দমদমের বি কে পাল লেনে এই পুকুরটি ভরাট করা ঘিরেই ছড়ায় উত্তেজনা। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
পুকুর ভরাটের অভিযোগ থামছে না কিছুতেই। এ বার অভিযোগ, কলকাতা পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের বি কে পাল লেনে বড় পুকুরের একাংশ দখল করে প্রোমোটিং করা নিয়ে। এই অভিযোগ তুলে স্থানীয়েরা গণস্বাক্ষর-সহ অভিযোগপত্র কাউন্সিলরকে পাঠিয়েছিলেন। তবে নির্মাণকারী সংস্থার তরফে পাল্টা জানানো হয়েছে, পুরসভার অনুমতি নিয়েই তাঁরা এই কাজ করছেন।
বুধবার দমদম স্টেশন সংলগ্ন বি কে পাল লেনে ওই পুকুর ভরাটকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযোগ, প্রোমোটারের লোকজনকে মারধর করেন প্রতিবাদী বাসিন্দাদের কয়েক জন। চিৎপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামলায়। বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল ফাঁকা মাঠের পাশে বিতর্কিত জায়গাটি। একটি পুকুর ও সংলগ্ন জমির উপরে গাছ-সহ জায়গা চার দিক থেকে ঘিরে শালবল্লা পুঁতে দেওয়া হয়েছে।
পুকুরের একাংশ ভরাট করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, পুকুরটি আয়তনে অনেক বড় ছিল। ঘাটে কাপড় কাচা থেকে স্নান—সবই করতেন স্থানীয়দের অনেকে। অভিযোগ, গত পনেরো দিনে ঘাট উধাও হয়ে গিয়েছে। এক মাসের মধ্যে পুকুরের একাংশ ভরাট হয়েছে। প্রতিবাদ জানিয়ে বাসিন্দারা স্থানীয় কাউন্সিলর দেবিকা চক্রবর্তীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তাঁদের আবেদন, ‘‘পুর আধিকারিকেরা পরিদর্শন করে যান। নির্মাণকারী সংস্থা ইতিমধ্যেই পুকুরের অনেকটা ভরাট করে ফেলেছে। যথাযথ তদন্ত হোক।’’
কাউন্সিলর দেবিকা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘বুধবার পুকুর ভরাটের অভিযোগ শুনেই চিৎপুর থানার পুলিশকে ফোন করে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। থানা জানিয়েছিল, নির্মাণকারী সংস্থা পুরসভার অনুমতি নিয়েই কাজ করছে। সত্যিই তা হচ্ছে কি না, দেখা হবে।’’
পুরসভার প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের (পিএমইউ) দফতর সূত্রের খবর, দমদমের বি কে পাল লেনের এই ঠিকানায় পুকুরের একাংশ ভরাটের অনুমতি নিয়েছিল নির্মাণকারী সংস্থা। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইনল্যান্ড ফিশারিজ় অ্যাক্ট, ১৯৮৪ অনুযায়ী, কোনও প্রকল্পের জন্য নির্মাণ সংস্থাকে সংশ্লিষ্ট এলাকার পুকুর বা জলাশয়ের একাংশ ভরাটের অনুমতি দেওয়া হয়। শর্ত, যত অংশ ভরাট করা হবে, সমপরিমাণ অংশ ওই ঠিকানায় খনন করে জলাশয়কে ফিরিয়ে দিতে হবে। পরিভাষায় যাকে বলে ‘রিলোকেশন অব পন্ড’।’’ ওই পুর আধিকারিক আরও বলেন, ‘‘দমদমের বি কে পাল লেনের পুকুরটি ২১ কাঠার মতো। দেখতে হবে, নির্মাণ সংস্থা ভরাটের পর সমপরিমাণ জায়গা ফিরিয়ে দিয়েছে কি না।’’ নির্মাণ সংস্থার কর্ণধার প্রবীণ খেতাওয়াত এ দিন বলেন, ‘‘পুরসভার থেকে অনুমতি নিয়েই পুকুরের একাংশ ভরাট করে ফের নতুন করে খনন করে দিয়েছি। বাসিন্দাদের স্বার্থে পুকুরের ঘাটও তৈরি করে দেওয়া হবে।’’
এই প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দারের বক্তব্য, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’