মনোরোগী ছেলের হাতে খুন বাবা-মা

ঠেলা দিতেই খুলে গিয়েছিল ওই বাড়ির একটি ঘরের ভেজানো দরজা। তার পরে রবিবাবুরা যা দেখলেন, তাতে শিউরে উঠলেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:০০
Share:

শেফালি সাহা ও সুনীল সাহা

প্রায় শেষ রাত। একটানা গোঙানি আর আধো চিৎকারে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল প্রৌঢ় রবি বিশ্বাসের। একটু ধাতস্থ হয়ে বুঝতে পারেন, আওয়াজটা আসছে পাশের বাড়ি থেকে। একা বেরোনোর সাহস হয়নি তাঁর। ডেকে নেন আরও এক পড়শিকে। পাশের বাড়ির সদর দরজা ছিল হাট করে খোলা। তখন আর কোনও গোঙানির শব্দ নেই। শুধু মাঝেমধ্যে আক্রোশের হুঙ্কার।

Advertisement

ঠেলা দিতেই খুলে গিয়েছিল ওই বাড়ির একটি ঘরের ভেজানো দরজা। তার পরে রবিবাবুরা যা দেখলেন, তাতে শিউরে উঠলেন তাঁরা। বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন তাঁদেরই পড়শি এক বৃদ্ধ দম্পতি। ঘরের এক কোণে দরজার খিল হাতে দাঁড়িয়ে দম্পতির একমাত্র ছেলে। সম্বিৎ ফিরতেই তাঁদের চিৎকারে জড়ো হন আশপাশের লোকজন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, মৃত্যু হয়েছে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দু’জনেরই।

মঙ্গলবার রাতের এই ঘটনার স্থল ঘোলা থানার নাটাগড় কৃষ্ণপুর বাই লেন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন সুনীল সাহা (৬৫) এবং তাঁর স্ত্রী শেফালি সাহা (৬০)। তাঁদের ছেলে, বছর ছত্রিশের অমিত সাহাকে তুলে দেওয়া হয়েছে পুলিশের হাতে। ব্যারাকপুর আদালত ওই যুবককে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে। সুনীলবাবুর পরিবার সূত্রে পুলিশ জেনেছে, অমিত দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তা নিয়ে মাঝেমধ্যেই বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝামেলা হত তাঁর। মঙ্গলবার রাতেও গোলমাল হয়েছিল। তার জেরেই এই ঘটনা বলে সন্দেহ তদন্তকারীদের।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সুনীলবাবু স্থানীয় একটি হোসিয়ারি কারখানায় কাজ করতেন। অমিতের বিভিন্ন দোকানে চানাচুর সরবরাহের ব্যবসা ছিল। বছর চারেক আগে স্থানীয় এক তরুণীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল অমিতের। কিন্তু, গোলমালের কারণে বিয়ের কিছু দিন পরেই তাঁর স্ত্রী অমিতের বাড়ি ছেড়ে চলে যান। বছর দুয়েক বাদে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

পড়শিরা জানিয়েছেন, আচমকাই উত্তেজিত হয়ে পড়তেন অমিত। চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করতেন। জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলতেন। পুলিশ জানতে পেরেছে, গত কয়েক দিন যাবৎ অস্থিরতা বেড়েছিল ওই যুবকের। সুনীলবাবুরা বারবার ছেলেকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু রাজি হননি অমিত। মঙ্গলবার রাতে এই নিয়ে তাঁদের গোলমাল চরমে ওঠে।

রবিবাবু জানান, ওই রাতে আড়াইটে নাগাদ হঠাৎ তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। তখনই চিৎকার এবং গোঙানির শব্দ কানে আসে। রবিবাবুরা যখন অমিতের বাড়িতে ঢোকেন, তখনও তাঁর হাতে ছিল রক্তমাখা খিলটি। বিন্দুমাত্র আতঙ্ক বা উদ্বেগের চিহ্ন ছিল না তাঁর চোখেমুখে। রবিবাবু চিৎকার শুরু করলে পাল্টা হুঙ্কার শুরু করে অমিতও। তার পরে আচমকাই শান্ত হয়ে যায়। প্রতিবেশীরা ছুটে এসে ওই যুবককে আটকে রাখেন।

পুলিশ জানিয়েছে, অমিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে খুনের কারণ বিশদে জানার চেষ্টা করা হবে। পরামর্শ নেওয়া হবে মনোবিদ এবং মনোরোগ চিকিৎসকদেরও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement