু করার যান্ত্রিক ব্যবস্থা ঠিকঠাক নেই। এক বাসমালিক বলেন, ‘‘বহু বাস এক চাবিতেই খুলে যায়। পেরেকের ডগা দিয়ে বা তারে তারে ঘষা লাগিয়ে বাস চালু করা বাসচালকদের কাছে মামুলি ব্যাপার।’’ বাসমালিকদের একাংশের দাবি, শহরের রাস্তায় দীর্ঘ সময় ধরে কোথাও বাস দাঁড়িয়ে থাকলেও সক্রিয় থাকে এই তেল কারবারিরা। ‘সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিস’-এর সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, ‘‘অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাতে ডিপোয় দাঁড়িয়ে থাকা বাসেই কর্মীরা থেকে যান। তাই ডিপোর বাসে রাত্রিবাস করা কর্মীদের বাদ দিয়ে সেটি অন্যত্র নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। অসাধু একাংশের যোগসাজশে সবই সম্ভব হচ্ছে। গাড়ি থেকে তেল চুরির ঘটনাও ঘটছে। তবে পুলিশ-প্রশাসন ঠিক মতো নজরদারি চালালে এই অসাধু চক্রকে আটকানো যেত। কিন্তু সেখানেও ঢিলেমি রয়েছে।’’

Advertisement

এই তেল যায় কোথায়? জানা গিয়েছে, ডিজ়েলের দাম বৃদ্ধির পরে এই চক্র আরও বেশি সক্রিয় হয়েছে। চুরির তেল বিক্রি করা হয় কম দামে। শহরতলিতে বোতলে করে এইতেল বিকোয় লিটারপিছু ৫০-৬৫ টাকায়। শহরের কাটা তেলের কারবারিদের হাতে হাতেও ঘোরে ওই চুরির তেল।

কিন্তু পুলিশ ব্যবস্থা নেয় না কেন? লালবাজারের কর্তাদের দাবি, যে হেতু বাসকর্মীদেরই একাংশ এর সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ, ফলে বেশির ভাগ ঘটনা পুলিশের কাছে পৌঁছয় না। বাসকর্মীদের সংগঠন অনেক ক্ষেত্রে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘প্রতিটি বাস পাহারা দেওয়ার জন্য তো পুলিশ রাখা সম্ভব নয়। যদি সর্ষের মধ্যেই ভূত থাকে, তা হলে কার কী করার আছে? তবে পুলিশে অভিযোগ হলেই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement