ঘুষ চাইছে পুলিশ, দিদিকে নালিশ চালকের

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দিদিকে বলো’ নামে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ জানানোর যে ব্যবস্থা চালু করেছেন, তারই ইমেলে পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ জানিয়েছেন বেহালার বাসিন্দা শরৎচন্দ্র দে নামে এক যুবক।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৯ ০১:৪৯
Share:

ফাইল চিত্র।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত একটি গাড়ি ছাড়াতে পুলিশ ১৫ হাজার টাকা চেয়েছে বলে অভিযোগ। লাইসেন্স ছাড়ানোর জন্যও চাওয়া হয়েছে আরও পাঁচ হাজার টাকা! এমনকি, থানার ‘মালখানাবাবুর খরচ’ বাবদ এক হাজার এবং গাড়িটি থানার বাইরে পড়ে থাকাকালীন যাঁরা দেখাশোনা করেছেন, তাঁদের জন্যও আরও এক হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ!

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দিদিকে বলো’ নামে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ জানানোর যে ব্যবস্থা চালু করেছেন, তারই ইমেলে পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ জানিয়েছেন বেহালার বাসিন্দা শরৎচন্দ্র দে নামে এক যুবক। পুলিশকর্মীর নাম করে তিনি লিখেছেন, ‘আদালত আমার গাড়ি এবং লাইসেন্স ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেও আমার কাছ থেকে দফায় দফায় টাকা চাইছেন মুচিপাড়া থানার ওই অফিসার। বাধ্য হয়ে ছ’হাজার টাকা দিয়েছি। আরও সাত হাজার টাকা চাইছেন তিনি। সামান্য গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাই। আমার শ্বশুর ক্যানসারে আক্রান্ত। তাঁর চিকিৎসার খরচ চালানোই কষ্টকর হয়ে উঠেছে। পুলিশকে দেওয়ার মতো টাকা আমার নেই। লাইসেন্সটা ফিরিয়ে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে সংসার চালানোর ব্যবস্থা করে দিন দিদি।’

বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর তাঁর মোবাইলে যে মেসেজ পাঠিয়েছে, তা দেখিয়ে শরৎচন্দ্র বুধবার জানান, একটি অ্যাপ-ক্যাব সংস্থায় নিজের গাড়ি চালান তিনি। গত ১৯ জুলাই রাতে বৌবাজার মোড়ে তাঁর গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে একটি মোটরবাইকের। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গাড়ি-সহ শরৎচন্দ্রকে মুচিপাড়া থানায় নিয়ে যায়। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কোনও দোষ ছিল না বুঝে ওই অফিসার বলেন, ১৫ হাজার টাকা দিলে থানা থেকেই জামিন হয়ে যাবে। টাকা নেই বলায় পরের দিন আমাকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে জামিন পাই। কিন্তু গাড়ি ছাড়াতে যেতেই ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন ওই পুলিশকর্মী।’’

Advertisement

শরৎচন্দ্র জানান, এর পরে এক আইনজীবীর সাহায্যে আদালতে গাড়ি ছাড়ানোর আবেদন করেন তিনি। বললেন, ‘‘সে কথা শুনে থানায় ডেকে পাঠিয়ে ওই অফিসার বলেন, পাঁচ হাজার টাকা দিতেই হবে। নয়তো পুলিশের ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ আদালতে পৌঁছবে না! বাধ্য হয়ে টাকাটা দিই। রাতেই ফের ফোন করে ডেকে আরও এক হাজার টাকা নেন তিনি। ছেলের দুধের খরচের টাকাই দিয়ে দিতে হয়।’’ এর পরে ২৬ জুলাই গাড়ি হাতে পান শরৎচন্দ্র। তিনি বলেন, ‘‘এর পরে লাইসেন্স ছাড়াতে গেলে ওই অফিসার বলেন, গাড়ি ছাড়ানোর সময়ে চালাকি করেছিস, এ বার পাঁচ হাজার টাকা দিতেই হবে। এ ছাড়া মালখানাবাবু আর বাইরে এত দিন যাঁরা গাড়ি দেখাশোনা করেছেন, তাঁদেরও এক হাজার টাকা করে দিবি। ফের লাইসেন্সের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হই। হাজার টাকার বন্ডে গত ৩ অগস্ট লাইসেন্স ছেড়ে দিতে বলে আদালত।’’

তবে পুলিশ এখনও লাইসেন্স ফেরত দেয়নি বলে দাবি অভিযোগকারীর। তাঁর কথায়, ‘‘ওই অফিসার এখন বলছেন, টাকা না পেলে আদালতে গিয়ে বলবেন, আমি প্রয়োজনীয় নথি জমা করিনি। তাই লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়েই এ বার দিদিকে জানিয়েছি।’’

শরৎচন্দ্র কয়েকটি ভয়েস মেসেজও (সেগুলির সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) শুনিয়েছেন। তাতে এক ব্যক্তিকে শরৎচন্দ্র বলছেন, ‘‘এক জনের থেকে নিলাম স্যর।’’ ব্যক্তি বলছেন, ‘‘ঠিক আছে, এসো।’’ শরৎচন্দ্র বলছেন, ‘‘এখন পাঁচ হাজার টাকাই দিতে পারব স্যর!’’ ব্যক্তি বলছেন, ‘‘আরে ফোনে ও সব বোলো না!’’

অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা বলেন, ‘‘বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। সব দিক খতিয়ে দেখা হবে।’’ কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী দেবকুমার চন্দ্র বলেন, ‘‘স্পষ্ট ঘুষ চেয়েছে পুলিশ। গাড়ি এবং লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে আদালতে নো অবজেকশন দেওয়ার পরেও পুলিশ এ কাজ করতে পারে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement