Betel Nut

৫০টি সুপুরি গাছ পুঁতে জলে গেল পঞ্চাশ হাজার

যশোর রোড, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক, বারাসত-টাকি রোডের মতো রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য গত কয়েক বছরে সেখানে কয়েক হাজার গাছ কাটা হয়েছে।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৪১
Share:

অনিয়ম: দেগঙ্গায় এ ভাবেই রাস্তার পাশে বসানো হয়েছে সুপুরি গাছ। কাজের খতিয়ান লেখা বোর্ড পড়ে মাটিতে। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

এ যেন গাছ নিয়ে পুকুর-চুরি।

Advertisement

সরকারি দরপত্র আহ্বানের সময়ে বলা হয়েছিল পুঁততে হবে মেহগনি, ইউক্যালিপটাস, শিরিষ, কদমের মতো ছায়াদানকারী গাছ পুঁততে হবে। তার বদলে গাছ লাগানোর বরাত পাওয়া সংস্থা মাত্র ১০০ টাকার সুপুরি গাছ লাগিয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ। নজরদারির অভাবে এ ভাবে সরকারি অর্থ বেরিয়ে যাওয়ার দায় কার, তা নিয়ে তরজা শুরু হয়েছে দেগঙ্গার হাদিপুর পঞ্চায়েত এবং স্থানীয় বিডিও-র দফতরের মধ্যে।

যশোর রোড, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক, বারাসত-টাকি রোডের মতো রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য গত কয়েক বছরে সেখানে কয়েক হাজার গাছ কাটা হয়েছে। নিয়ম, একটি গাছের পরিবর্তে ছ’টি করে গাছ পুঁততে হবে। সংশ্লিষ্ট রাস্তার পাশে না জায়গা হলে সরকার নির্ধারিত ফাঁকা জায়গাতেও সেই গাছ পোঁতার সুযোগ রয়েছে। কিছু কর্মসংস্থান প্রকল্পে দরপত্র ডেকে সরকার সেই গাছ পোঁতার ব্যবস্থাও করে।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় এমনই এক প্রকল্পে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, ওই টাকায় মাত্র ৫০টি সুপুরি গাছ পোঁতা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনই জানাচ্ছে, গড়ে দু’টাকা করে ওই সুপুরি গাছের মোট দাম ১০০ টাকা। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে এত টাকা তবে গেল কোথায়? সুপুরি গাছ থেকে পরিবেশেরই বা কতটা উপকার হবে, উঠেছে সে প্রশ্নও।

সরকারি সূত্রে খবর, ‘মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্ৰামীণ কর্মসংস্থান’ প্রকল্পে ৫০ হাজার টাকার গাছ পোঁতার জন্য দরপত্র ডাকা হয়েছিল। সেই গাছ পোঁতার জন্য দেগঙ্গার একটি এলাকা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। সেই মতো দেগঙ্গা থানার হাদিপুর কালীতলা থেকে পঞ্চায়েত যাওয়ার রাস্তার দু’পাশে গাছ পোঁতা হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা গেল, সরকারি নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সরকার নির্ধারিত চারা গাছ না বসিয়ে, পোঁতা হয়েছে ৫০টি সুপুরি গাছের চারা। যা নিয়ে হাসাহাসি চলছে এলাকায়।

স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কাজের হিসেবের পরিসংখ্যান দিয়ে যে নোটিস বোর্ড লাগানো হয়, নজর এড়াতে সেটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। বরাদ্দ কাজের হিসেব লেখা সিমেন্টের বোর্ডটি মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেল। তাতে লেখা রয়েছে, ‘লতিব সর্দারের বাড়ি থেকে শাহজাহান মণ্ডলের বাড়ির দু’পাশে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে।’ তবে প্রশাসনই জানাচ্ছে, ওই বোর্ডে কত সংখ্যক, কী প্রজাতির গাছ পোঁতা হয়েছে সে সব তথ্যও লেখার কথা। কিন্তু সে সব কিছুরই উল্লেখ নেই।

ঘটনার দায় কার তা জানতে চাইলে একে অন্যের দিকে আঙুল তুলছে স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং প্রশাসন। স্থানীয় হাদিপুর-ঝিকরা পঞ্চায়েতের প্রধান হারান দাস বলেন, ‘‘বিডিও দফতর থেকে আমাদের না জানিয়ে গাছ পোঁতা হয়েছে। সুপুরির চারার দাম দু’টাকা। তা হলে পঞ্চাশটি গাছের দাম ১০০ টাকা। বাকি টাকা কী হল তদন্ত করে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

অন্য দিকে, দেগঙ্গার বিডিও সুব্রত মল্লিক বলেন, ‘‘বিডিও দফতর থেকে দরপত্র ছাড়া হলেও তা দেখার দায়িত্ব থাকে পঞ্চায়েতের।’’ বিষয়টির তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন বিডিও।

বন দফতর জানাচ্ছে, মেহগনি, ইউক্যালিপটাস, শিরিষ, কদম, আম, জামের মতো গাছ লাগানো প্রয়োজন। কারণ ওই সব গাছ ছায়া দেয়। বারাসত বন দফতরের রেঞ্জ অফিসার সুকুমার দাস বলেন, ‘‘এই ধরনের গাছ ছাড়া সরলবর্গীয় এক কাণ্ডের গাছ পোঁতা চরম অনিয়ম।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement