জয়ী: (বাঁ দিকে) নির্দল প্রার্থী মমতা মণ্ডল ও (ডান দিকে) কংগ্রেস প্রার্থী গীতা সর্দার। সোমবার। নিজস্ব চিত্র।
একের পর এক তৃণমূল প্রার্থীর জয়ের ঘোষণায় অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, বিরোধীশূন্যই হতে চলেছে বিধাননগর পুরসভা। কিন্তু তৃণমূলের ঝড়ের মাঝেও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রইলেন দুই মহিলা প্রার্থী। টানটান উত্তেজনার শেষে পুরভোটের ফলাফলে বিরোধীদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখলেন তাঁরাই।
বিধাননগর পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী গীতা সর্দার এবং ১২ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী মমতা মণ্ডল জয়ী হয়েছেন। যদিও ফলাফল ঘোষণার পরে গণনা কেন্দ্রের বাইরে এসে নির্দল প্রার্থী জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর আদর্শ, আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘আইকন’। গণনা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে তিনি তৃণমূল প্রার্থী তথা প্রাক্তন মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তীকে জড়িয়ে ধরেন। তিনি যে তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন, ইতিমধ্যেই সেই ইঙ্গিত মিলেছে।
কংগ্রেসের গীতাদেবী ১৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে এ নিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য নির্বাচিত হলেন। তবে এ বারের জয়টাই সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তিনি। কর্মী-সমর্থকদের কথায়, ‘‘যে পরিমাণ বাধা আসছিল, তাতে লড়াই করাটাই মুশকিল হয়ে পড়ছিল।’’ কংগ্রেস প্রার্থীর কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষ, বিশেষত মহিলারা পথে নেমে আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তাই এত প্রতিকূলতার মধ্যেও জয় এসেছে। এই জয় মানুষের জয়।’’ গীতাদেবী ৯৯৯ ভোটে জয়ী হয়েছেন।
অন্য দিকে, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থীর জয়ী হওয়ার একটি প্রেক্ষাপট ছিল বলেই মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিধাননগর পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ২০১৫ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন সিপিএম প্রার্থী আজিজুল হোসেন মণ্ডল। পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। এ বারে ওই ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়। আজিজুল হোসেনের দাবি, সাধারণ মানুষ চেয়েছিলেন, তাঁর পরিবারের কাউকেই যেন প্রার্থী করা হয়। যদিও দল সেখানে অন্য প্রার্থী দেয়। তাই নিজের আত্মীয়া মমতাকে সেখানে প্রার্থী করেন আজিজুল। আজিজুলের কথায়, ‘‘অনেক প্রতিকূলতার মাঝেও সাধারণ মানুষ পথে নেমে পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাই এই জয় এসেছে।’’ তবে মমতা তৃণমূলে যোগদান করতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন আজিজুল।
২০১৫ সালের পুর নির্বাচনে কংগ্রেস দু’টি এবং বামেরা দু’টি আসনে জয়ী হয়েছিল। এ বারে অবশ্য বামেরা একটি আসনও পায়নি। কংগ্রেস একটি আসন ধরে রাখতে পেরেছে। দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি তাপস মজুমদার বলেন, ‘‘সুষ্ঠু ভোট হলে আমাদের আসন সংখ্যা আরও বাড়ত।’’ কংগ্রেস কর্মীদের একাংশের কথায়, ‘‘প্রতিটি বুথে অবাধে ভোট লুট হলেও পুলিশ-প্রশাসন কিংবা নির্বাচন কমিশন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’’ বামেরা কোনও আসন না পেলেও প্রাথমিক ভাবে প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে বিধাননগর পুর নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তারা।
সিপিএম নেতা পলাশ দাশ বললেন, ‘‘জাল ভোটের সংখ্যা অনেক বেশি, আসল ভোটের সংখ্যার তুলনায়। বিধাননগর পুর নির্বাচনের ফলাফলের নির্যাস এটুকুই। গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। ভোট লুট করা হয়েছে।’’ বাম কর্মীদের একাংশের কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষ ক্রমশ তৃণমূল ও বিজেপি-র প্রকৃত চেহারাটা বুঝতে পারছেন। তাই প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে বলাই যায়, পুনরায় বামেদের উপরে আস্থা রাখতে শুরু করেছেন ভোটারেরা। এমন ইঙ্গিত যে মিলছে, সেটাই আশার।’’
বিজেপি কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, তৃণমূল নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। তৃণমূলের কারণেই বামেদের ভোট বেড়েছে। যদিও যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করে সাত নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী তথা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ দেবরাজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘উন্নয়নের পক্ষে মানুষ রায় দিয়েছেন। ভিত্তিহীন অভিযোগ করে গণমাধ্যমে ভেসে থাকতে চাইছেন বিরোধীরা।’’