মগ্ন: ফুটবল খেলছে দক্ষিণ কলকাতার চতুর্দশ চক্রের অধীনে থাকা বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।
পায়ে জুতো আর রঙিন জার্সি ওদের বড় হয়ে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। স্কুলে এসে ফুটবলের নেশা কচিকাঁচাদের এতটাই পেয়ে বসেছে যে স্কুল কামাই করতেই তাদের ইচ্ছা করে না এখন।
সোমবার বিকেলে রঙিন জার্সি, পায়ে জুতো পরে বাঁশদ্রোণী চাকদা মডেল স্কুলের মাঠে খেলেছিল কয়েকটি প্রাথমিক স্কুলের কচিকাঁচারা। স্কুলে ফুটবল প্রশিক্ষণের পরে শুরু হয়েছে ফুটবল প্রতিযোগিতার লিগের খেলা। আগামী সোমবার লিগের খেলার পরে চারটি দল সেমিফাইনালে উঠবে। সেখান থেকে সে দিনই দু’টি দল ফাইনাল খেলবে।প্রতিযোগিতায় রয়েছে পুরস্কারও। এই প্রতিযোগিতা আর প্রশিক্ষণ ঘিরেই অনেক কচিকাঁচা স্বপ্ন দেখছে ফুটবলার হওয়ার।
প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে পড়াশোনার পাশাপাশি এই ভাবেই ফুটবল প্রশিক্ষণের উপরে জোর দিচ্ছে দক্ষিণ কলকাতার কয়েকটি স্কুল। কলকাতা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিস জানিয়েছে, কলকাতা জেলার চতুর্দশ চক্রের অধীনে থাকা বেশ কয়েকটি প্রাথমিক স্কুল ফুটবল প্রশিক্ষণ ও ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। যাদবপুর, বিজয়গড়, টালিগঞ্জ এলাকার প্রাথমিক স্কুলগুলি এই চতুর্দশ চক্রের আওতায় পড়ে। মূলত স্কুলের শিক্ষক এবং ওই চক্রের আধিকারিকদের উদ্যোগে যাদবপুর, বিজয়গড়, টালিগঞ্জের ৩০টি প্রাথমিক স্কুলে এই ফুটবল প্রশিক্ষণ ও ফুটবল প্রতিযোগিতা হচ্ছে। ওই চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সুপর্ণা চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘বেসরকারি স্কুলে ফুটবল প্রশিক্ষণের কথা শোনা যায়। কিন্তু সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ফুটবল প্রশিক্ষণ আগে হয়নি। এর ফলে এক দিকে যেমন পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবল খেলায় উৎসাহিত করা যাবে খুদেদের, তেমনই তাদের মধ্যে থেকে প্রতিভার সন্ধানও মিলতে পারে। এই প্রশিক্ষণ পুরোপুরি বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।’’
প্রাথমিক স্কুলগুলিতে খেলাধুলোর পাঠ্যক্রম থাকলেও খেলার শিক্ষক নেই। অভিযোগ, এর কারণে প্রাথমিকে খেলাধুলো বরাবরই উপেক্ষিত। সাধারণ শিক্ষকরাই খুদে পড়ুয়াদের খেলা ও যোগব্যায়াম শেখান। তবে ফুটবলের প্রশিক্ষণ সাধারণ শিক্ষকেরা দিতে পারবেন না। তাই ফুটবলের প্রশিক্ষকও আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুপর্ণা। তিনি জানান, ৩০টি স্কুল থেকে ১০টি দল তৈরি হয়েছে। কলকাতা জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিস থেকে জানা গিয়েছে, এই প্রশিক্ষণ এবং প্রতিযোগিতার খরচ বহন করছেন স্কুলের শিক্ষক এবং চতুর্দশ চক্রের আধিকারিকেরাই।
যে স্কুলের পড়ুয়ারা ফুটবল খেলছে, সেখানকার শিক্ষকেরা জানালেন ফুটবল প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার কথা শুনে বেশ কিছু পড়ুয়ার স্কুলে আসার উৎসাহ অনেক বেড়ে গিয়েছে। এই খুদেরা কেউ কেউ পাড়ার মাঠে ফুটবল খেললেও স্কুলে প্রথম বার জার্সি পরে খেলছে। এক প্রাথমিক শিক্ষক বলেন, ‘‘অনেক পড়ুয়ার কাছেই জার্সি-জুতো পরে ফুটবল খেলা স্বপ্নের মতো। হয়তো এখান থেকেই কয়েক জন পড়ুয়া ঠিক মতো প্রশিক্ষণ পেলে ফুটবল খেলেই অনেক দূর যেতে পারবে।’’