ব্যক্তিগত চেম্বারে বসেই হাসপাতালের ডিসচার্জ সার্টিফিকেট লেখা হয়েছে বলে অভিযোগ। তাতে কোভিড নেগেটিভ-ও লেখা হয়েছে হাতেই (চিহ্নিত)।
অভিযোগ ১: হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তিই হননি রোগী। অথচ, ওই হাসপাতালের ডিসচার্জ সার্টিফিকেট ব্যক্তিগত চেম্বারে বসেই লিখে দিয়েছেন চিকিৎসক।
অভিযোগ ২: সার্টিফিকেটে অন্য এক চিকিৎসকের অধীনে রোগী ভর্তি ছিলেন লেখা হয়েছে। সেই নামে কোনও চিকিৎসকই নেই ওই হাসপাতালে।
অভিযোগ ৩: করোনা পরীক্ষা করানোর নামে ৩১০০ টাকা নিয়ে শুধু মৌখিক রিপোর্ট দিয়েই কাজ সারতে চেয়েছিলেন চিকিৎসক। জানিয়েছিলেন, রোগী করোনা পজ়িটিভ।
অভিযোগ ৪: পরে হাতে লেখা ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে চিকিৎসক লেখেন, রোগী করোনা নেগেটিভ।
অমিত বিক্রম নামে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুলেছেন আলিপুরের বাসিন্দা, ঋষভ অধিকারী নামে বছর সাতাশের এক যুবক। অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, আদৌ কি তাঁর করোনা পরীক্ষা হয়েছিল?
ঋষভ জানিয়েছেন, গত ১০ জুলাই জ্বর নিয়ে তিনি আলিপুরে অমিতের ব্যক্তিগত চেম্বারে যান। ওষুধ খেয়েও সুস্থ না হওয়ায় ১৫ জুলাই ফের সেখানে যান তিনি। তখন ওই চিকিৎসক তাঁকে দামি কয়েকটি ইঞ্জেকশন দেন। ঋষভের দাবি, “সব ওষুধই চেম্বার থেকে কিনতে হত। ইঞ্জেকশন এবং বাকি সব মিলিয়ে প্রায় দশ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। যখন আমি প্রায় সুস্থ, তখন উনি করোনা পরীক্ষা করাতে বলেন। তার জন্য আরও ৩১০০ টাকা দিই।’’ ১৯ জুলাই অমিত নিজেই নমুনা সংগ্রহ করেন বলে রোগীর দাবি। কয়েক দিন পরেও রিপোর্ট না আসায় চিকিৎসককে ফোন করেন রোগীর বাড়ির লোকজন। ঋষভের অভিযোগ, “তখন অমিত জানান, রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। আরও জানান, করোনার রিপোর্ট মৌখিকই হয়। হাতে কিছু পাওয়া যায় না।” কিন্তু রিপোর্ট দেওয়ার জন্য জোর করলে ঋষভকে চেম্বারে যেতে বলেন ওই চিকিৎসক।
ঋষভের বক্তব্য, “যে দিন রিপোর্ট নিতে গেলাম, সে দিন চিকিৎসক জানালেন, আগে ভুল বলেছিলেন। রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। এর পরে আমার সামনেই হাওড়া জেলা হাসপাতালের ডিসচার্জ সার্টিফিকেট লিখে দেন। তাতেই লেখেন, ‘আমার রিপোর্ট নেগেটিভ। আমি কোথাও ভর্তি হইনি, অথচ ১৯ থেকে ২২ জুলাই হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম বলে কেন লেখা হচ্ছে, জানতে চাওয়ায় অমিত জানান, হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলে করোনা হয়ে যেত। চেম্বারে ৩১০০ টাকায় সব মিটে গিয়েছে।’ কলকাতার একটি পরিচিত নাটকের দলের সদস্য ঋষভ এর পরে তাঁর নাটকের শিক্ষক সৌমিত্র মিত্রকে বিষয়টি জানালে তিনিই কলকাতা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। লালবাজারের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা এ ব্যাপারে বলেন, “গুরুতর অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।”
এ প্রসঙ্গে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের প্রশ্ন, “এই কাজ কোনও চিকিৎসক করেন কী করে? সরকারি হাসপাতালের নথি ব্যক্তিগত চেম্বারে ব্যবহার করা কঠোর সাজা পাওয়ার মতো অপরাধ। দুর্দিনে এটি লোক ঠকানোর ফিকির নয় তো?” আর এক মেডিসিনের আর এক চিকিৎসক অরিজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, “চিকিৎসক বড় জোর কোভিড পরীক্ষার পরামর্শ নিজের প্রেসক্রিপশনে লিখে দিতে পারেন। এ ভাবে টাকার বিনিময়ে সব নিজের হাতে লিখে দেওয়া যায় নাকি! পুরোটাই বেআইনি।”
হাওড়া জেলা হাসপাতালের সুপার নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই ডিসচার্জ সার্টিফিকেট ভুয়ো। এই হাসপাতাল থেকেই বেরিয়েছে কি না, দেখতে হবে। এখানে অমিত বিক্রম নামে এক ডিএনবি পিজিটি আছেন। তবে সার্টিফিকেটে চিকিৎসক হিসেবে যে নাম রয়েছে, ওই নামে কোনও চিকিৎসকই এখানে নেই।” কিন্তু হঠাৎ হাওড়া জেলা হাসপাতালের কাগজ নিয়ে এই ভুয়ো কারবারের অভিযোগ কেন? নারায়ণবাবু বলেন, “দ্রুত তদন্তের ব্যবস্থা করছি।”
অভিযুক্ত অমিত বলেন, “আমি হাওড়া জেলা হাসপাতালের পিজিটি। একটা ছোট ভুল হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ওই রোগীর খুব খারাপ অবস্থা ছিল। প্রবল শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। যা করেছি ওঁকে সাহায্য করার জন্যই।’’