এই রেস্তরাঁ ঘিরেই উঠেছে প্রশ্ন। নিজস্ব চিত্র
সরকারি সম্পত্তি দখল করে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে রেস্তরাঁ চালানো হচ্ছে। ই এম বাইপাস সংলগ্ন পাটুলি ভাসমান বাজারের কাছের একটি রেস্তরাঁ সম্পর্কে এমনই অভিযোগ উঠল।
মৎস্য দফতর সূত্রের খবর, পাটুলি উপনগরীর বিভিন্ন জলাশয় ওই দফতরের অধীনে। অভিযোগ, পাটুলি ভাসমান বাজার লাগোয়া প্রায় দু’কাঠা জায়গায় একটি রেস্তরাঁ দীর্ঘদিন ধরে চলছে। মৎস্য দফতরের অধীন মৎস্যজীবীদের নিয়ে তৈরি সমবায় সমিতির সঙ্গে রেস্তরাঁর লিজ় শেষ হয়েছে আড়াই বছর আগে। তা সত্ত্বেও প্রভাব খাটিয়ে সেটি চালানোর অভিযোগ উঠেছে বারুইপুরের বাসিন্দা এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। দফতরের এক কর্তার অভিযোগ, ‘‘লিখিত ভাবে চুক্তিতে ওই ব্যক্তির নাম থাকলেও রেস্তরাঁ জবরদখলের পিছনে বড় কারও প্রভাব রয়েছে। কারণ পাটুলি থানায় লিখিত অভিযোগ করা সত্ত্বেও পুলিশ এফআইআর নেয়নি।’’
মৎস্য দফতর সূত্রের খবর, মাছের উৎপাদন বাড়াতে ১৯৮৮ সালের পর কেএমডিএ-র অধীনে থাকা বাইপাস লাগোয়া বিভিন্ন জলাশয় দফতরের অধীনে আসে। সেই মতো পাটুলিতে ৩৭টি জলাশয় দেখভালে ‘বৃজি-পাটুলি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি’ গঠিত হয়। ২০১১ সালে সমিতির তৎকালীন চেয়ারম্যান তথা ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন বাম কাউন্সিলর উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বারুইপুরের মলয় বসুকে মাসিক কুড়ি হাজার টাকায় রেস্তরাঁটি ভাড়া দেন। ওই চুক্তি ২০১৭ সালের জুলাইয়ে শেষ হয়েছে বলে দফতর জানিয়েছে। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে মলয়বাবুর কাছে সমবায় সমিতির বকেয়া প্রায় ন’লক্ষ টাকা। আমরা বারবার টাকা দিতে নোটিস পাঠালেও লাভ হচ্ছে না। তিন বার ওখান থেকে সরে যাওয়ার বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েও কিছু হয়নি।’’
মৎস্য দফতর রেস্তরাঁটির নামকরণ করেছিল ‘মাছরাঙা’। ‘বৃজি পাটুলি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি’র মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক কৃষ্ণেন মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘দুর্গাপুজোর আগে ওই রেস্তরাঁটিকে মাছ বিক্রির কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করার জন্য নানা সরকারি পোস্টার দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে সেই পোস্টারও সরিয়ে ফেলা হয়েছে।’’
সমবায় সমিতির পূর্বতন চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বর্তমানে সমবায়ের সদস্য। তিনি বলেন, ‘‘লিজ় শেষ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও রেস্তরাঁ চালিয়ে যাওয়া অনৈতিক। অবিলম্বে ওই ব্যক্তির সরে যাওয়া উচিত।’’ রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘অন্যায় ভাবে সরকারি জায়গা দখল করা হয়েছে। দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেবে দফতর।’’
আর যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই মলয়বাবু বলেন, ‘‘ওই রেস্তরাঁ সংস্কার করতে দু’লক্ষ টাকা খরচ করেছি। এ ছাড়াও সমবায়ের কাছে আমার তিন লক্ষ টাকা জমা রয়েছে। ওই টাকা পেলে রেস্তরাঁ ছেড়ে দেব।’’ প্রভাব খাটানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। যা শুনে কৃষ্ণেনবাবুর প্রশ্ন, ‘‘সরকারি অনুমতি না নিয়ে কেন রেস্তরাঁর সংস্কার করতে গেলেন? সরকারি জমিতে অনুমতি ছাড়া নির্মাণকাজ করাটা তো বেআইনি!’’
পুলিশের এফআইআর না নেওয়া প্রসঙ্গে ডিসি (এসএসডি) সুদীপ সরকার বলেন, ‘‘মৎস্যজীবীদের অভিযোগ কেন এফআইআর হিসাবে গৃহীত হয়নি, তা খতিয়ে দেখছি।’’