পুলিশকে নজরুলের পরিবার জানিয়েছে, সন্ধ্যা পর্যন্ত খবর না পাওয়ায় বার বার নজরুলকে ফোন করতে থাকেন তাঁর স্ত্রী। প্রতীকী ছবি।
কলকাতায় কাজ করতে এসে নিখোঁজ হয়ে গেলেন মালদহের বাসিন্দা এক নির্মাণ-শ্রমিক। পর্ণশ্রীর এই ঘটনায় রহস্য তৈরি হয়েছে। গত পাঁচ দিনেও বছর ষাটেকের ওই শ্রমিকের খোঁজ না পেয়ে কলকাতার একাধিক হাসপাতাল এবং থানা চষে ফেলেছে তাঁর পরিবার।
নজরুল ইসলাম নামের ওই নির্মাণ-শ্রমিকের পরিবারের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ আরও একটু তৎপর হলে হয়তো লোকটাকে খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু পুলিশ বলে দিয়েছে, বর্ষবরণের উৎসব মিটলে ব্যাপারটি দেখা হবে।’’ লালবাজারের কর্তারা অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, মামলা রুজু করে খোঁজখবর শুরু হয়েছে। উৎসবের জন্য অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে থেমে থাকার প্রশ্ন নেই।
মালদহের হরিশচন্দ্রপুরের বাসিন্দা নজরুল বেশ কয়েক বছর ধরে কলকাতায় নির্মাণের কাজ করছেন। তাঁর দুই ছেলে এবং চার মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলেরাও নির্মাণকাজের সূত্রে মুম্বইয়ে থাকেন। লকডাউনের সময় গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। ফের কলকাতায় কাজে আসেন নজরুল। তাঁর পরিবারের দাবি, গত ২৬ ডিসেম্বর সকাল সাতটা নাগাদ স্ত্রী দুলালি বিবির সঙ্গে কথা হয় তাঁর। এর পর বেহালা চৌরাস্তার কাছে যে নির্মাণস্থলে তিনি থাকছিলেন, সেখান থেকে অন্য এক জায়গায় কাজে যাবেন বলে বেরোন। তার পর থেকেই আর খোঁজ নেই।
পুলিশকে নজরুলের পরিবার জানিয়েছে, সন্ধ্যা পর্যন্ত খবর না পাওয়ায় বার বার নজরুলকে ফোন করতে থাকেন তাঁর স্ত্রী। এক সময়ে এক ব্যক্তি ফোনটি তুলে দাবি করেন, পাঠকপাড়ার কাছে একটি চায়ের দোকান রয়েছে ওই ব্যক্তির। সেখানে এক মাদকাসক্ত ব্যক্তি ফোনটি বিক্রি করতে এসেছিলেন। তিনি সেটি রেখে দিয়েছেন। কিন্তু নজরুল কোথায়, সেই তথ্য মেলেনি। তড়িঘড়ি কলকাতায় রওনা হন নজরুলের স্ত্রী এবং শ্যালক। মহম্মদ খালেক নামে সেই শ্যালক বলেন, ‘‘জামাইবাবুর দুই ছেলেও খবর পেয়ে মুম্বই থেকে চলে এসেছেন। সকলে মিলে পর্ণশ্রী, বেহালা চষে ফেলেছি। ২৭ তারিখ কলকাতায় পৌঁছে ওই চায়ের দোকানে যাই। সেখান থেকে মোবাইলটি সংগ্রহ করে পর্ণশ্রী থানায় নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করি। তাঁর কাজের জায়গাতেও খোঁজা হয়েছে। সেই সব এলাকার থানাতেও একটি করে অভিযোগপত্র দিই। লালবাজারেও গিয়েছিলাম। লাভ হয়নি।’’
তাঁর দাবি, ‘‘পুলিশ বলেছে এখন উৎসবের ছুটি চলছে। ১ তারিখ কেটে গেলে বিষয়টি দেখা হবে। তত দিনে অনেক দেরি হয়ে যাবে না তো!’’ পর্ণশ্রী থানার তদন্তকারী আধিকারিকদের অবশ্য দাবি, যে চায়ের দোকান থেকে মোবাইলটি পাওয়াগিয়েছিল, সেখানে গিয়ে কথা বলা হয়েছে। যে মাদকাসক্ত ব্যক্তি ফোনটি বিক্রি করতে এসেছিলেন তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি রাস্তা থেকে মোবাইলটি কুড়িয়ে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। আপাতত ২৬ ডিসেম্বর মোবাইলের টাওয়ারের অবস্থান কোথায় কোথায় ছিল, তা জেনে নজরুলের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা চলছে। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিষয়টি দ্রুত দেখার নির্দেশ দিচ্ছি। এই নিখোঁজের বার্তা সব থানায় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যও বলা হচ্ছে।’’