Haridevpur

Haridevpur Death: মৃত্যু কিসে? দায় ঠেলাঠেলির ঘোলা জলেই আটকে উত্তর

এ দিন বিকেলে পুরভবনে আলো বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন মেয়র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২২ ০৬:০২
Share:

সন্তানহারা: নিশীথ যাদবের শোকার্ত মা। রবিবার, হরিদেবপুরের বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

হরিদেবপুরে রবিবার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিশীথ যাদব নামে এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায় কলকাতা পুরসভা কতটা দায়ী? সোমবার সারা দিন এই প্রশ্নই ঘুরেফিরে সামনে এসেছে।

Advertisement

রবিবার স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছিলেন, নিশীথ বাতিস্তম্ভ ছুঁয়ে ফেলেছিল। পরে পুরসভা দাবি করে, সেটি বিএসএনএলের টেলিফোনের স্তম্ভ। কিন্তু তাতে আলো ঝুলিয়েছিল পুরসভা। সোমবার বিএসএনএল কর্তৃপক্ষ বলেন, ‘‘টেলিফোনের স্তম্ভ ছুঁলে মৃত্যু হওয়ার কথা নয়। তবে, ওই খুঁটিতে আমাদের অনুমতি না নিয়েই বিদ্যুতের সংযোগ টানা হয়েছিল।’’

রবিবারের ওই মর্মান্তিক ঘটনার তদন্ত নিরপেক্ষ কোনও কমিটিকে দিয়ে করাতে সোমবার পুর কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। এ দিন বিকেলে পুরভবনে আলো বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন মেয়র। ছিলেন পুর কমিশনার বিনোদ কুমারও। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, দু’দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি মেয়রকে রিপোর্ট দেবে। যাঁদের গাফিলতির উল্লেখ থাকবে, তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করবে পুরসভা।

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, বৈঠকে আলো বিভাগের কাজকর্মে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেয়র। বর্ষার মুখে শহরের বাতিস্তম্ভগুলির নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে আলো বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই রিপোর্ট এখনও পাননি। শহরের প্রতিটি বাতিস্তম্ভ পরীক্ষা করাতে এ দিন নির্দেশ দেন মেয়র। বাতিস্তম্ভের খোলা তার নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের উপরেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেয়র। তিনি জানান, বার বার বলেও কাজ হচ্ছে না। এর পরে কোথাও বাতিস্তম্ভে খোলা তার দেখলে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তাদের বদলি করে দেবেন।

গত বছরের মে মাসে রাজভবনের নর্থ গেটের সামনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক তরুণ ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যুর ঘটনায় দায় ঠেলাঠেলি কম হয়নি। যা ফের শুরু হয়েছে হরিদেবপুরের ঘটনার পরেও। ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রত্না শূর বললেন, ‘‘জায়গাটা অন্ধকার ছিল বলে টেলিফোনের ওই স্তম্ভে মাস ছয়েক আগে পুরসভা অস্থায়ী ভাবে আলো লাগিয়েছিল। সব রকম সুরক্ষা-বিধি মেনেই পাশের বাতিস্তম্ভ থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া হয়েছিল। সোমবার পুরসভার আলো বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারেরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, টেলিফোনের ওই স্তম্ভে কোনও শর্ট সার্কিট হয়নি।’’ তাঁর দাবি, সম্প্রতি ওই জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছিল বলে মৃত কিশোরের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। এই ঘটনা তার জেরেও ঘটে থাকতে পারে।

এ দিন পুরসভায় সাংবাদিক বৈঠকে মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ অবশ্য দাবি করেন, ‘‘পুরসভার নয়, ব্যক্তিগত স্বার্থেই ওই পোস্টে আলো লাগানো হয়েছিল।’’ টেলিফোনের স্তম্ভে আলো লাগানো নিয়ে পুরসভার অন্দরেই যে মতান্তর রয়েছে, তা স্পষ্ট। রত্নাদেবীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিইএসসি-র তরফে এ দিন জানানো হয়েছে, ঘটনাস্থলের কাছে তারা কোনও খোঁড়াখুঁড়ি করেনি।

তা হলে প্রশ্ন, পুরসভার গাফিলতির জেরেই কি মারা গেল নিশীথ? মেয়র বলেন, ‘‘নিরপেক্ষ কোনও কমিটিকে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করাতে বলেছি পুর কমিশনারকে। কলকাতা পুরসভা, সিইএসসি, না কি টেলিফোন সংস্থা— কাদের দোষ, তা নিয়ে দায় ঠেলাঠেলি না করে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া দরকার।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, তদন্ত কমিটিতে কলকাতা পুলিশ, সিইএসসি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিশেষজ্ঞেরা ছাড়াও পুরসভার শীর্ষ আধিকারিকেরা থাকবেন। এ দিন ক্ষুব্ধ মেয়র জানান, তদন্তে পুরসভার দোষ প্রমাণিত হলে আলো বিভাগের ডিজি-কে শো-কজ় করা হবে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘শহরের বাতিস্তম্ভগুলির বিপজ্জনক অবস্থা পাল্টাতে আগেই আলো বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও কেন এই দুর্ঘটনা ঘটল?’’ তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানান মেয়র পারিষদ (আলো)। লালবাজার জানিয়েছে, থানাগুলিকে বলা হয়েছে, বিপজ্জনক বাতিস্তম্ভ দেখলেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে।

কিন্তু এ সবের পরেও ছেলে কি আর ফিরে আসবে? প্রশ্ন মৃতের মা আরতি যাদবের। তাঁর কথায়, ‘‘আমার যা ক্ষতি হল, তা কি কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement