জনপ্রতিনিধির ঘনিষ্ঠেরা অভিযোগকারীর স্ত্রী ও মেয়েকে প্রকাশ্যেই মারধর ও হেনস্থা করেছেন বলেও দাবি। প্রতীকী ছবি।
বাড়ির কার্যত গা ঘেঁষেই গড়ে উঠছে বহুতল। বাড়ির মালিকের দাবি, উপযুক্ত ছাড় না দিয়েই নির্মাণের কাজ হচ্ছে। পুলিশ কিংবা পুরসভা গুরুত্ব দিচ্ছে না। অভিযোগ, জনপ্রতিনিধি উল্টে তাঁর বাড়িটিই বেআইনি বলে হুমকি দিয়েছেন। জনপ্রতিনিধির ঘনিষ্ঠেরা অভিযোগকারীর স্ত্রী ও মেয়েকে প্রকাশ্যেই মারধর ও হেনস্থা করেছেন বলেও দাবি। যদিও অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধি এবং প্রোমোটার দু’জনেরই পাল্টা দাবি, অভিযোগকারীই তাঁদের হেনস্থা করছেন।
ঘটনাটি বিধাননগর পুরসভার অধীন ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের। রাজারহাট-গোপালপুর বিধানসভার অধীনওই ওয়ার্ডের পশ্চিম প্রফুল্লকাননের বাসিন্দা দেবাশিস সরকারের দাবি, গত জুন থেকে তাঁর বাড়ির গা ঘেঁষে শুরু হয়েছে একটি বহুতলনির্মাণের প্রক্রিয়া।
দেবাশিসের অভিযোগ, ‘‘প্রথমে যখন জনপ্রতিনিধিকে ঘটনাটি জানাই, তিনি পাল্টা দাবি করেন যে আমাদের তেতলা বাড়িটিই বেআইনি। ওই বহুতলটি ঠিক ভাবেই গড়ে উঠছে। আমার বাড়িটি ভেঙে দেওয়া হবে।’’
এর পরে বাগুইআটি থানা এবং বিধাননগর পুরসভাতেও চিঠি দেন দেবাশিস। কিন্তু তাঁর বক্তব্য,‘‘পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। পুরসভা দু’টি মাত্র শুনানি করেছে। এক বার পুরসভার এক আধিকারিকের ঘরে আমাদের ডাকা হয়। সেখানে আধিকারিকেরা প্রোমোটার ও জনপ্রতিনিধির পক্ষ নিয়েই কথা বলেন। আমাদের কথা শোনাই হয়নি।’’
উল্লেখ্য, বেআইনি প্রোমোটিং নিয়ে অজস্র অভিযোগ রয়েছে রাজারহাট-গোপালপুর বিধানসভা এলাকায়। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডেরওই বহুতলটির কাজ বন্ধ রাখার জন্য গত নভেম্বরে পুরসভা এক বার নোটিসও দিয়েছিল। কিছু দিনকাজ বন্ধ থাকার পরে ফের কাজ শুরুও হয়ে যায় বলে দাবি।
ওই নোটিস প্রসঙ্গে প্রোমোটার মলয় সাহার অবশ্য দাবি, ‘‘পুরসভা নোটিস দেওয়ার পরে ওইব্যক্তির বাড়ির দিকে যে অংশটি বাড়তি হিসেবে ঢুকে গিয়েছিল, সেটাসম্পূর্ণ ভেঙে দিয়েছি। তার পরে পুরসভা আমাকে কাজেরঅনুমতি দিয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ওই ব্যক্তি আমার কাছ থেকে টাকা চেয়েছিলেন। সে সব মানতে না চাওয়ায় আমাকে হেনস্থা করছেন।’’ আদালতের থেকে নির্মাণস্থলেরচার দিকে ১৪৪ ধারা জারি করিয়ে তিনি কাজ করছেন বলেই জানান প্রোমোটার মলয়।
দেবাশিসের অভিযোগ, ‘‘বাড়ির গায়ে গড়ে ওঠা ওই বহুতল তৈরির পিছনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরপ্রশ্রয় রয়েছে। পুরসভায় যে দিন আমাদের ডেকে পাঠানো হয়, সে দিন আমাদের কথা না শোনায়আমার স্ত্রী ও মেয়ে চেঁচামেচি করেন। গত দোলের দিন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি আমাদের স্থানীয় একটি মন্দির কমিটির অফিসে ডেকে পাঠান। সেখান তাঁর সামনেই আমার স্ত্রী ও মেয়েকে তাঁর পরিচিত মহিলারা মারধর করেন।’’
যদিও সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন জনপ্রতিনিধি আশুতোষ নন্দী। পুরসভার দিকে দায় ঠেলেতিনি বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তিকে আমি চিঠি দিতে বলেছিলাম। উনি তা দেননি। এ সব ক্ষেত্রে সবটাই পুরসভার দেখার কথা। বাড়ির নকশা অনুমোদন তো জনপ্রতিনিধিরা করেন না। ওই ব্যক্তির বাড়ি যে জমির উপরে, সেটির চরিত্র নিয়ে কিছু প্রশ্ন আছে। তবে তাঁর বাড়ি বেআইনি আমি বলিনি। ওঁর স্ত্রী ও মেয়েকে মারধরের অভিযোগও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’’
এ প্রসঙ্গে বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আপনার কাছেই শুনলাম। যদি তাঁকেশুনানিতে ডাকা হয়ে থাকে, খোঁজ নিয়ে দেখব কী সিদ্ধান্ত হচ্ছে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’