প্রতীকী ছবি।
ঘরের পাশের বাগানে বাসা বেঁধেছে কারা? বেড়াতে গিয়ে আশপাশের গাছে, ঝোপে-জঙ্গলে দেখা মিলতে পারে কোন পক্ষী দম্পতির? ফেরার পথে জিরিয়ে নিতে জলাশয়ে নেমেছে কত পরিযায়ী অতিথি?— এই সব প্রশ্নের উত্তর পেতে এ বার বাংলা নতুন বছরের শুরুতে পাখিসুমারিকে ‘পাখির চোখ’ করছেন এ রাজ্যের পক্ষীপ্রেমীরা। আর সেই পাখি গোনার কাজে শরিক হতে পারেন পাখিপ্রেমী থেকে শুরু করে উৎসাহী সাধারণ, সকলেই।
রাজ্যের পাখিপ্রেমী সংস্থা ‘বার্ড ওয়াচার্স সোসাইটি’র তরফে কাল, শনিবার ও পরশু রবিবার আয়োজন করা হয়েছে এই পাখিসুমারির। তাদের যোগ্য সঙ্গত করছে দেশব্যাপী পাখিসুমারি করা সংস্থা ‘বার্ড কাউন্ট ইন্ডিয়া’ এবং অনলাইন অ্যাপ ‘ই-বার্ড’। এ বার থেকে প্রতি বছর বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিনে পাখিসুমারির কথাও ভাবা হচ্ছে।
আয়োজকেরা জানাচ্ছেন, এ বার বৈশাখের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে অন্তত ১৫ মিনিট ধরে আশপাশের গাছগাছালি বা ঝোপ-জঙ্গলে থাকা চেনা দোয়েল-ফিঙে-ময়না বা বিদেশি নাম না-জানা পাখিই হোক— চোখে পড়লেই তার ‘চেকলিস্ট’ বানিয়ে জমা করতে হবে ‘ই-বার্ড’ অ্যাপে।
বাড়িতে বসে বা রাজ্যের যে কোনও জায়গায় ঘুরতে গিয়েও অনায়াসে পাখি গোনার কাজ করতে পারবেন উৎসাহীরা। পাখির ছবি বা তাদের ডাকের রেকর্ডও সেই সঙ্গে আপলোড করা যাবে ওই অ্যাপে, যার মাধ্যমে শনাক্তকরণ আরও সহজ হবে। যে কোনও উৎসাহী ব্যক্তি ‘ই-বার্ড’ অ্যাপে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে এই পাখিসুমারিতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
কিন্তু পাখি গুনতে হঠাৎ নববর্ষের আবহ কেন? ‘বার্ড ওয়াচার্স সোসাইটি’র অন্যতম সদস্য, চিকিৎসক কণাদ বৈদ্য বলছেন, ‘‘বাঙালির নববর্ষকে একটু অন্য আঙ্গিকে উদ্যাপন করতে চাইছি। উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকার পাখিদের প্রজনন কাল হল এই এপ্রিল। সেই সঙ্গে বিদেশি পরিযায়ী পাখিদের ফিরে যাওয়ার সময়ও। ফলে এখন নজর রাখলে রাজ্যের যত্রতত্র নতুন নতুন ধরনের পাখি দেখা যেতেই পারে।’’ প্রতি বছর একই সময়ে পাখিসুমারি করা হলে পাখির প্রজনন এবং তার পরিযায়ী স্বভাবের উপরে আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব কী ভাবে এবং কতটা পড়ছে, তা-ও জানা সম্ভব হবে বলে জানাচ্ছেন ওই পাখিপ্রেমী সংস্থার সচিব সুজন চট্টোপাধ্যায়।
তবে এ দেশে পাখিসুমারি নতুন কোনও কথা নয়। ১৯৯০ সাল থেকে শীতকালে জলের পাখিসুমারি হয়ে আসছে বিভিন্ন রাজ্যে। ফেব্রুয়ারিতে হয় ‘গ্রেট ব্যাকইয়ার্ড বার্ড কাউন্ট’। ‘‘তবে গরমকালে পাখি গোনার চল সে ভাবে নেই। অবশ্য অন্যান্য রাজ্যে বিহু-পোঙ্গল উপলক্ষে পাখিসুমারি করে থাকেন সেখানকার পাখিপ্রেমীরা। তাই পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে গরমে পক্ষীকুলের হাল-হকিকত জানতেই প্রথম এই উদ্যোগ। কোন পাখি থাকছে আর কে চলে যাচ্ছে, দক্ষিণ ভারত থেকে কারা রাজ্যে এখন ঢুকছে,সেই পরিবর্তনের ছবিটাই ধরা পড়বে এই সুমারিতে।’’— বলছেন সুজন।
ইতিমধ্যেই কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনার বহু পাখিপ্রেমী এই পাখিসুমারিতে অংশ নিতে উৎসাহ দেখিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকের সে সময়ে পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। তাই পাহাড়ের কোল থেকেই পাখি দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা। আর বাকিরা? তাঁরা চোখ রাখবেন ঘরের জানলা, বারান্দা বা ছাদ থেকেই।