দক্ষিণ দমদমে এ ভাবেই পাশের বহুতলের গায়ে হেলে পড়েছে ছ’তলা বহুতল। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
দু’টি বহুতলের মাঝে ব্যবধান এতটাই কমে এসেছে যে, দু’টি বাড়ির কার্নিসের মধ্যে আটকে রয়েছে প্লাস্টিকের বোতল। মঙ্গলবার এমন ছবিই দেখা গেল দক্ষিণ দমদম পুরসভার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়।
কলকাতায় সম্প্রতি একের পর এক হেলে পড়া বহুতলের সন্ধান মিলেছে। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন দক্ষিণ দমদমের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণদাঁড়ি এলাকা। সেখানে ২৬ নম্বর রেলগেটের কাছে একটি ছ’তলা ও একটি চারতলা বহুতলের মাঝের ব্যবধান ক্রমশ কমেছে। কারণ, ছ’তলা বহুতলটি ক্রমশ হেলে পড়েছে চারতলা বাড়িটির দিকে। এই ঘটনায় আবাসিক ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
যদিও দক্ষিণ দমদম পুরসভার তরফে দাবি করা হয়েছে, ওই বহুতলটি অনেক দিন আগে থেকেই ওই ভাবে হেলে রয়েছে। পুরসভা আগে এক বার নোটিস দিয়ে বাসিন্দাদের সতর্কও করেছিল। তার পরেও অবশ্য ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ওই বহুতলে বসবাস করছেন আবাসিকেরা। কারণ, তাঁদের কথায়, ‘‘সরে যেতে বললেই তো যাওয়া সম্ভব নয়। তাই ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছি।’’
তবে প্রশ্ন উঠছে, বহুতলটি আগেই হেলে গিয়ে থাকলে কেন এত দিন কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ করেনি পুরসভা? এর কোনও সদুত্তর মেলেনি। স্থানীয় বিধায়ক তথা দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু জানান, বছর দুয়েক আগেই ওই বহুতলটির এক দিক বসে গিয়েছিল। সেই সময়ে পুরসভা নোটিসও পাঠিয়েছিল। তাই এই বিষয়ে তারাই বলতে পারবে। যদিও এই ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়েছে আবাসিক ও স্থানীয়দের একাংশের মধ্যে। তাঁদের কথায়, ‘‘এলাকায় এই একটি নয়, আরও কয়েকটি বহুতলের অবস্থা খতিয়ে দেখা দরকার। কিন্তু পুরসভার তরফে কোনও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।’’ তবে পুরসভার নোটিস বা সতর্ক করার দাবি প্রসঙ্গে বাসিন্দাদের নির্দিষ্ট উত্তর মেলেনি। কিন্তু কেন এ ভাবে হেলে পড়েছে বহুতলটি, সেই বিষয়ে অবশ্য নানা মত রয়েছে। কারও মতে, মাটি বসে গিয়ে বহুতলের একাংশ হেলে গিয়েছে। আবার নির্মাণগত ত্রুটি রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকে।
যে বহুতল নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, সেই জমিতে বাস করতেন নির্মলা সাউ এবং তাঁর পরিবার। নির্মলা এ দিন সংবাদমাধ্যমকে জানান, তাঁদের বাড়ির অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় তা প্রোমোটারকে দেওয়া হয়েছিল। সেই বাড়ি ভেঙে কয়েক বছর আগে এই বহুতলটি তৈরি হলেও পরে তা হেলে যায়। যা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তাঁরাও।
এই ঘটনায় পুরসভার ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ উঠলেও তা খারিজ করেছেন স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি মায়া মাইতি। তাঁর মতে, এটি নতুন ঘটনা নয়। তিনি আগেই পুরসভায় অভিযোগ করেছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে পুরসভা নোটিস পাঠিয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক করেছিল। দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারপার্সন কস্তুরী চৌধুরী জানান, বিষয়টি তাঁদের নজরে এসেছে। পুর ইঞ্জিনিয়ারেরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় মতামত দেবেন। সেই অনুসারে পুরসভা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে।