—প্রতীকী চিত্র।
সাত মাস ধরে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। সার্ভিস রোড ধরে আসার সময়ে গাড়ির গতিও ছিল তুলনামূলক ভাবে বেশি। সেই গতি না কমিয়েই ‘ইউ টার্ন’ করার সময়ে সামনে লোকজন দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন চালক। ব্রেকের বদলে তাঁর পা চলে যায় অ্যাক্সিলারেটরে। যার ফলে তীব্র গতিতে রাস্তার উল্টো দিকের দোকানে গিয়ে ধাক্কা মারে গাড়িটি। উল্টোডাঙা থানা এলাকার বেলগাছিয়ায় ওই দুর্ঘটনায় ধৃত গাড়িচালককে জিজ্ঞাসাবাদ এবং ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে প্রাথমিক ভাবে এমনটাই মনে করছেন লালবাজারের তদন্তকারী অফিসারেরা। তবে পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে গাড়িটির মেকানিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্টও খতিয়ে দেখা হবে।
সোমবার সাতসকালে বেলগাছিয়া মোড়ে রাস্তার ধারের একটি তামাকের দোকানে ঢুকে যায় ওই গাড়িটি। গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর ভাবে আহত হন দোকানের কর্মী-সহ পাঁচ জন। তাঁদের আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে শোয়েব আহমেদ নামে এক জনের মৃত্যু হয়। তদন্তে নেমে সে দিনই গাড়িচালক আদিত্য জৈনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি মানিকতলা থানা এলাকার বাসিন্দা। বালিগঞ্জে তাঁর অফিস রয়েছে। মঙ্গলবার আদিত্যকে শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে বিচারক ২০ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
অন্য দিকে, আর জি করে ভর্তি হওয়া চার জনের মধ্যে সুমিত আনসারি নামে এক জনকে সোমবার রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্য দু’জন, মহম্মদ সিরাজুল আনসারি ও সৈয়দ আলির অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাঁদের দমদমের এক বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। মহম্মদ সুলতান নামে আর এক জনকে আর জি কর থেকে ফুলবাগানের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এ দিন।
তবে, দুর্ঘটনার পরে ৪০ ঘণ্টার বেশি সময় কেটে গেলেও প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কিছু জানাতে পারেননি তদন্তকারী আধিকারিকেরা। মঙ্গলবারও ধৃত চালককে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেন তাঁরা। পুলিশের দাবি, ধৃত আদিত্য জেরায় জানিয়েছেন, তিনি সাত মাস ধরে গাড়ি চালাচ্ছেন। তবে, তাঁর অভিজ্ঞতা যে কম, সে ব্যাপারে এক প্রকার নিশ্চিত তদন্তকারীরা। একই সঙ্গে তাঁরা এ-ও জানিয়েছেন, চালকের মত্ত অবস্থায় থাকার কোনও প্রমাণ মেলেনি।
এ দিন দুর্ঘটনাস্থল খতিয়ে দেখতে যান লালবাজারের আধিকারিক এবং ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে কিছু নমুনা সংগ্রহ করেন। পাশাপাশি, ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও খতিয়ে দেখেছেন তদন্তকারী আধিকারিকেরা। সূত্রের খবর, সেই ফুটেজে সেতুর পাশে সার্ভিস রোডে গাড়ির গতি যে তুলনামূলক ভাবে বেশি ছিল, তার প্রমাণ মিলেছে।
লালবাজারের এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘নতুন গাড়িতে সাধারণত সমস্যা থাকার কথা নয়। সার্ভিস রোড দিয়ে এসে গাড়ি ঘোরানোর ক্ষেত্রে যে গতি থাকার কথা, তা ছিল না বলেই মনে হচ্ছে। তবে গাড়ির মেকানিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্ট এলেই প্রকৃত কারণ স্পষ্ট হবে।’’
এ দিকে, দুর্ঘটনায় মৃত শোয়েবের পরিবারের তরফে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। এ দিন শোয়েবের দেহ নিয়ে বিহারের উদ্দেশে রওনা দেন তাঁর পরিজনেরা। মৃতের এক আত্মীয় মহম্মদ ফৈয়াজ আলম বলেন, ‘‘পুলিশ আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। পরিবারের সকলের সঙ্গে কথা বলার পরেই অভিযোগ জানানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’