এসএসকেএম হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।
অ্যাপ-ক্যাবে করে শিশুকে নিয়ে যাচ্ছিলেন দম্পতি। আচমকাই পিছন থেকে সেই অ্যাপ-ক্যাবে ধাক্কা মারে একটি গাড়ি। ধাক্কার অভিঘাতে মায়ের কোল থেকে ছিটকে ক্যাবচালকের
আসনে ধাক্কা খায় শিশুটি। অভিযোগ, ঘটনাস্থলে পৌঁছেও শিশুটিকে শারীরিক পরীক্ষা করাতে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে উদ্যোগী হয়নি পুলিশ। শিশুটির পরিবারকে শুধু ট্যাক্সি ডেকে দেয় তারা। সেই ট্যাক্সিতে চেপে এসএসকেএমে শিশুটিকে নিয়ে গেলেও সেখানে দীর্ঘ অপেক্ষার পরে তার বাবা সন্তানকে নিয়ে অন্য হাসপাতালে ছুটতে বাধ্য হন বলেও অভিযোগ।
দক্ষিণ বন্দর থানার প্রিন্সেপ ঘাটের কাছে সোমবার সকালে দু’টি গাড়ির মধ্যে সংঘর্ষের ওই ঘটনা ঘটে। সে সময়ে অ্যাপ-ক্যাবে শিশুসন্তানকে নিয়ে যাচ্ছিলেন বেলেঘাটার দম্পতি কমল ও মৌসুমী বাসপা। সেই দুর্ঘটনায় দু’টি গাড়ির যাত্রীরা কেউ জখম না হলেও ২০ দিন বয়সি শিশুটি বড় বিপদের মুখে পড়ে। ক্যাবটিকে পিছন থেকে গাড়ি ধাক্কা মারলে শিশুটি মায়ের কোল থেকে ছিটকে গিয়ে চালকের আসনে ধাক্কা খায়। এর পরে নীচে পড়ে যাওয়ার সময়ে শিশুটির মা তাকে কোনও ভাবে ধরে ফেলেন। এর খানিক পরেই দক্ষিণ বন্দর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দু’টি গাড়িকে আটক করে। তবে ওই দম্পতির অভিযোগ, তাঁরা শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে পুলিশ প্রথমে তাঁদের জানায়, অ্যাম্বুল্যান্স ডাকা হয়েছে। কিন্তু সেই অ্যাম্বুল্যান্স আসেনি। এর পরে এক পুলিশকর্মী ওই দম্পতিকে ট্যাক্সিতে তুলে দেন। কিন্তু এসএসকেএম হাসপাতালে পৌঁছে তাঁরা দিশাহারা হয়ে যান বলেও অভিযোগ। সেখানে দুর্ঘটনাগ্রস্ত শিশুটির শারীরিক পরীক্ষা করাতে না পেরে তাঁরা বাধ্য হন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে।
এ দিন দক্ষিণ বন্দর থানায় খোঁজ নেওয়া হলে প্রথমে পুলিশকর্মীরা জানান, ছোট দুর্ঘটনা, কেউ আহত হননি। ক্যাবের যাত্রীরাও চলে গিয়েছেন। যদিও এর খানিক বাদেই জানা যায়, পুলিশের ডেকে দেওয়া ট্যাক্সিতে চেপে এসএসকেএমে পৌঁছলেও জরুরি বিভাগে শিশুটিকে পরীক্ষা করাতে পারেননি ওই দম্পতি। তাঁরা বেশ কিছু ক্ষণ এসএসকেএমে থাকার পরে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দিকে রওনা দিয়েছেন। সেখানে পৌঁছে দেখা যায়, শিশুদের বিভাগ থেকে সন্তানকে পরীক্ষা করিয়ে নিয়ে বেরোচ্ছেন বাসপা দম্পতি। তখনই কমল পুলিশ ও এসএসকেএমের দায় এড়ানোর মানসিকতা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমি বলেছিলাম, বাচ্চার চোট লেগেছে কি না, হাসপাতালে পরীক্ষা করাব। পুলিশ আমাদের বলল, অ্যাম্বুল্যান্স আসছে। খানিক বাদে একটা ট্যাক্সিতে চাপিয়ে দিল। আমরা এসএসকেএমে জরুরি বিভাগে পৌঁছলাম। সেখান থেকে আমাকে এসএনসিইউ বিভাগে চলে যেতে বলা হল। তার মধ্যে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে টিকিটও কাটতে হয়েছে। এসএনসিইউ বিভাগে এক ঘণ্টারও বেশি অপেক্ষা করেছি। যত বারই খোঁজ নিয়েছি, বলা হয়েছে, চিকিৎসকেরা এসে বাচ্চাকে পরীক্ষা করবেন। শেষে বাধ্য হয়েই এনআরএসে চলে আসি।’’
এসএসকেএম হাসপাতালের সুপার পীযূষকান্তি রায় অবশ্য এই ঘটনা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এটা হওয়া কাঙ্ক্ষিত নয়। শিশুদের চিকিৎসা এসএনসিইউ বিভাগে হবে। সেখানে তো চিকিৎসকেরা থাকেন। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, খোঁজ নেব। তবে ওই ব্যক্তি ঠিক জায়গায় গিয়েছিলেন কি না, সেটাও দেখা দরকার।’’
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, যেখানে একটি ২০ দিনের শিশুর সুস্থতার প্রশ্ন, সেখানে কী ভাবে দুর্ঘটনার পরে পুলিশ ওই পরিবারকে ট্যাক্সিতে বসিয়ে দিয়েই দায় এড়াতে পারে? কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিকের সঙ্গে এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি।