বাইপাস অস্ত্রোপচারের পরে বাড়ি ফিরে এলেও, আচমকাই শুরু হয়েছিল বুকে ব্যথা। প্রতীকী চিত্র।
বাইপাস অস্ত্রোপচারের পরে বাড়ি ফিরে এলেও, আচমকাই শুরু হয়েছিল বুকে ব্যথা। কেন এমন হচ্ছে, তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না পরিজনেরা। শেষে প্রৌঢ় রোগীর কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, বুকের ভিতরে একটি বস্তু আটকে রয়েছে। যেটি অস্ত্রোপচারের সময়েই ‘ভুল’ করে থেকে গিয়েছিল তাঁর শরীরে!
অবশেষে এসএসকেএম হাসপাতালে ওই প্রৌঢ়কে ভর্তি করে ফের অস্ত্রোপচার করা হয়। তাতে তাঁর বুকের ভিতর থেকে গজ বার করা হয়েছে। কিন্তু বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালের কী ভাবে এমন ‘ভুল’ হল, তার সদুত্তর চেয়ে ভবানীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন হাওড়ার ধাড়সার বাসিন্দা উত্তম কুণ্ডুর ছেলে সৌমেন কুণ্ডু। তাঁর কথায়, ‘‘আশা করেছিলাম, ডাক্তারবাবু অন্তত আমার প্রশ্নের সদুত্তর দেবেন। কিন্তু তিনি তা দিতে পারেননি। প্রথমে তো এই গজ বার করার জন্য আমাদের বলা হয়েছিল, বাবাকে খরচ করে ভর্তি করানোর জন্য।’’
সৌমেন জানাচ্ছেন, গত পয়লা মার্চ মেডিকা হাসপাতালের কার্ডিয়োথোরাসিক অ্যান্ড ভাস্কুলার সার্জারি (সিটিভিএস) বিভাগে চিকিৎসক কুণাল সরকারের অধীনে ভর্তি করানো হয় উত্তমকে। ৩ মার্চ ৬৮ বছরের ওই প্রৌঢ়ের বাইপাস অস্ত্রোপচার করা হয়। ১১ মার্চ তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়। সৌমেন বলেন, ‘‘এক সপ্তাহ পরে বাবাকে আবার ডাক্তার দেখানোর দিন ছিল। কিন্তু তার আগে থেকেই বাবার বুকে যন্ত্রণা শুরু হয়। চেক আপেআসার আগে এক্স-রে করানো হলে সেখানেই আমাকে সতর্ক করা হয়, বুকে কিছু একটা আটকে আছে।’’
২১ মার্চ ইএম বাইপাসের ধারে ওই বেসরকারি হাসপাতালে গেলে অন্য এক চিকিৎসক উত্তমকে পরীক্ষা করে সিটি স্ক্যান করার পরামর্শ দেন। সেই রিপোর্টেও দেখা যায়, প্রৌঢ়ের বুকের বাঁ দিকে একটি জিনিস আটকে রয়েছে। সৌমেনের দাবি, তাঁর বাবাকে ফের ভর্তি করে স্বাস্থ্যসাথী বা অন্য কোনও বিমার মাধ্যমে অস্ত্রোপচারের জন্য পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
সৌমেনের কথায়, ‘‘কী ভাবে এমন ভুল হল এবং কেন হাসপাতালের সেই ভুলের খেসারত আমাদের দিতে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলি। কিন্তু কোনও সদুত্তর মেলেনি। তখন ঠিক করি, ওই হাসপাতালে আর অস্ত্রোপচার করাব না।’’
এর পরে গত ১০ এপ্রিল পিজির সিটিভিএস বিভাগে ভর্তি করা হয় উত্তমকে। কিন্তু ১১ ও ১২ এপ্রিল পর পর দু’দিন অস্ত্রোপচারের সময় স্থির হলেও তা বাতিল করেন চিকিৎসকেরা। কারণ, বিষয়টি ‘মেডিকো-লিগ্যাল’ হওয়ার কারণে সৌমেনকে বলা হয় আগে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করতে। সেই মতো ভবানীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই যুবক। শেষে ১৪ এপ্রিল উত্তমের দ্বিতীয় বার অস্ত্রোপচার করে গজ বার করা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি ভিডিয়ো রেকর্ডিং করা হয়।
যদিও কুণালের বক্তব্য, ‘‘অস্ত্রোপচারের পরে ওই রোগীর বুকে সুতোর মতো কিছু রয়ে গিয়েছে, সেটা আমরাই চেক আপের সময়ে চিহ্নিত করি। আমাদের তরফে জানানো হয়, ঘটনাটি অনভিপ্রেত। সেই ভুলের জন্য ফের অস্ত্রোপচারের সব দায়িত্বও নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু রোগীর পরিজনেরা তাতে রাজি হননি।’’ সৌমেনের অবশ্য দাবি, ‘‘পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে বিনা খরচে ডাক্তারবাবুরা অস্ত্রোপচারের কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমরা বিশ্বাস রাখতে পারিনি।’’