মৌসম ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
যাত্রীর ব্যাগ, মোবাইল ফোন— সবই পড়ে রয়েছে ট্রেনের কামরায়। অথচ যাত্রীরই হদিস নেই! আস্ত ট্রেন থেকেই যেন উধাও হয়ে গিয়েছেন তিনি। গত ১৯ দিন ধরে খোঁজ মিলছে না নয়াদিল্লি-শিয়ালদহ রাজধানী এক্সপ্রেসের ওই যাত্রীর। পরিবারের থেকে অভিযোগ পেয়ে তাঁর খোঁজ করছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, নিখোঁজ ওই যাত্রীর নাম মৌসম ঘোষ। বাড়ি দমদম ক্যান্টনমেন্টে।
চল্লিশোর্ধ্ব মৌসমের মেসোমশাই মিলন রায় জানান, মৌসমের বাবা-মা বেঁচে নেই।
তিনি দমদমে একাই থাকেন। সম্প্রতি ইম্ফলে একটি সংস্থায় চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। সেই চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। এর আগে দিল্লিতে একটি সংস্থায় চাকরি করতেন মৌসম। সেখানেই তাঁর ঘরে শীতের পোশাক ফেলে এসেছিলেন তিনি। তাই ইম্ফলের আবহাওয়ার কথা ভেবে দিল্লি গিয়েছিলেন পোশাক আনতে।
মিলন জানিয়েছেন, গত ২৭ জুন দিল্লি-শিয়ালদহ রাজধানী এক্সপ্রেসে মৌসম বাড়ি ফিরছিলেন। ২৮ জুন তাঁকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এর পরে তাঁর এক বন্ধু সেই মোবাইলে ফোন করলে সেটিও বন্ধ পান। তার পরে সে দিনই রেল পুলিশের তরফে ফোন যায় ওই বন্ধুর কাছে। তাঁর মাধ্যমেই মৌসমের পরিবার খবর পেয়ে শিয়ালদহ স্টেশনে গিয়ে রেল পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
জানা যায়, রাজধানী এক্সপ্রেসের যে কামরায় মৌসম ছিলেন, সেখানকার অ্যাটেনডেন্ট ওই যাত্রীর ব্যাগ, মোবাইল পড়ে থাকতে দেখে সেগুলি রেল পুলিশের কাছে জমা দেন। এর পরে মৌসমের এক মাসি গত ২৯ জুন দমদম থানায় নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন। তার পরে ১৯ দিন কেটে গেলেও এখনও খোঁজ মেলেনি মৌসমের।
মৌসমের মেসোমশাই আরও জানান, সেই অ্যাটেনডেন্টের সঙ্গে তাঁরা কথা বলে জেনেছেন, দুর্গাপুর স্টেশনে মৌসমকে ট্রেনে প্রাতরাশ করতে দেখা গিয়েছিল। পরিবারের সদস্যেরা মনে করছেন, মৌসম কোনও স্টেশনে নেমে থাকলে তা স্টেশনের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ার কথা। ট্রেনের মধ্যেও যদি তাঁর সঙ্গে কোনও অঘটন ঘটে থাকে, সে ক্ষেত্রেও তা রেল পুলিশ বা রেল কর্মীদের নজরে
পড়ার কথা।
পুলিশ জানিয়েছে, মৌসমের খোঁজ পেতে প্রতিটি থানাকে তাঁর নিখোঁজ সংবাদ জানানো হয়েছে। দুর্গাপুর, আসানসোল-সহ বিভিন্ন জায়গার হাসপাতালেও খবর নেওয়া হয়েছে। ২৭ জুনের পরে যে সমস্ত দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেই তথ্যও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবু এখনও পর্যন্ত মৌসমের সন্ধান মেলেনি। তিনি নিজে থেকে কোথাও চলে গিয়েছেন, না কি কোনও
দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই বিষয়ে খোঁজ চালানো হচ্ছে।
মৌসমের মাসি মণিকা রায় বলেন, ‘‘ওর বাবা-মা বেঁচে নেই। ওর জন্য বড় উৎকণ্ঠা হচ্ছে।
মৌসম সুস্থ ভাবে ফিরে আসুক, এটাই চাইছি। অসুস্থ হল কিনা, কোনও চক্রের খপ্পরে পড়েছে কি না, কিছুই বুঝতে পারছি না। প্রশাসনের কাছে গেলেও সেই সহযোগিতা
পাচ্ছি না।’’