‘নুড ভিডিয়ো’র ফাঁদে ফেলে প্রতারণার অভিযোগ সামনে আসছে প্রায়ই। প্রতীকী ছবি
তাঁর অভ্যাস, শৌচাগারে মোবাইল নিয়ে যাওয়া। সেই কারণেই প্রতারণার ফাঁদে পড়লেন এক ব্যক্তি। হঠাৎ আসা ভিডিয়ো কল ধরে ফেলায় তাঁর স্ক্রিনে চালিয়ে দেওয়া হয় নগ্ন মহিলার ভিডিয়ো। কলটি কেটে দিলেও শুরু হয় হুমকি দেওয়া। এ ভাবেই হাতিয়ে নেওয়া হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা!
‘নুড ভিডিয়ো’র ফাঁদে ফেলে প্রতারণার অভিযোগ সামনে আসছে প্রায়ই। জেলায় জেলায় এ নিয়ে সতর্কতার প্রচার চালাচ্ছে পুলিশ। লালবাজারের তরফেও একাধিক বার নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছে, এমন ভিডিয়ো কল বা ফোন এলে ভয় না পেয়ে দ্রুত তাদের জানাতে। টাকা দেওয়া তো নয়ই, বরং ওই নম্বরটি লালবাজারের সাইবার শাখায় পাঠাতেও বলা হচ্ছে। যাতে ওই নম্বর থেকে আর ফাঁদ পাতা না যায়। অভিযোগ, তবু হুঁশ নেই অনেকেরই।
সালকিয়ার বাসিন্দা বছর একান্নের ওই প্রৌঢ় একটি সংস্থায় চাকরি করেন। গত ১৩ অগস্ট তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ আসে। যে অ্যাকাউন্ট থেকে মেসেজটি এসেছিল, সেটির উপরে এক তরুণীর ছবি দেওয়া ছিল। তাঁর দাবি, মেসেজ পাঠিয়ে জানতে চাওয়া হয়, তিনি কখন বাড়ি ফিরছেন। অপরিচিত নম্বর দেখে তিনি জানতে চান, সেই নম্বরটি কার। মেসেজ না এলেও বেশ কয়েক বার ভিডিয়ো কল আসে। তিনি সেগুলি ধরেননি। বাড়ি ফিরে রাত ৯টা ৪০ মিনিট নাগাদ শৌচাগারে যখন যান, তখন ফের ভিডিয়ো কল এলে ধরেন তিনি।
প্রৌঢ়ের অভিযোগ, ‘‘কলটি ধরতেই কয়েক জন মহিলাকে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে শোনা যায়। কিন্তু কাউকে দেখা যায়নি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই স্ক্রিনে ফুটে ওঠে নগ্ন মহিলার ভিডিয়ো। সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে দিই।’’ এর পরে আর কিছু হয়নি। ১৫ অগস্ট তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। এক ব্যক্তি সিবিআই আধিকারিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে জানায়, দিল্লির এক থানায় তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রৌঢ় বলেন, ‘‘শুনে ভয় পেয়ে যাই। হোয়াটসঅ্যাপে ওই ব্যক্তি সিবিআইয়ের পরিচয়পত্র পাঠায়। ব্যাপারটি সত্যি বলে মনে হয়েছিল। কী ভাবে বিষয়টি মেটানো যায়, জানতে চাইতেই ওই ব্যক্তি একটি ফোন নম্বর দিয়ে জানায়, এটি ইউটিউব হেল্পলাইন নম্বর। সেখানেই আমার ভিডিয়ো জমা আছে। ফোন করে বললেই ভিডিয়োটি মুছে দেওয়া হবে। সেই নম্বরে ফোন করতে আমার থেকে দু’দফায় ৩০ হাজার টাকা নিয়ে নেওয়া হয়।’’
এর পরেও টাকা চাইতে থাকায় বৃহস্পতিবার পুলিশের দ্বারস্থ হন প্রৌঢ়। হাওড়া সিটি পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখায় মামলা রুজু হয়। তদন্তের পাশাপাশি এই ঘটনাকে উদাহরণ করে সচেতনতার প্রচার চালাতে চাইছে হাওড়া সিটি পুলিশ। সেখানকার এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘বাস্তব উদাহরণ দিলে হয়তো অনেকের কাছে পরিষ্কার হবে, কী ভাবে প্রতারণা হয়। এর পরেও যদি পুলিশে না এসে কেউ টাকা দেন, কিছু বলার নেই।’’