অনির্বাণ ভট্টাচার্য।
হরিদেবপুরে একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রের দোতলার ছাদ থেকে পড়ে এক যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হল। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার সকাল দশটা নাগাদ। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের নাম অনির্বাণ ভট্টাচার্য (৩১)। তিনি ওই এলাকারই বাসিন্দা। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত তিন মাস ধরে ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রেই থাকছিলেন অনির্বাণ।
অনির্বাণের পরিবার জানিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ওই নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে তাদের কাছে একটি ফোন আসে। ফোনে জানানো হয়, কেন্দ্রের দোতলার ছাদের রেলিং টপকে ঝাঁপ দিয়ে পাশের রাস্তায় পড়ে গিয়েছেন অনির্বাণ। তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরিজনেরা যেন সেখানেই চলে আসেন। অনির্বাণের আত্মীয়-পরিজনেরা সেখানে পৌঁছে দেখেন, গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন ওই যুবক। এর কিছু ক্ষণ পরেই তাঁর মৃত্যু হয়।
অনির্বাণের মৃত্যুতে নেশামুক্তি কেন্দ্রটির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার কথা ভাবছে তাঁর পরিবার। হাসপাতালে উপস্থিত আত্মীয়েরা জানান, ওই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রবিবার রাত পর্যন্ত থানায় অভিযোগ জানানো হয়নি। তবে তাঁরা শীঘ্রই হরিদেবপুর থানায় অভিযোগ জানাতে পারেন। মৃত্যু নিয়ে ধন্দ কোথায়? অনির্বাণের এক আত্মীয় তন্ময় দলুই বলছেন, ‘‘যে ভাবে দেহটি রাস্তায় পড়েছিল বলে জানতে পেরেছি, তাতে আমাদের অনুমান অনির্বাণ ছাদ থেকে ঝাঁপ দেননি। ওকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছে।’’ তন্ময়ের প্রশ্ন, ‘‘ওঁদের দেওয়া তথ্য ধরে নিলেও প্রশ্নটা থাকছেই, এক জন রোগীকে কী ভাবে একা ছাদে যেতে দেওয়া হল? অনির্বাণ যখন ঝাঁপ মারতে গেল, তখন তাকে কেউ আটকালেন না কেন? ওই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ আনতে পারি আমরা।’’
যদিও ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের দাবি, অনির্বাণ নিজেই ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন। কেন্দ্রের তরফে শাশ্বতী মণ্ডল জানান, প্রতিদিন সকালে কয়েক জন আবাসিককে ছাদে রোদ পোহানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সে ভাবেই এ দিন অনির্বাণকেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শাশ্বতীর দাবি, ‘‘অনির্বাণের সঙ্গে এক জন সহায়ক ছিলেন। কিন্তু তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই যুবক ছাদে উঠে দৌড়ে রেলিং টপকে ঝাঁপ দেন।’’ শাশ্বতীর আরও দাবি, ‘‘এই ঘটনায় কর্তব্যে গাফিলতির কোনও প্রশ্নই নেই। অনির্বাণ আমাদের নেশামুক্তি কেন্দ্রে খুব ভাল ভাবেই থাকছিলেন এবং তাঁর
উন্নতিও হচ্ছিল। গত সপ্তাহে অনির্বাণের বাবা ছেলের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তাঁদের দু’জনের মধ্যে কথাও হয়।’’
বছর কয়েক আগে বালির একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়াশোনা করতেন অনির্বাণ। বাবা সঞ্জয় ভট্টাচার্য রেলের প্রাক্তন কর্মী। একমাত্র ছেলের মৃত্যুর খবরে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই তিনি। তন্ময় জানান, অনির্বাণ সুস্থ হচ্ছিলেন। তবু কেন এ রকম ঘটল, সেটাই তাঁদের কাছে ধোঁয়াশা।