প্রতীকী ছবি।
করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন আদালতে চাকরি দেওয়ার নামে চলা একটি প্রতারণা-চক্রের সদস্যকে বমাল ধরলেন এক আইনজীবী। সোমবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের মূল ভবনের দোতলায়, চার নম্বর আদালতের সামনে ওই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত প্রতারক ও চাকরির নিয়োগপত্র-সহ এক প্রতারিতকেও হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশের হাতে তুলে দেন রানা মুখোপাধ্যায় নামে হাইকোর্টের ওই সরকারি আইনজীবী।
পুলিশ জানায়, ধৃত প্রতারকের নাম প্রীতমকুমার হাতি। তার বাড়ি কেষ্টপুরের কমলা পার্কে। প্রতারিত যুবকের নাম আলমগির মণ্ডল। তিনি নদিয়ার নাকাশিপাড়ার বান্দাখোলার বাসিন্দা। প্রীতমের কাছ থেকে একটি জাল হাজিরা খাতা এবং আলমগিরের কাছ থেকে একটি জাল নিয়োগপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
রানাবাবু জানান, আদালত চত্বরে নদিয়ার ওই যুবককে ঘোরাফেরা করতে দেখেই তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি ওই যুবকের কাছে জানতে চান, আদালত বন্ধ থাকা সত্ত্বেও তিনি কী করছেন? ওই যুবক জানান, তিনি আদালতের কর্মী। হাজিরা খাতায় সই করার জন্য অপেক্ষা করছেন। ওই যুবক রানাবাবুকে একটি নিয়োগপত্র দেখান। তাতে চলতি বছরের ২ মার্চ তারিখ দিয়ে ‘রেজিস্ট্রার জেনারেল’ কথাটির উল্লেখ রয়েছে।
হাইকোর্ট প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রীতমকে দূর থেকে দেখিয়ে দেন আলমগির। রানাবাবু প্রীতমের কাছে যাওয়ার আগেই তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা দুই যুবক পালিয়ে যায়। রানাবাবু এ দিন জানান, প্রীতমের কাছ থেকে জাল হাজিরা খাতা কেড়ে নিয়ে তিনি দেখেন, সেখানে ৬০০ থেকে ৭০০ জনের নাম রয়েছে। তাতে লেখা আছে আলমগিরের নামও। আলমগির রানাবাবুকে জানান, আদালতে চাকরি দেওয়ার নাম করে তাঁর কাছ থেকে ন’লক্ষ টাকা চাওয়া হয়েছিল। তিনি গ্রামের জমি বিক্রি করে প্রতারক-চক্রের দুই সদস্যকে ইতিমধ্যেই সাড়ে আট লক্ষ টাকা দিয়ে দিয়েছেন।
হাইকোর্ট প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রীতম ও আলমগিরকে নিয়ে আইনজীবী রেজিস্ট্রার জেনারেল রাই চট্টোপাধ্যায়ের কাছে যান। রেজিস্ট্রার জেনারেল পুলিশ ডেকে সবাইকে নিয়ে যান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। সূত্রের খবর, বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় প্রীতমের কাছে জানতে চান তিনি কে এবং ওই চক্রে আর কে কে রয়েছে। প্রীতম জানান, তিনি এক জন আইনজীবী। ব্যাঙ্কশাল আদালতে কাজ করেন। কিন্তু নিজের দাবির সমর্থনে কোনও প্রমাণ ওই প্রতারক দেখাতে পারেননি বলে পুলিশ জানায়।
বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেন, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে। রেজিস্ট্রার জেনারেলের নির্দেশে হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশের কাছে প্রীতম-সহ অজ্ঞাতপরিচয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন রানাবাবু।