পলতা জল প্রকল্প লাগোয়া গঙ্গার ভাঙন যে গতিতে হচ্ছে, তাতে দ্রুত কাজ শেষ না করলে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।
গঙ্গার ভাঙন থেকে পলতা জল প্রকল্পকে বাঁচাতে ভূগর্ভে লোহার পাঁচিল (প্রযুক্তিগত পরিভাষায় যার নাম ইন্টারলকিং শিট পাইল) তোলার কাজ শুরু হয়েছে বছর পাঁচেক আগে। ২০২১ সালের মধ্যে ওই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা, লকডাউনের জন্য যে ভাবে ওই কাজ পিছিয়ে গিয়েছিল, তার জেরে আগামী এক বছরের মধ্যেও সেটি শেষ হবে কি না, সেই সংশয় রয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, পলতা জল প্রকল্প লাগোয়া গঙ্গার ভাঙন যে গতিতে হচ্ছে, তাতে দ্রুত কাজ শেষ না করলে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, গঙ্গার পাড়ের ধস নামায় বাম আমলে ইন্দিরা গান্ধী জল প্রকল্প বা পলতা জল প্রকল্প লাগোয়া গঙ্গাপাড়ের প্রায় দু’কিলোমিটার এলাকা ‘শিট পাইলিং’ পদ্ধতিতে বাঁধানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু আসল কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। এখনও মাত্র ৬০০ মিটার গঙ্গাপাড় বাঁধানোর কাজ শেষ হয়েছে। পুরসভার জল সরবরাহ দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে, করোনা পরবর্তী সময়ে চিন থেকে ইস্পাতের পাত আসতে দেরি হওয়ার কারণেই ওই কাজ আটকে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘করোনা পরবর্তী সময়ে চিন থেকে ইস্পাতের পাত এ দেশে আসতে সমস্যা হচ্ছে। তবে আশা করছি, আগামী এক বছরের মধ্যে ওই কাজ শেষ হয়ে যাবে।’’ যদিও এক কিলোমিটারেরও বেশি এলাকার কাজ এক বছরের মধ্যে কী ভাবে শেষ হবে, তা নিয়ে ঘোর সংশয়ে পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরাই।
শিট পাইলিং পদ্ধতিতে তৈরি দেওয়ালের গড় উচ্চতা ৩০ ফুট হওয়ার কথা। পুরো প্রকল্প বাবদ খরচ ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। ব্যারাকপুরে পলতা জল প্রকল্প এলাকার আশপাশে গঙ্গার গভীরতা বেশি হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে নদীপাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছিল। বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছিলেন, অবিলম্বে জল প্রকল্প এলাকার গঙ্গার পাড় রক্ষা না করলে পুরো প্রকল্পই গঙ্গার গর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই মতো জল প্রকল্পকে বাঁচাতে কাজ শুরু হয়। পুরসভার জল সরবরাহ দফতর সূত্রের খবর, পলতায় গঙ্গা থেকে জল তুলে পরিশোধন করে তা টালার জলাধারে পাঠানো হয়। পলতা জল প্রকল্প থেকে উত্তর, মধ্য ছাড়াও দক্ষিণ কলকাতার একাংশে জল সরবরাহ করা হয়। সেখানে রোজ পরিশোধন করা হয় প্রায় দু’কোটি ৬৫ লক্ষ গ্যালন জল। প্রায় ৪৮০ একর জায়গা জুড়ে থাকা পলতা জল প্রকল্প এলাকায় ৫৩টি জলাশয় রয়েছে। ওই সমস্ত জলাশয়ে নদী থেকে জল তুলে শোধন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, করোনা, লকডাউনের জন্য কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। তার জের এখনও চলছে। তবে নদীপাড় যে গতিতে ভাঙছে, তাতে কাজ দ্রুত শেষ না করলে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে বলে ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের অভিমত। পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘একটি বিশেষ সংস্থা কাজের তদারকিতে রয়েছে। সবটাই নজরদারিতে হচ্ছে। বাকি কাজ দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।’’