—প্রতীকী চিত্র।
রাত বাড়লেও স্বামী বাড়ি ফিরছেন না দেখে দুশ্চিন্তায় ছিলেন স্ত্রী। এর কিছু পরেই তাঁর কাছে ফোন আসে তাঁর প্রাক্তন স্বামীর। ফোনে দাবি করেন, তিনিই কুপিয়ে খুন করেছেন ওই তরুণীর বর্তমান স্বামীকে। ওই দুই যুবক পরস্পরের বন্ধু। শনিবার রাতে, বরাহনগরের ঘটনা। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত পলাতক।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের নাম তাপস সাহা (২৮)। তিনি একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী ছিলেন। তিনি নিরঞ্জন সেন নগরের বাসিন্দা। খুনে অভিযুক্ত শিবু দাস ওই এলাকারই বাসিন্দা। কয়েক বছর আগে শিবুর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল রিয়া নামে ওই তরুণীর। তাঁদের বছর পাঁচেকের একটি ছেলে রয়েছে। সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ায় শিবুর বাড়িতে নিত্য যাতায়াত ছিল তাপসের। তখন থেকেই রিয়ার সঙ্গে তাপসের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তাপসের সঙ্গে এ নিয়ে কয়েক বার তাঁর বচসাও হয়। তবে বছরখানেক আগে রিয়াকে বিয়ে করে তাপস নিজের বাড়িতে আনেন। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, তখন থেকেই তাপসকে প্রাণে মারার হুমকি দিতেন শিবু।
সূত্রের খবর, সপ্তাহখানেক আগে শিবু তাঁর কয়েক জন বন্ধুকে নিয়ে তাপসের বাড়িতে চড়াও হন বলে অভিযোগ। দাবি করেন, রিয়াকে তাঁর সঙ্গে ফিরে যেতে হবে। কিন্তু ওই তরুণী তাতে রাজি না হলে রেগে গিয়ে রিয়া ও তাপসকে মারধর করেন শিবু ও তাঁর সঙ্গীরা। অভিযোগ, সে সময়েও তাপসকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন শিবু। রবিবার রিয়া বলেন, ‘‘বিয়ের পর থেকে মারধর করত শিবু। খেতে পর্যন্ত দিত না। সন্তান হওয়ার পরেও একই রকম চলতে থাকায় ওই সম্পর্ক ভেঙে তাপসকে বিয়ে করেছিলাম।’’
রিয়া জানান, শনিবার রাত ৯টার পরেও তাপস বাড়ি না ফেরায় চিন্তায় ছিলেন তিনি। ওই তরুণী বলেন, ‘‘ওঁর ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে ফোন করি। ও শুধু বলে, খুব মেরেছে, চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছি না। এর পরেই ফোন কেটে যায়। এর পরেই শিবু ফোন করে।’’
সূত্রের খবর, রিয়ার চেঁচামেচিতে স্থানীয়েরা সেখানে জড়ো হন। যে জায়গায় তাপসকে ফেলে রেখেছেন বলে ফোনে জানিয়েছিলেন শিবু, সকলে মিলে সেখানে যান। বেলঘরিয়ায় গিয়ে দেখা যায়, সিসিআর সেতুর কাছে রেললাইনের ধারের জঙ্গলে কুপিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে তাপসকে। খবর পেয়ে বরাহনগর ও বেলঘরিয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। তবে রেললাইনের ধারে হওয়ায় মৃতদেহটি জিআরপি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বেলঘরিয়া জিআরপি।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, তাপস ওই সময়ে রেললাইনের ধার দিয়ে ফিরবেন সে কথা জানতেন শিবু। তাই শাগরেদদের নিয়ে কাছাকাছি অপেক্ষা করছিলেন। তাপসকে পেয়ে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয় তাঁকে। তাপসের মা লক্ষ্মী সাহা এ দিন কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘‘শিবু বলেছিল ছেলেকে শেষ করে দেবে। এর শাস্তি চাই।’’