—প্রতীকী চিত্র।
বিপজ্জনক গাছ নিয়ে সমীক্ষা চলছে বিধাননগরে। কোথায় ক’টি গাছ বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহায্যে তা চিহ্নিত করা হয়েছে। ঘটনাচক্রে এরই মধ্যে মাথার উপরে গাছ ভেঙে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল সেই সল্টলেকেই। গত ২৬ জানুয়ারি সকালে পূর্বাচলের চার নম্বর ক্লাস্টারের বাইরে একটি মরা গাছ ভেঙে পড়ে এক মাংস বিক্রেতার উপরে। জখম অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার মৃত্যু হয় শাহজাহান শাহজি (৪০) নামে ওই ব্যক্তির।
বালির উপরে গড়ে ওঠা সল্টলেকের মাটিতে বালির ভাগই বেশি। ফলে মাটি সেখানে অন্যান্য জায়গার চেয়ে দুর্বল। যে গাছটি শাহজাহানের উপরে ভেঙে পড়েছিল, সেটি একটি মৃত কৃষ্ণচূড়া গাছ। এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি মিনু চক্রবর্তী। তিনি জানান, চার নম্বর ক্লাস্টারের পাঁচিলের গা ঘেঁষে গাছটি বেরিয়েছিল। মাংসের দোকানটি ছিল পাঁচিলের বাইরে, গাছের নীচে। মিনু বলেন, ‘‘গাছটি কাটা হত। কিন্তু ক্লাস্টারের ভিতরে হওয়ায় সেটি কাটতে কোঅপারেটিভ বিভাগের অনুমতির প্রয়োজন ছিল। তা ছাড়া, স্থানীয় পর্যায়ে বাধা এসেছিল গাছটি কাটার ক্ষেত্রে। তাই সময় লাগছিল। ইতিমধ্যেই ২৬ তারিখ ওই ঘটনা ঘটে।’’ শাহজাহানের আত্মীয়েরা জানান, তিনি গুমা হাবড়ায় থাকতেন। ১০ বছর আগে ওই ক্লাস্টারের বাইরেই মাংসের দোকান খোলেন তিনি। গাছ ভেঙে পড়ে তাঁর মেরুদণ্ড টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এই ঘটনা প্রসঙ্গে স্থানীয় বিজেপি নেতা সঞ্জীব সিংহচৌধুরী বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে পুরপ্রতিনিধির সতর্ক থাকা উচিত ছিল। এক জনের বাধায় উনি গাছ কাটতে পারেননি বলছেন। অথচ, ওই ঘটনার পরে একাধিক এমন গাছ পরের পর কাটা হয়েছে। গা-ছাড়া মনোভাবের জন্য একটি প্রাণ চলে গেল।’’
প্রতি বছরই ঝড়-ঝঞ্ঝার সময়ে সল্টলেকে একাধিক গাছ পড়ে। বর্ষায় মাটি আলগা হয়েও গাছ পড়তে দেখা যায়। গাছ ভেঙে পড়ে বাইকচালকের আহত হওয়া অথবা গাড়ির উপরে গাছ ভেঙে পড়ার মতো ঘটনা ঘটলেও সাম্প্রতিক সময়ে এ ভাবে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। ওই মাংস বিক্রেতার মৃত্যুর ঘটনা একটি প্রশ্নও তুলে দিয়েছে। তা হল, সল্টলেকের বহু রাস্তায় বড় বড় গাছের নীচে দোকান রয়েছে। সেখানে বহু মানুষের সমাগম হয়। সেই সব গাছের গুঁড়ি কতটা শক্তপোক্ত? বিধাননগর পুরসভা জানাচ্ছে, গাছ মরে না গেলে ভেঙে পড়ার ভয় কম। তবে অনেক ক্ষেত্রে মাটি কোনও কারণে আলগা হয়ে গেলে গাছ পড়ে যেতে পারে। পুরসভার পরিবেশ বিভাগের মেয়র পারিষদ রহিমা বিবি জানান, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে সল্টলেকে মৃত গাছ চিহ্নিত করে কাটার কাজ চলছে। তিনি বলেন, ‘‘মরা গাছ কাটতে গেলেও অনেক ধরনের অনুমতির প্রয়োজন হয়। তাই খানিকটা সময় লাগে।’’
সল্টলেক তৈরি হওয়ার পর থেকেই প্রাকৃতিক ভাবে অজস্র বড় গাছ যেমন গজিয়েছে, তেমনই বৃক্ষরোপণের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ঘিরে বিভিন্ন সময়ে বড় বড় গাছ সেখানে রোপণও করা হয়েছে। সেই সব গাছ কলেবরে বেড়ে বহু ক্ষেত্রে এতটাই ওজনদার হয়েছে যে, বালি মিশ্রিত মাটি তা ধরে রাখতে পারছে না। যে কারণে সল্টলেকে সারা বছরই গাছ পড়ে। রহিমা বলেন, ‘‘আমরা পরিকল্পনা করেছি যে, ছোট ছোট ফুল ও ফলের গাছের চারা রোপণ করা হবে। তাতে গাছ পড়বে না। পাখিও আসবে, প্রকৃতির সহায়ক হবে।’’ উল্লেখ্য, গাছ পড়ার সমস্যা রয়েছে কলকাতা শহরেও। বছর দেড়েক আগে গাছ ভেঙে পড়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।