Death

রাস্তার কলে কাপড় কাচার সময়ে ট্যাক্সি পিষে দিল ছয়নাভির বাসিন্দা প্রৌঢ়াকে 

গীতা ও তাঁর ছেলে শঙ্কর স্থানীয় বাসিন্দা সুমিত্রা মণ্ডলের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। অতি নিম্নবিত্ত এলাকা ছয়নাভির ওই বাড়িটি গাড়ি চলাচলের রাস্তার পাশেই। বাড়ির অদূরেই রাস্তার কলে মশারি কাচছিলেন গীতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:২৭
Share:

গীতা বর। —ফাইল চিত্র।

বাড়ির দরজার অদূরে কলতলায় কাপড় কাচার সময়ে বেপরোয়া ট্যাক্সি পিষে দিল এক প্রৌঢ়াকে। বিধাননগর (দক্ষিণ) থানার ছয়নাভি এলাকায় মঙ্গলবার সকালে ওই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। ট্যাক্সিটি ভাঙচুর করা হয়। মৃতার নাম গীতা বর (৬২)। ট্যাক্সিচালক মহম্মদ আসরফকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ট্যাক্সির সওয়ারিরা তিলজলার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে পুলিশ। চালকের পাশে বসা যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি, ট্যাক্সি চেপে ছাগল চুরি করতে এসে তাড়া খেয়ে পালানোর সময়ে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

Advertisement

গীতা ও তাঁর ছেলে শঙ্কর স্থানীয় বাসিন্দা সুমিত্রা মণ্ডলের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। অতি নিম্নবিত্ত এলাকা ছয়নাভির ওই বাড়িটি গাড়ি চলাচলের রাস্তার পাশেই। বাড়ির অদূরেই রাস্তার কলে মশারি কাচছিলেন গীতা। সেই সময়ে বেপরোয়া গতিতে আসা গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হুড়মুড়িয়ে গীতাকে ধাক্কা মারে। ধাক্কার অভিঘাতে কলের সামনের দেওয়ালে পিষে প্রৌঢ়ার দেহ ট্যাক্সির বাঁ চাকার তলায় ঢুকে যায়। তাঁকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয়।

ওই দুর্ঘটনায় দায়ী ট্যাক্সিটির যাত্রীরা ছাগল চুরি করতে এসেছিলেন বলেই অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গীতার বাড়িওয়ালা সুমিত্রা মণ্ডল বলেন, ‘‘ভিড়ের মধ্যে কয়েক জন এক ট্যাক্সি-যাত্রীকে চিনে ফেলেছিলেন। তাঁরাই জানান, ওই দু’জন ছাগল চুরি করতে এলাকায় এসেছিলেন।’’

Advertisement

স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, ওই এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই ব্যবসার জন্য ছাগল-মুরগি পোষেন। তাঁদের অভিযোগ, চুরির উদ্দেশ্যে ছাগলকে বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে কাছে ডেকে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। এ দিন বিধাননগর (দক্ষিণ) থানার কাছে রাখা ওই ভাঙাচোরা ট্যাক্সির ভিতর থেকে দু’টি বিস্কুটের প্যাকেটও উদ্ধার হয়েছে।

মোরবালা প্রামাণিক নামে এক বৃদ্ধা অভিযোগ করেন, ‘‘আমার একাধিক ছাগল চুরি গিয়েছে। পার্ক সার্কাসের দিক থেকে একটা দল এ দিকে ছাগল চুরি করতে আসে। এরা তারা কি না, জানি না। আমরা পুলিশকে বলেছি খোঁজ করতে।’’

বিধাননগর পুরসভার স্থানীয় ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি চামেলি নস্কর জানান, ছাগল চুরি করার চেষ্টা করতে গিয়ে তাড়া খেয়ে পালানোর সময়ে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি শুনেছেন। চামেলি বলেন, ‘‘স্থানীয় মানুষ ছাগল চুরির চেষ্টার অভিযোগ করেছেন। আমি শুনেছি, বিস্কুট দিয়ে একটি ছাগলকে গাড়ির কাছে ডাকা হচ্ছিল। ছাগলের মালিক দেখতে পেয়ে চিৎকার করতে থাকেন। তখনই অভিযুক্তেরা ছাগল ফেলে গাড়ি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করতে গেলে ওই প্রৌঢ়াকে চাপা দেয়। তদন্ত করলেই দুর্ঘটনার আসল কারণ জানা যাবে।’’

এ দিন বিধাননগর (দক্ষিণ) থানায় গিয়ে দেখা গেল, কান্নায় ভেঙে পড়ছেন প্রৌঢ়ার ছেলে শঙ্কর বর। রক্তে তাঁর পোশাক ভিজে গিয়েছে। কোনও রকমে শঙ্কর বলেন, ‘‘চোখের সামনে মা মারা গেলেন। মশারি কাচছিলেন। আমি মায়ের পাশেই দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ দেখলাম, একটা ট্যাক্সি মায়ের দিকে ধেয়ে আসছে। কিছু বলার আগেই মাকে দেওয়ালের সঙ্গে পিষে দিল ওই ট্যাক্সিটা।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, ট্যাক্সির আরোহী দুই যুবকের এক জনের বিরুদ্ধে আবার বিধাননগর (দক্ষিণ) থানায় ছাগল চুরি করে গ্রেফতার হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। তবে এ দিনও তাঁরা তেমনই কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে ছয়নাভিতে গিয়েছিলেন কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার হওয়া ট্যাক্সিচালক তিলজলার বাসিন্দা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement