প্রতীকী ছবি।
মাথাটা থেঁতলানো। পরনের পোশাক ছেঁড়া। আশপাশে পড়ে থাকা মদের বোতল, ইটের উপরে চাপচাপ রক্ত। বুধবার ভোরে ঠাকুরপুকুরের মুকুন্দদাস পল্লির স্টেশন রোডে একটি চায়ের দোকান থেকে এই অবস্থাতেই উদ্ধার হল গৌতম ঘোষ (৩৫) নামে এক যুবকের মৃতদেহ। দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, মদ্যপানের সময়ে কোনও বিবাদের জেরে ভারী কিছু দিয়ে বারংবার আঘাত করে খুন করা হয়েছে গৌতমকে। এই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের নাম অশোক রায় এবং রবি দাস। আজ, বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে তোলার কথা।
ঠাকুরপুকুরের ওই স্টেশন রোডের এক দিকে পরপর নানা খাবারের দোকান। পুলিশ সূত্রের খবর, তার মধ্যেই একটি চায়ের দোকানে মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ থানায় খবর দেন এক প্রাতর্ভ্রমণকারী। পুলিশ গিয়ে দেখে, চায়ের দোকানের মেঝেতে ইটের উপরে পড়ে রয়েছে দেহটি। আশপাশে ছড়ানো মদের বোতল। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য এম আর বাঙুর হাসপাতালে পাঠায়।
তদন্তে নেমে অশোককে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জেরা করে রাতে ডায়মন্ড হারবার রোড থেকে ধরা হয় রবিকে। সকালেই ঘটনাস্থলে যান কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) মুরলীধর শর্মা। তিনি বলেন, ‘‘গৌতম নামের ওই যুবক এলাকাতেই রিকশা চালাতেন। ইট বা ওই ধরনের কিছু দিয়ে মাথায় মেরে খুন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’’ বেলায় ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন পুলিশের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ ওয়াসিম রাজা। তিনি দাবি করেন, ‘‘ওই চায়ের দোকানেই খুন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। দোকানের এক জায়গায় অনেকটা রক্ত জমাট বেঁধে ছিল। দোকানের পাশের দেওয়ালেও ছিল রক্তের ছিটে। কিছু পোড়া সিগারেট ও পানীয়ের বোতল পেয়েছি আমরা।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, দোকানটি মালা দাস নামে এক মহিলার। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, রাত সাড়ে ন’টা পর্যন্ত দোকানেই ছিলেন। সকালে দোকান খুলতে এসে প্রায়ই তিনি প্রচুর মদের বোতল পড়ে থাকতে দেখেন। পুলিশের অনুমান, ওই মদ্যপানের আসরেই বিবাদের জেরে এই খুন।
ঘটনাস্থল থেকে হাঁটাপথে কয়েক মিনিট দূরেই গৌতমের বাড়ি। তাঁর তিন দিদির মধ্যে দু’জন এবং এক দাদার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। গৌতম বিয়ে করেননি। রিকশা চালানোর কাজ করলেও গৌতম ও তাঁর বৃদ্ধা মা নমিতা ঘোষের দু’বেলার খাবার যেত মেজদি টুকু মাঝির বাড়ি থেকে। টুকু এ দিন বলেন, ‘‘ভাইকে নিয়ে খুব চিন্তা হত। নেশা করেই শেষ হয়ে গেল।’’ দুপুর রোদে বাড়ির সামনের রাস্তাতেই ছেলের অপেক্ষায় বসে ছিলেন বৃদ্ধা নমিতাদেবী। কান্না জড়ানো গলায় লোকজনকে ডেকে তিনি শুধু বলছেন, ‘‘আমার ছেলেটাকে আগে এনে দাও। সকাল থেকে কিছুই খায়নি।’’