১৯২২ সালে প্রবাসী পত্রিকায় বেরিয়েছিল ‘উপেক্ষিতা’ নামের একটি গল্প। লেখক, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (ছবিতে)। সে-ই তাঁর প্রথম প্রকাশিত গল্প, এ বছর তাই বিভূতিভূষণের লেখার প্রথম প্রকাশের শতবর্ষ। অনন্য এই স্মরণ-উপলক্ষেই ওয়েস্ট বেঙ্গল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট ফিনান্স কর্পোরেশন (ডব্লিউবিআইডিএফসি) সংস্থা তৈরি করেছে ওয়েবসাইট, বিভূতিভূষণ ডট ইন। সহজ সুদৃশ্য ওয়েবসাইটটিতে পড়া যাচ্ছে বিভূতিভূষণের জীবন-তথ্য ও সাহিত্যকৃতি— উপন্যাস, কিশোর উপন্যাস, ছোটগল্প, ডায়েরি ও অন্য রচনা। আছে বিভূতিভূষণের বংশতালিকা, গ্রন্থপঞ্জিও। লেখক-পরিচিতি অংশটি বাংলার পাশাপাশি রয়েছে ইংরেজিতেও, অন্য ভাষাভাষী সাহিত্যপ্রেমী মানুষের সুবিধার্থে। আর্কাইভ ও অন্যান্য উৎস থেকে বাঙালির প্রিয় এই লেখকের পুরনো আলোকচিত্রগুলি জোগাড় করে গুছিয়ে রাখলে ভাল হবে আরও।
মুক্তির গান
সিপাহি বিদ্রোহে নাজেহাল ব্রিটিশ শাসক বাণিজ্যের আড়াল ছেড়ে সরাসরি হাতে তুলে নিল, কঠোর করল শাসনদণ্ড। রাজনীতি পাল্টাল, সঙ্গে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ভাষা, ধরনও। কালে তার শরিক হল বঙ্গরঙ্গমঞ্চ, সঙ্গী হল মঞ্চগান। নীল বিদ্রোহ বা হিন্দু মেলার প্রচারে দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকের সূত্রে বিদ্যাভূণির ‘নীল বানরে সোনার বাংলা কল্লে এবার ছারেখার’, বা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সরোজিনী নাটকের গান ‘জ্বল জ্বল চিতা দ্বিগুণ দ্বিগুণ’ তারই প্রমাণ। বঙ্গভঙ্গ রদ, ভারত ছাড়ো বা জেল ভরো-র প্রেক্ষাপটে মঞ্চ মুখর হয়েছে বঙ্কিম-গিরিশ-রবীন্দ্রনাথ-দ্বিজেন্দ্রলাল-অতুলপ্রসাদ-মুকুন্দদাসের পাশে তথাকথিত অনামী বহু গীতিকারের গানে। ‘স্বাধীনতার মঞ্চগান’ নামে সেই নিবেদনই এ বার ‘একাডেমি থিয়েটার’-এর, দেবজিত্ ও ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সহশিল্পীদের পরিবেশনায়। পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের প্রযোজনায় তাদেরই প্রেক্ষাগৃহে, ৪ মার্চ সন্ধে সাড়ে ৬টায়।
নতুন করে
পাশ্চাত্য সঙ্গীত ও অপেরার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিয়ে বিলেত থেকে ফিরলেন রবীন্দ্রনাথ, সম্পূর্ণ দেশীয় গল্প থেকে রচনা করলেন বাংলায় অপেরা, বাল্মীকিপ্রতিভা। তাতে ব্যবহৃত হল হিন্দুস্থানি সঙ্গীতের রাগাশ্রয়ী সুরের সঙ্গে বিলিতি গানের সুর। ধুমধাম করে জোড়াসাঁকোতে হল তার অভিনয়— ঠিক ১৪০ বছর আগে আজকের দিনেই, ২৬ ফেব্রুয়ারি। বাল্মীকির ভূমিকায় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। সেই দিনকে মনে রেখেই দেবাশিস রায়চৌধুরীর নতুন ভিডিয়ো-নিবেদন ‘জ্যোতির্গময়ঃ’। গান-অভিনয়ের সমন্বয়ে, একক অপেরা আঙ্গিকে দস্যু রত্নাকরের বাল্মীকি হওয়ার উত্তরণ-কথা। ‘জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’-এর এই প্রযোজনাটি আজ থেকে দেখা যাচ্ছে ইউটিউবে।
ফেলুদা-বিশ্ব
ফেলুদা তার প্রতিটি অ্যাডভেঞ্চারে বিচিত্র বিষয়ের উপর আলো ফেলতে ফেলতে এগোয়, কখনও গল্পের ছলে আসে বিশেষ সেই তথ্য ও জ্ঞান, কখনও সহায়ক হয় রহস্যভেদে। ফেলুদা etc. (প্রকাশক: পরম্পরা) নামের যে বইটি সাজিয়েছেন দেবাশীষ সরকার, সেটি ফেলুদা-কাহিনির আনুষঙ্গিক নানা বিষয়ের চিত্রবহুল প্রশ্নোত্তর। সঙ্গে রয়েছে ফেলুদা-স্রষ্টার করা অলঙ্করণ, সন্দীপ রায়ের তোলা তাঁর আপাদমস্তক একটি আলোকচিত্র, ভারী সুন্দর। ফেলুদার জ্ঞানচর্চার সূত্রে আরও বড় এক জানার জগতে পা রাখা যাবে। মজার, শিক্ষার, বিনোদনের এই বই পড়তে পড়তে সত্যিই ফেরা যায় “ফেলু মিত্তিরের গল্পে; থুড়ি, মানিকদার বৈঠকখানায়। যেখানে যতক্ষণ থাকা ততক্ষণ শেখা—” যেমন লেখা আছে বইয়ের ভূমিকায়।
সময়ের নাটক
জর্জ অরওয়েল-প্রাণিত, দেবেশ চট্টোপাধ্যায় রচিত, ‘সংসৃতি’-র নতুন নাটক ১৯৮৪? আগামী কাল দুপুর আড়াইটে ও সন্ধে সাড়ে ৬টায় অ্যাকাডেমিতে। নির্দেশনা ও সিনোগ্রাফি দেবেশেরই: “এ নাটকের মধ্যে দেখতে চাইছি সমসময়ের ভারতকে, রাষ্ট্রের ‘থট পুলিশ’ কি মগজে কারফিউ জারি করছে?” মুখ্য অভিনয়ে অর্ণ মুখোপাধ্যায়, অর্পিতা ঘোষ। আজ দুপুরে শের আফগান ও সন্ধ্যায় একদিন মন্দিরে যাওয়ার পথে; একই সঙ্গে সাড়ে ৬টায় ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটে নাটক মন্টু ও মার্ক্স, ‘ইচ্ছেমতো’-র প্রযোজনা। অন্য দিকে, ২-৬ মার্চ সন্ধ্যা ছ’টায় ‘পূর্ব-পশ্চিম নাট্য উৎসব’, অ্যাকাডেমি মঞ্চে প্রথম দুই সন্ধ্যায় দেবশঙ্কর হালদারের মুখ্য অভিনয়ে পাগল-পারা ও এক মঞ্চ এক জীবন, ৪ তারিখ ‘আখর’ প্রযোজিত পালাকীর্তন মাথুর, শেষ দিন গিরিশ মঞ্চে সাড়ে ৫টায় ‘কাব্যকলা মনন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী’-র দ্য কাইট রানার।
সেতুবন্ধ
সম্রাটের জন্মদিন জাপানে উৎসবের দিন। প্রার্থনারও— সম্রাটের সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনের, দেশের সমৃদ্ধির। বর্তমান সম্রাট নারুহিতো-র জন্মদিন ছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি, কলকাতার কনসুলেট জেনারেল অব জাপান দিনটি উদ্যাপন করল মনোজ্ঞ এক অনুষ্ঠানে। এ বছর জাপান-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭০ পূর্তি, তাকে ঘিরেও নানা উদ্যোগ। ভারত-জাপান সংযোগের সেতু রবীন্দ্রনাথও (ছবিতে ১৯৩২-এ কলকাতার নিপ্পন ক্লাবে জাপানের কনসাল জেনারেলের চা-পার্টিতে তিনি, শিল্পী কোসেৎসু নোসু-র সঙ্গে)। এই সময়ের কলকাতা তথা বাংলার জাপান-অনুরাগী ও গবেষকেরা এবং হর্নবিল প্রেস একত্রে পরিকল্পনা করেছেন একটি গ্রন্থমালা। টোকিয়ো ইউনিভার্সিটি অব ফরেন ল্যাঙ্গোয়েজেস-এর অধ্যাপক কিয়োকো নিওয়া-র কালেক্টেড এসেজ় অন রবীন্দ্রনাথ টেগোর অ্যান্ড জাপান, এবং নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় রবীন্দ্রনাথ ও কলকাতার জাপান কনসুলেটের হৃদ্য যোগাযোগ বিষয়ক বই ইন দ্য কজ় অব ফ্রেন্ডশিপ প্রকাশিত হবে বাংলা নববর্ষে।
বসনের শিল্প
পথের পাঁচালী-তে প্রকৃতি ছায়া ফেলে সর্বজয়ার কুঞ্জলতা পাড়ের শাড়িতে। চারুলতা-র খড়কে ডুরে শাড়ি, লেস বসানো লম্বা হাতার ব্লাউজ় ধরে রাখে বিশেষ এক সময়কে, এমব্রয়ডারিতে ইংরেজি ‘বি’ অক্ষর বসানো ভূপতির রুমাল তো নিজেই চরিত্রোপম। ঘরে বাইরে ছবিতে বিমলার লাল পাড় কালো শাড়ি (ছবিতে) ঘটনা-দুর্ঘটনার মাঝে জেগে থাকে অন্য ব্যঞ্জনায়। সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের অঙ্গ হিসেবে ‘কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি’ (কেসিসি)-তে, ‘গ্যালারি রস’-এর সহযোগে হয়ে গেল আলোচনা, ‘সত্যজিতের নারীরা: বসনের কথকতা’— কথায় মমতাশঙ্কর, চিন্ময় গুহ, শৈবাল বসু প্রমুখ। আর্ট ইনস্টলেশন-আঙ্গিকে দেখা গেল তরুণ টেক্সটাইল ডিজাইনার শ্যামের করা সত্যজিৎ-চরিত্রের পোশাকের পুনর্নির্মাণ। ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা ছবিতে অনুভা গুপ্তের পরনের লংকোট, তুলসী চক্রবর্তীর উলেন ট্রাউজ়ার্স, জলসাঘর ছবিতে ছবি বিশ্বাসের নাগরা জুতো। এই সবই ‘সত্যজিৎ রায় সেন্টিনারি শো’ নামের মূল প্রদর্শনীটির অঙ্গ, যা চলবে আগামী ১৪ মার্চ পর্যন্ত।
স্মৃতি, সত্তা
নিউ টাউনের কোচপুকুরের ঢিবি থেকে পাওয়া গেল প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, মৃৎপাত্রের টুকরো। বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন হাজার-দু’হাজার বছর পুরনো তারা, রেডিয়োকার্বন ডেটিং বলে দেবে প্রকৃত প্রাচীনত্ব। এলাকার মানুষেরাও বলছেন হ্যাঁ শুনেছি তো, এক কালে এ দিক দিয়ে বয়ে যাওয়া বিদ্যাধরী নদী, ডুবে যাওয়া বাণিজ্যতরীর কথা বলতেন প্রাচীনেরা। মেট্রো রেল আর সুউচ্চ বহুতলের একুশ শতকীয় এই শহর মাটির গভীরে লুকিয়ে রেখেছে কবেকার জনজীবনের স্মৃতিকথা। আধুনিকতার গর্ভেই নিশ্চিন্তে নিদ্রা যাচ্ছে ইতিহাসের মায়াসন্ততিরা।