অনীহা: ট্র্যাফিক আইন মেনে চলায় বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক ও দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
কলকাতা পুলিশের পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ কর্মসূচি শেষ হতে চলেছে আজ, রবিবার। তার আগের দিনই বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় আহত হলেন কলকাতা পুলিশের এক সিভিক ভলান্টিয়ার। তাঁর কোমরের হাড় ভেঙেছে। পায়েও গুরুতর চোট লেগেছে। তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ারে ভর্তি করানো হয়েছে। এ দিন সকালেই আবার মা উড়ালপুলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় একটি অ্যাপ-বাইক। আহত হন চালক ও সওয়ারি। তাঁদেরও দ্রুত উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও হাসপাতাল সূত্রের খবর, কারও আঘাতই গুরুতর নয়। তবে, সব মিলিয়ে শেষের আগের দিনও দুর্ঘটনার সংখ্যা কমার নাম নেই পথ নিরাপত্তা সপ্তাহে।
পুলিশ সূত্রের খবর, আহত সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম জয়ন্ত দাস। বছর আটান্নর জয়ন্ত তিলজলা ট্র্যাফিক গার্ডের সঙ্গে যুক্ত। জানা গিয়েছে, তিনি রোজই মূলত ইএম বাইপাসের উত্তর পঞ্চান্নগ্রাম মোড়ে যানশাসনের দায়িত্বে থাকেন। এ দিন সকালেও তিনি সেখানেই ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ জয়ন্ত উত্তর পঞ্চান্নগ্রাম মোড়ে ডিউটি করছিলেন। সেখানে হেঁটে রাস্তা পারাপার করার জন্য একটি সিগন্যাল রয়েছে। কিন্তু তাতে বেশির ভাগ সময়েই হলুদ আলো জ্বলে থাকে। লাল বিশেষ হয় না। অর্থাৎ, যানবাহনের চালকদের কিছুটা ধীরে চলার সঙ্কেত দেওয়া হয়। সেখানে দাঁড়িয়ে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারই হাত দেখিয়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে পথচারীদের রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা করে দেন।
এ দিন সকালেও তিনি হাত দেখিয়ে গাড়ি দাঁড় করান। অভিযোগ, হাত দেখে একটি সাদা ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু, সেটির পিছনেই ছিল একটি হাইড্রলিক ক্রেনের গাড়ি। সামনের গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়লেও ক্রেনের চালক নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। সরাসরি সেটি সামনের ট্যাক্সিতে ধাক্কা মারে। সেই অভিঘাতে ট্যাক্সিটি গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারে জয়ন্তকে। রাস্তায় ছিটকে পড়লে স্থানীয় লোকজনই তাঁকে দ্রুত উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি সেখানকার ট্রমা কেয়ারের ন’তলায় চিকিৎসাধীন।
জয়ন্তের বাড়ি উত্তর পঞ্চান্নগ্রামেই। ঘটনাস্থল থেকে হাঁটাপথে মিনিট পাঁচেক। সেখানে গেলে জানা যায়, তেতলা একটি বাড়ির উপরের তলায় মেয়ে ও জামাইয়ের সঙ্গে তিনি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন। কিন্তু, এ দিন দুপুরে সেখানে কাউকেই দেখা যায়নি। স্থানীয়দের থেকে ফোন নম্বর নিয়ে জয়ন্তের মেয়ে শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচার ছাড়া উপায় নেই। কোমরের হাড় ভাঙার পাশাপাশি তাঁর পায়েও চোট লেগেছে। শ্রাবন্তী বলেন, ‘‘বাবা এর পরে কাজ করতে পারবেন কি না, জানি না। যে ভাবে এই ঘটনা ঘটেছে, তাতে মরতে মরতে বেঁচে এসেছেন বলা যায়।’’