—প্রতীকী ছবি।
প্রতিস্থাপনযোগ্য হৃৎপিণ্ড চেয়ে আবেদন করা রোগীর তালিকা এতটাই দীর্ঘ যে, অপেক্ষা করতে করতেই মৃত্যু হয় অনেকের। জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত অস্ত্রোপচার প্রয়োজনীয় হয়ে পড়লেও সুরাহা মেলে না। এই পরিস্থিতিতে স্পন্দন প্রায় থেমে আসা হৃৎপিণ্ড যান্ত্রিক পদ্ধতিতে সচল রাখার একটি সফল অস্ত্রোপচার এই প্রথম করা হল এই শহরে। ওই অস্ত্রোপচারের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘রোগী সুস্থ রয়েছেন। এই পদ্ধতিতে সাফল্যের হার প্রায় ৭০ শতাংশ। ফলে প্রতিস্থাপনযোগ্য হৃৎপিণ্ডের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকার মতো নিরুপায় অবস্থা অনেকটাই বদলাল।’’
ওই চিকিৎসক দলের অন্যতম সদস্য কুণাল সরকার জানান, ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরের বাসিন্দা, বছর চুয়ান্নর এক ব্যক্তি মাস তিনেক আগে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। অবস্থা এমন হয় যে, হৃৎপিণ্ড কাজ করা একেবারে বন্ধ করে দিচ্ছিল। জরুরি পরিস্থিতিতে প্রতিস্থাপনযোগ্য হৃৎপিণ্ডের জন্য আবেদন করেও সাড়া মিলছিল না। এই পরিস্থিতিতে কলকাতার মেডিকা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই রোগীর শরীরে একটি যন্ত্র বসিয়ে কৃত্রিম পদ্ধতিতে হৃৎপিণ্ড চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এ ক্ষেত্রে হার্টমেট-২ নামে একটি কৃত্রিম ‘হার্ট পাম্প’ রোগীর শরীরে বসানোর সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। এতে প্রায় বন্ধ হতে বসা হৃৎপিণ্ড নতুন করে স্পন্দিত হতে শুরু করে। সফল অস্ত্রোপচারে কোনও ব্যক্তির শরীরে এই পাম্প পাঁচ থেকে দশ বছর ভাল ভাবে কাজ করতে পারে। রোজকার হাঁটাচলা, কাজ করা বা গাড়ি চালানোয় কোনও সমস্যা হয় না। তবে বেল্ট পরে স্নান করা গেলেও সাঁতার কাটা যায় না।
সেই মতো গত সোমবার সকালে ওই রোগীর অস্ত্রোপচার করা হয়। দিল্লি থেকে আনানো হয় ওই যন্ত্র। চিকিৎসকেরা জানান, পাম্পটি হৃৎপিণ্ডের ঠিক পাশে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লাগিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে একটি চার্জিং কেব্ল শুধু শরীর থেকে বার করা থাকে। রোগীকে একটি বেল্ট পরে থাকতে হয়। সেই বেল্টের সঙ্গে লাগানো ব্যাটারির সঙ্গে যুক্ত থাকে ওই কেব্ল। অস্ত্রোপচারের পরে মোট আটটি ব্যাটারি দেওয়া হয় কোনও রোগীকে। এক-একটি ব্যাটারি ১২ ঘণ্টা কাজ করে। বেল্টের মাধ্যমে দুটো ব্যাটারি পরে থাকলে সারা দিনের মতো কাজ চলে যায়। তবে ঘুমোনোর সময়ে ব্যাটারি লাগানো বেল্ট পরে থাকতে হয় না। একটি ডিরেক্ট লাইনে ওই যন্ত্রের চার্জ হয়। বেল্টের সঙ্গেই থাকে একটি নিয়ন্ত্রণ-যন্ত্র। সেটা দিয়েও ওই যন্ত্রের কাজ বাইরে থেকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
চিকিৎসক মহলের বক্তব্য, কলকাতা তথা পূর্ব ভারতে এই প্রথম এমন অস্ত্রোপচার হল। তবে এর আগে চেন্নাই ও দিল্লির কয়েকটি জায়গাতেও তা হয়েছে। তবে যেখানে উত্তর আমেরিকা বা ইউরোপে বছরে এই ধরনের প্রায় হাজার দেড়েক অস্ত্রোপচার হয়, সেখানে ভারতে সেই সংখ্যাটা মাত্র ১৫-র আশেপাশে।
প্রতিস্থাপনযোগ্য হৃৎপিণ্ড পাওয়া যেখানে এত শক্ত, সেখানে এমন অস্ত্রোপচার তো আরও বেশি করে হওয়ার কথা?
কুণালবাবু বললেন, ‘‘না হওয়ার অন্যতম কারণ খরচ ও এমন অস্ত্রোপচার করার মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কলকাতায় এই রোগীর অস্ত্রোপচারের খরচ পড়েছে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। যে যন্ত্রটি বসানো হয়েছে, সেটি দিল্লি থেকে আনাতেই লেগেছে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। তা হলে উপায়? চিকিৎসকদের বড় অংশের বক্তব্য, ‘‘হচ্ছে না, হবে না বলে ছেড়ে দেওয়া চলবে না। এমন অস্ত্রোপচার যে আমরাও করতে পারি, এটা তারই প্রমাণ। ফলে আরও বেশি করে এমন কাজে এগোতে হবে। আর্থিক প্রতিবন্ধকতাও সে ভাবেই কাটবে।’’